সড়কে যানবাহন সংকট প্রতিদিন মানুষের দুর্ভোগ

0

গোলাম সরওয়ার :    চট্টগ্রাম মহানগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গনপরিবহন সংকট চলছে। রাস্তায় বাস-মিনিবাস ও সিএনজি চালিত অটোরিকশা আশঙ্কাজনক ভাবে কমে যাওয়ায় প্রতিদিন দুর্ভোগে পড়ছে যাত্রীরা। জানা গেছে, নগরীতে চলাচলরত অন্তত ৮০ ভাগ গনপরিবহনের ফিটনেস ও কাগজপত্র হালনাগাদ নেই। ফিটনেসবিহীন ও ভুয়া লাইসেন্সের বিরুদ্ধে সম্প্রতি প্রশাসন অভিযান চালালে এতে করে পরিবহন মালিকরা ভয়ে এসব গাড়ি রাস্তায় নামাচ্ছে না। এ ছাড়া বিআরটিএ সিলিং এ নির্ধারিত সংখ্যার অর্ধেকেরও কম বর্তমানে চলছে। ফলে সংকট তৈরী হচ্ছে গনপরিবহনের।

এ ছাড়া পরিবহন মালিকদের অনৈক্য, আন্দোলন সহ আরো কয়েকটি ইস্যুতে বর্তমানে নগরীর গনপরিবহন শৃঙ্খলা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অর্ধকোটি জনসংখ্যার এ নগরীতে এমনিতেই রয়েছে পরিবহন সংকট। এসবের ফলে আরও দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারন মানুষ। বিআরটিএ (বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি) এর ২০১৪ সালের তথ্য অনুযায়ী নগরীর বিভিন্ন রুটে ১৮শ বাস, মিনিবাস ও হিউম্যান হলার চলাচলের সিলিং নির্ধারিত আছে। এ ছাড়া ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশা নিবন্ধন দেয়া হয়েছে বিআরটিএ থেকে। অন্যদিকে সিটি কর্পোরেশন নগরীতে ৭০ হাজার ১টি প্যাডেল চালিত রিকশার লাইসেন্স দিয়েছে।

পরিবহন মালিকপক্ষ ও সংশ্লিষ্ট সুত্রগুলো থেকে প্রাপ্ত তথ্য মতে, বিআরটিএ থেকে রুট পারমিট নিয়ে ১৮শ বাস, মিনিবাস ও হিউম্যান হলার নগরীর রাস্তায় চলাচলের কথা। কিন্তু সে পরিমান গাড়ি রাস্তায় চলছে না। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন নেয়া বেশিরভাগ গনপরিবহনই ১৯৪০ ও ১৯৫০ সালের মডেলের যানবাহন। ফলে অনেক আগেই এসব যানবাহনের ফিটনেসের মেয়াদ শেষ হয়ে গেছে। গতবছর বিআরটিএ এক জরিপ চালিয়ে নগরীতে এসব বাস মিনিবাসের সংখ্যা পায় ৮শ টি।

পরে ফাঁকা সিলিংগুলোতে নতুন করে বাস পারমিট দেন বিআরটিএ।এরপরও নগরীতে সিলিং অনুযায়ী বাস চলাচল করছে না। মাত্র ৭ থেকে ৮শ বাস মিনিবাস বর্তমানে চলছে বলে জানা গেছে। মংশ্লিষ্টদের মতে, আদালতের নির্দেশনার পর সম্প্রতি পুলিশের অভিযানে তৎপরতা বেড়ে যাওয়ায় ফিটনেসবিহীন ও ট্যাক্স টোকেনের কাগজপত্র হালনাগাদ নেই এমন বাস মিনিবাসগুলো রাস্তায় নামছে না। এসব বাস বিআরটিএ থেকে নিবন্ধন পেলেও ট্যাক্স টোকেন হালনাগাদ নেই। এতে করে জেলা প্রশাসন ও পুলিশের অভিযানে এসব যানবাহন রাস্তায় দেখা যাচ্ছে না। এমন অবস্থা র মধ্যে নির্ধারিত রুটে চলাচলরত অন্যান্য বাসগুলো গার্মেন্টস শ্রমিকদের ভাড়া টানায় গনপরিবহনের সংকটকে আরও জটিল করে তুলছে। পুলিশের ট্রাফিক বিভাগের তথ্য অনুযায়ী, গত ১ আগষ্ট থেকে ১০ আগষ্ট পর্যন্ত তাদের অভিযানে ২০টি বাস আটক করা হয়েছে।

এছাড়া বিভিন্ন বাস চালক মালিকদের বিরুদ্ধে ২৩৫টি মামলা এবং ১ লাখ ৪২ হাজার ৫৫০টাকা জরিমানা করা হয়েছে। এখনো ফিটনেসবিহীন ও কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকার কারনে বিভিন্ন বাসের বিরুদ্ধে মামলা ও জরিমানা করা হচ্ছে। এদিকে নিবন্ধিত ১৩ হাজার সিএনজি অটোরিকশা এবং আদালতের স্থগিতাদেশ নিয়ে অনিবন্ধিত আরও ৬ থেকে ৭ হাজার সিএনজি রাস্তায় চলাচলের কথা থাকলেও এতগুলো বর্তমানে নগরীতে চলাচল করছে না। যাত্রীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার পাশাপাশি রুট পারমিট হিসেবে মেট্রো উল্লেখ থাকলেও মেট্রোর বাইরে বিভিন্ন জেলা উপজেলায় এসব সিএনজি অটোরিকশা ভাড়া টানছে। এ ছাড়া ফিটনেস ও কাগজপত্র হালনাগাদ না থাকায় এসব সিএনজি অটোরিকশা রাস্তায় নামছে না। অন্যদিকে প্যাডেলচালিত রিকশার ৭০ হাজার ১টি লাইসেন্স থাকলেও এসব পরিবহনের মাত্র ৬০ ভাগ রাস্তায় চলছে বলে জানা গেছে।

অভিযোগ আছে, লাইসেন্স প্রদান করলেও করপোরেশনের পক্ষ থেকে এসব পরিবহন ঠিকমত রাস্তায় চলছে কি না সেটি নিয়ে দীর্ঘ সময় ধরে কোন জরিপ নেই। ফলে লাইসেন্স ছাড়াই বহু প্যাডেল চালিত রিকশা চলাচল করছে বলে জানা গেছে। গনপরিবহনে শৃঙ্খলা ভাঙ্গছে বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম জেলা সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ বলেন,”পরিবহনে যে বিশৃঙ্খলা বর্তমানে তৈরী হয়েছে তা অচিরেই কেটে যাবে। তিনি বলেন,’দুই থেকে আড়াই বছর আগে থেকে নগরীর অধিকাংশ গাড়ির ট্যাক্স টোকেনের কাগজপত্র হালনাগাদ করা হচ্ছে না। এ ছাড়া বিভিন্ন সময় গাড়িগুলোকে মামলা প্রদান, টো (জব্দ) করা এবং জরিমানা করায় অনেক গাড়ি গ্যারেজ থেকে বের হতে পারছে না। তিনি বলেন,’ বিএন-পি জামায়াতের আন্দোলনে আমাদের বিভিন্ন যানবাহন যে ক্ষয়ক্ষতির শিকার হয়েছে সেটা এখনো পুরন করতে পারছি না।

আমরা লোকসানে আছি। আমরা প্রশাসনকে জানিয়েছি আমাদের ট্যাক্স টোকেনের জরিমানা মওকুফ করে কাগজপত্র হালনাগাদ করে দেয়ার জন্য। কিন্তু তাদের পক্ষ থেকে এখনো কোন সাড়া মিলছে না’। জানা গেছে, সাধারনত মালিকের উদাসীনতা ও আর্থিক সংকটের কারনে কাগজপত্র হালনাগাদ করাহয় না। আবার বিআরটিএর নিবন্ধন আছে কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে এসব যানবাহন ট্যাক্স টোকেনের হালনাগাদ নেই। সে কারনেও অনেক যানবাহন রাস্তায় নামানো হচ্ছে না। বর্তমানে ৮ থেকে সাড়ে ৮শ বাস মিনিবাস রাস্তায় চলাচল করছে। এর পর বিভিন্ন সময় পরিবহন মালিক ও শ্রমিক গ্রুপের দ্বন্দ্ব, পরস্পরবিরোধী কর্মকান্ড ও বক্তব্য নগরীর গনপরিবহন ব্যবস্থিা বিঘ্নিতে করতে প্রভাবিত করছে। পুলিশ কমিশনার বলেছেন,’লক্করঝক্কর গাড়ি, পেছনে লাইট নেই, সামনে লাইট নেই বিআরটিএর সিদ্ধান্ত অনুযায়ী এসব অবৈধ যানবাহন অবশ্যই রাস্তা থেকে উঠিয়ে নিতে হবে’।

এদিকে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহন না করে, মহাসড়কে সিএনজি চলাচল নিষিদ্ধ ঘোষনার পরই নগরী ও জেলার বিভিন্ন সড়কে পুলিশ নেমেছে সিএনজি অটোরিকশা আটকাতে। অপরদিকে বাস মিনিবাসও আটকানো হচ্ছে টেক্স টোকেন হালনাগাদ না থাকার কারনে। এসব কারনে প্রতিদিন নগরী ও জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রধান সড়কে হাজার হাজার মানুষ যানবাহনের অভাবে ঠিকমত অফিসে যেতে পারছেনা।

আবার অফিস থেকে যথাসময়ে ফিরতেও পারছেনা। এসব কারনে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেছে সাধারন যাত্রীরা। এ অবস্থা চলতে থাকলে, যাত্রী সমাজ যে কোন মুহুর্তে রাস্তায় নামতে পারে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.