নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন!

0

অর্থবাণিজ্য ডেস্ক : নিত্যপণ্যের বাজার দর কোনো অবস্থাতেই স্বাভাবিক হচ্ছে না। যখনই স্বাভাবিক ধারায় ফেরার সময় হয় তখনই অতিবৃষ্টিতে পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বাড়তে থাকে। শুক্রবার রাজধানীর বাজারগুলোতে বেশির ভাগ কাঁচাপণ্যের প্রতিকেজির দর অর্ধশত টাকার ওপরেই বিক্রি হতে দেখা গেছে। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতারা বিপাকে পড়েছে।

গত দেড় মাস ধরে এমনিভাবেই পণ্যের দর অস্বাভাবিক ভাবে বেড়ে চলছে। শুধু বৃষ্টির কারণেই নয় এবার গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রভাবও পণ্যের ওপর পড়তে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা।

খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানিয়েছেন, দেশে বৃষ্টি হলে নিত্য প্রয়োজনীয় কাঁচামালের দাম বাড়ে। কারণ এ সময় কাঁচামাল আমদানিতে অনেক পণ্য পানিতে নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া বৃষ্টির সময় সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে আমদানি খরচও বেশি পড়ে। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক ধারায় ফিরলে পণ্যের দর ক্রেতাদের হাতের নাগালের মধ্যে থাকবে বলে জানিয়েছেন তারা।

তারা আরো জানিয়েছেন, বর্তমান সরকার গ্যাস বিদ্যুতের দাম বাড়িয়েছে। এতে করে ছোট বড় ব্যবসায়ীদের ব্যবসার খরচ বাড়বে। ফলে পণ্যের বাজারেও এর প্রভাব পড়বে।

শুক্রবার রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, কাপ্তান বাজার, সেগুন বাগিচা, শান্তিনগর বাজারে গিয়ে দেখা গেছে, মানভেদে প্রতিকেজি গাজর ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় (গত শুক্রবার দর ছিল ৬০ থেকে ৬৫ টাকা), শশা ৫০ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, করলা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় (গত শুক্রবার ছিল ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়), ঝিঙা ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকায়, বেগুন ৫৫ টাকা থেকে ৬০ টাকায়, গোল বেগুন ৮০ টাকা থেকে ৯০ টাকা (গত শুক্রবার ছিল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা), পটল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকা (গত শুক্রবার ছিল ৫০ টাকা থেকে ৫৫ টাকা), কাকরল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, ভেন্ডি ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, ওস্তা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায় , পেঁপে ৩০ টাকা থেকে ৩২ টাকায়, দোন্দল ৬০ টাকা থেকে ৬৫ টাকায়, আলু ২৫ টাকা থেকে ২৬ টাকায়, টমেটো ৮০ টাকা থেকে ১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

বাজারে প্রতিকেজি দেশি পিঁয়াজ ৭০ টাকা থেকে ৭৫ টাকায়, বিদেশি পিঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। বাজারে রসুনের দর অপরিবর্তিত রয়েছে। প্রতিকেজি দেশি রসুন ৭০ টাকা থেকে ৮০ টাকায় এবং আমদানি করা রসুন ১১০ টাকা থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, বৃষ্টির সময় ব্যবসায়ীরা পণ্যের দর বাড়িয়ে দেয়। এতে করে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত শ্রেণির ক্রেতাদের বিপাকে পড়তে হয়। এ বিষয়ে সরকারের কোনো ধরনের নজর নেই।

শুক্রবার সকালে সেগুনবাগিচা কাঁচাবাজারে ক্রেতা আবু হোসেন সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, বাজারে ৫০ টাকার নিচে কোনো কাচামাল বিক্রি হয় না। এতে মনে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা একজোট হয়ে এভাবে দাম বাড়াচ্ছে। আসলে দেখার তো কেউ নেই, তাই তারা বিভিন্ন ইস্যু খুঁজে দাম বাড়ায়।

এদিকে যাত্রাবাড়ী বাজারের ব্যবসায়ী নাজিম উদ্দিন বলেন, আসলে ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে করলেই পণ্যের দর বাড়াতে পারে না। কোনো না কোনো কারণে পণ্যের দর বাড়ছে। বর্তমানে দেশের বৃষ্টির কারণে পণ্যের দর বাড়ছে বলে জানান তিনি। তবে আবহাওয়া স্বাভাবিক হলে পণ্যের দর আরো কমে আসবে।

কাপ্তান বাজারের কাঁচামাল ব্যবসায়ী হানিফ জানান, বাজারে এখন ‘ফিফটি টু নাইটিনাইন’ প্যাকেজ চলছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিভিন্ন স্থানে দেখবেন ওয়ান টু নাইটিনাইন শপিং সেন্টার। সেখানে এক টাকা থেকে নিরানব্বই টাকার জিনিস পাওয়া যায়। তেমনি কাঁচাবাজারে এখন ৫০ টাকা থেকে ৯৯ টাকায় মালামাল পাওয়া যাচ্ছে। অর্থাৎ ৫০ টাকার নিচে কেনো পণ্য কাঁচাবাজারে নাই।

পাইকারি ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, সরকারের নানামুখি তৎপরতায় অসাধু মজুদদাররা পিঁয়াজের দাম কমিয়েছে। তাই বাজারে পিঁয়াজের দর কমতে শুরু করেছে। তবে সরকার যদি সঠিক মনিটরিং না করে তাহলে ঈদের আগে পিঁয়াজের দাম আরো বাড়ার আশঙ্কা করছেন তারা।

শ্যামবাজারের পাইকারি পিঁয়াজ ব্যবসায়ী ইলিয়াস হাওলাদার জানান, গত ৫/৭ দিনের মধ্যে পিঁয়াজের দাম বাড়েনি। কমতে শুরু করেছে। তবে সরকারের মনিটরিং কমিটির কাউকে এ পর্যন্ত দেখিনি। যদি তারা মনিটরিং না করতে পারে তাহলে ঈদের আগে পিঁয়াজের দাম বাড়তে পারে বলে মনে করছেন তিনি।

ডিমের দাম প্রাইকারি বাজারে কিছুটা বেড়েছে। খুচরা বাজারে ডিমের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েনি বলে জানা গেছে।

খুচরা বাজারে প্রতি হালি ব্রয়লার মুরগির ডিম ৪০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি হালি হাঁসের ডিম ৪৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। তবে প্রাইকারি বাজারে ব্রয়লার মুরগির ডিম প্রতি একশ ৯০০ টাকায় ব্রিক্রি হচ্ছে। যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছে ৮২০ টাকা থেকে ৮৩০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।

এদিকে ব্রয়লার মুরগির মাংসের দাম অপরিবর্তিত রয়েছে। বাজারে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগির দাম (সাদা) ১৭০ টাকা থেকে ১৭৫ টাকা এবং ব্রয়লার মুরগি (লাল) ১৮৫ টাকা থেকে ১৯০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.