রোহিঙ্গা প্যানেল থেকে সেক্রেটারির পদত্যাগ

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে পরামর্শ দেওয়ার জন্য মিয়ানমারের গঠিত আন্তর্জাতিক প্যানেলের সেক্রেটারির দায়িত্ব থেকে পদত্যাগ করেছেন থাইল্যান্ডের সাবেক কূটনীতিক কবসাক চুটিকুল। এই পদত্যাগের ফলে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মিয়ানমার সরকারের এই উদ্যোগের বিশ্বাসযোগ্যতা বড় ধরনের ধাক্কা খেলো। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স এখবর জানিয়েছে।
থাইল্যান্ডের পার্লামেন্টের সাবেক সদস্য কবসাক পদত্যাগের বিষয় ব্যাখ্যা করে জানান, স্থানীয় ও বিদেশী বিশেষজ্ঞদের নিয়ে গঠিত এই প্যানেলটি এই সপ্তাহে নেপিদোতে তৃতীয় বৈঠক করেছে। জানুয়ারিতে প্যানেলটি গঠনের পর থেকে শিকলবন্দি করে রাখা হয়েছে এবং ছয় মাসে কোনও অর্জনই আসেনি।

সাবেক এই থাই কূটনীতিক জানান, ১০ জুলাই তিনি পদত্যাগ করেছেন। কিন্তু তার পদত্যাগের বিষয়টি প্রকাশ করা হয়নি।

মিয়ানমার সরকার এই প্যানেলটি গঠন করেছিল এর আগের একটি কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে পরামর্শ দেওয়ার জন্য। আগের প্যানেলটির দায়িত্বে ছিলেন জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনান। কমিশনটি আনান কমিশন হিসেবে পরিচিতি পায়। কয়েক বছর ধরে রাখাইনের পশ্চিমাঞ্চলের উত্তেজনা নিরসনের উপায় বের করতে এই আনান কমিশন গঠন করা হয়েছিল।

কবসাক জানান, প্যানেলটিকে আন্তর্জাতিক তহবিল সংগ্রহ করতে দেওয়া হয়নি। এমনকি স্থায়ী কার্যালয় স্থাপন করতে দেওয়া হয়নি। কমিটিকে বলা হয়েছে অনলাইনে বৈঠক করার জন্য। সেনাবাহিনীর প্রতিনিধিরা প্যানেলের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠকে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন।

এই বিষয়ে রয়টার্সের পক্ষ থেকে যোগাযোগ করা হলে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

প্যানেলটির কর্মকাণ্ড সম্পর্কে কবসাক বলেন, বলেন দেখি তারা কী করছে? নেপিদোতে তারা সুস্বাদু নৈশভোজ করছেন এবং ঘুরে দেখছেন। আশঙ্কার কথা হলো এখন ইস্যুটি থেকে মনোযোগ সরানো হচ্ছে। এমন একটা প্রচারণা চালানো হচ্ছে যেন, অনেক কাজ হচ্ছে।

প্যানেলের স্থানীয় সদস্য ও মিয়ানমারের জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান উইন ম্রা অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি দাবি করছেন, প্যানেল কাজ করছে। তিনি বলেন, সরকার আমাদের পরামর্শ বাস্তবায়ন করছে এবং অগ্রগতি দৃশ্যমান হবে।

কবসাকের সমালোচনা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে উইন ম্রা বলেন, কোনও অগ্রগতি নেই তা বলা যাবে না।

শুক্রবার মিয়ানমার সরকারের মুখপাত্র জাও তায়ের সঙ্গে মন্তব্য জানতে যোগাযোগ করতে পারেনি রয়টার্স। তার মোবাইল বন্ধ ছিল।

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে থাকে মৌসুমী বাতাসে। মানবাধিকার সংগঠনের স্যাটেলাইট ইমেজ, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন আর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে শূন্যে ছুড়তে থাকে সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। এমন বাস্তবতায় নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা। জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে রোহিঙ্গারা জাতিগত নিধনযজ্ঞের শিকার বলে অভিযোগ করা হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রও একই অভিযোগ তুলেছে। বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন অভিযোগ করেছে, রোহিঙ্গাদের নিপীড়নে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করেছে। তবে মিয়ানমার সরকার ও সেনাবাহিনী এসব অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.