চমেকে ১৮ কোটি টাকার মেশিন উদ্বোধন করলেন মেয়র

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম :: চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসা সেবা আধুনিকায়নের লক্ষ্যে ১৮ কোটি টাকার ৩ টি মেশিন উদ্বোধন করা হয়েছে।

আজ সোমবার (৬ আগস্ট) দুপুরে  চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন এসব মেশিন উদ্বোধন করেন। মেশিনগুলোর মধ্যে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালে ১২ কোটি টাকা মূল্যের কোবাল্ট মেশিন, ২ কোটি টাকার ডিজিটাল মেমোগ্রাম ও ৪ কোটি টাকার ব্রাকিথেরাপি মেশিনের বাংকার রয়েছে।

এ ছাড়াও ১২ নন্বর ওয়ার্ডে  চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে শুধুমাত্র মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য হৃদরোগ বিভাগ আনুষ্ঠানিকভাবে উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র।এই ব্লকটির নাম করন করা হয়েছে বিশিষ্ঠ মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক ডা. ফজলে রাব্বি।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ব্রাকি থেরাপী মেশিনের বাংকার নির্মাণ ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন, ডিজিটাল মেমোগ্রাম মেশিন ও ১২ নং ওয়ার্ডে বীরমুক্তিযোদ্ধা কিউবিকল উদ্বোধন উপলক্ষে আয়োজিত চিকিৎসক,কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মতবিনিময় সভায় সভাপতিত্ব করেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. জালাল উদ্দিন। চমেক হাসপাতালের দ্বিতীয় তলার সম্মেলন কক্ষে অনুিষ্ঠত সভায় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ অশোক কুমার দত্ত, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়শনের (বিএমএ) চট্টগ্রাম শাখার সভাপতি মুজিবুল হক খান, সাধারণ সম্পাদক ফয়সল ইকবাল, চট্টগ্রাম জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার সাহাব উদ্দিন, নগর মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. মোজাফফর আহমদ, হৃদ রোগ বিভাগের প্রধান ডা.অধ্যাপক প্রবীর কুমার দাশ, রেডিওলোজি বিভাগের প্রধান ডা. সুভাষ মজুমদার, রেডিও থেরাপী বিভাগের প্রধান ডা. সাজ্জাদ মো. ইউসুফ প্রমূখ বক্তব্য রাখেন। অনুষ্ঠান সঞ্চালনায় ছিলেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ এর সহ পরিচালিক ডা. ফজলে রাব্বী। এসময় চমেক হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের চিকিৎসক ও কর্মকর্তারাগণ উপস্থিত ছিলেন।

অনুষ্ঠানে সিটি মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন বলেন, চিকিৎসকদের অনেক সীমাবদ্ধতা আছে। চমেক হাসপাতালে পর্যাপ্ত চিকিৎসক ও  নার্স নেই। এগুলো হলো বাস্তবতা। এরপরও চিকিৎসকেরা ভালোভাবেই চিকিৎসাসেবা দিয়ে যাচ্ছেন। মাঝেমধ্যে চিকিৎসকদের কিছু কিছু ভুলত্রুটি হতেও পারে। এ জন্য চিকিৎসকদের ধৈর্যের পরীক্ষা দিতে হবে। রোগীরা গরম হলেও আপনাদের শান্ত থাকতে হবে। তাই চিকিৎসক, নার্স ও হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীদেরকে সেবার মনমানসিকতা নিয়ে স্ব স্ব দায়িত্ব পালনের আহবান জানান মেয়র। 

সিটি মেয়র ‘ইন্টারন্যাশনাল এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যান্সার (আইএআরসি) ও বাংলাদেশ ক্যান্সার সোসাইটির তথ্যের কথা উল্লেখ করে বলেন, বর্তমানে বাংলাদেশে ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা প্রায় ১২ লাখ। এর মধ্যে শুধু চট্টগ্রামে ক্যান্সার আক্রান্তের সংখ্যা প্রায় ২ লাখ। রোগীদের মধ্যে ফুসফুস, মুখগহ্বর, রক্তনালি, জরায়ু ও স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যাই বেশি। মহিলা রোগীদের মধ্যে শতকরা ৩০ ভাগ স্তন এবং জরায়ু-মুখ ক্যান্সারে আক্রান্ত। নারীদের স্তন ডিউমার ক্যান্সারসহ বিভিন্ন রোগ নির্ণয়ে ব্যবহৃত হবে এ  ম্যামোগ্রাফি মেশিন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল প্রতিষ্ঠার পর থেকেই স্তন পরীক্ষার  অত্যাধুনিক যন্ত্র এটাই। বর্তমান সরকারের আন্তরিকতা ও স্বদিচ্ছার প্রতিফলন হিসেবে এই রোগনির্ণয় যন্ত্র চমেকে সংযুক্ত হলো। তজ্জন্য সিটি মেয়র বাংলাদেশ সরকারের মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, স্বাস্থ্য মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানান। এরিপ্রেক্ষিতে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সংযোজিত অত্যাধুনিক এই মেশিনগুলোর মাধ্যমে   চট্টগ্রাম অঞ্চলের ক্যান্সার আক্রান্ত প্রায় ২ লাখ রোগীকে বাঁচানোর পথ দেখাবে বলে  তিনি উল্লেখ করেন।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল এর পরিচালক জালাল উদ্দিন বলেন, চমেক হাসপাতালে আরও সাড়ে ১৬ কোটি টাকার মেশিন শিগগরই যুক্ত হবে। যার মধ্যে সিটি স্ক্যান আছে, আইসিইউর বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আছে। ফলে খুব শিগগরই চমেকে স্বাস্থ্যসেবায় আমূল পরিবর্তন হবে।

অনুষ্ঠানে  বক্তারা বলেন, দেশে প্রতিবছর প্রায় ৩ লাখ মানুষ নানা ধরনের ক্যান্সারে আক্রান্ত হচ্ছে কিন্তু অপর্যাপ্ত চিকিৎসা ব্যবস্থা আর অসচেতনতার কারণে আক্রান্ত রোগীদের মধ্যে বছরে প্রায় ২ লাখ রোগী মারা যাচ্ছে। বাংলাদেশে ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র রয়েছে মাত্র ১৮টি। আবার এগুলোর মধ্যে সমন্বিত ক্যান্সার চিকিৎসা কেন্দ্র  মাত্র একটি। অধিকাংশ কেন্দ্রে  নেই রেডিওথেরাপি মেশিন। ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্যে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক রয়েছেন মাত্র ১৫০ জন। চিকিৎসকবৃন্দ ক্যান্সার রোগ নিরাময়ের জন্য চিকিৎসক স্বল্পতা পূরণের বিষয়টি উল্লেখ করেন।   

অনুষ্ঠানে বক্তারা আরো বলেন, বাংলাদেশে একমাত্র রাজশাহী এবং চট্টগ্রামে ক্যান্সার রোগের এই মেশিন স্থাপন করা হয়েছে। ঢাকার মহাখালীতে ক্যান্সার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল একমাত্র বিশেষায়িত সরকারি ক্যান্সার হাসপাতাল হিসেবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছে। তবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ মোট ৮টি প্রতিষ্ঠানে এখন ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা হলেও সেখানে প্রয়োজনীয় রেডিওথেরাপির আধুনিক যন্ত্রপাতি নেই।