চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট কমাতে কর্তৃপক্ষের উদ্যোগ

0

অর্থ ও বাণিজ্য, সিটি নিউজ :: চট্টগ্রাম বন্দরে কনটেইনার জট কমাতে উদ্যোগ নিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। আরও ৯ আইটেমের পণ্য বন্দরের আশপাশে স্থাপিত প্রাইভেট আইসিডিগুলোয় খালাসের প্রস্তাব দিয়েছে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ। এতে কনটেইনার জট বহুলাংশে কমে আসবে বলে মনে করছে সংস্থাটি। গত ১৪ আগস্ট চিঠি দিয়ে বন্দর কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডকে (এনবিআর) অনুরোধ জানিয়েছে।

চট্টগ্রাম বন্দরের আশপাশে ১৯টি প্রাইভেট আইসিডি আছে। এগুলোয় ৩৭টি আইটেমের আমদানি পণ্য খালাস করা যায়। এর মধ্যে চাল, গম, সরিষা বীজ, ছোলা, ডাল, কাঁচা তুলা, রি-রোলিং মিলের স্ক্র্যাপ, সয়াবিন মিল, রেপ সিড, ভুট্টা, সয়াবিন, মার্বেল চিপস, বল ক্লে, পেঁয়াজ, আদা, হলুদ, সার, সোডা অ্যাশ, পিভিসি রেজিন, খেজুর, চিনি, মার্বেল পাথর, সোডিয়াম সালফেট, কাঠের পাল্প অন্যতম।

আর রপ্তানিকারকরা বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাতের ব্যবসায়ীরা তাদের স্টাফিং (কাভার্ড ভ্যান থেকে রপ্তানি পণ্য কনটেইনারে ওঠানো) করতে পারেন। এ ৩৭টি পণ্যের সঙ্গে আরও ৯টি আইটেমের পণ্য খালাসে এনবিআরকে প্রস্তাব দিয়েছে বন্দর কর্তৃপক্ষ। এগুলো হচ্ছে পলি প্রপিলিন, পেপার, স্কিমড মিল্ক পাউডার, ওয়ে মিল্ক পাউডার, আসবাবপত্র, আয়রন/স্টিল গুডস, সব ধরনের লবণ, টেলো ও টাইলস।

এনবিআরকে দেয়া চিঠিতে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ উল্লেখ করেছে, আপাতত প্রাইভেট আইসিডি থেকে এসব পণ্য ডেলিভারি দেয়ার অনুমতি দেয়া হলে বন্দরের অভ্যন্তরে কনটেইনার জটের পরিমাণ অনেকাংশে হ্রাস পাবে এবং ইয়ার্ড স্পেসের পরিমাণ বহুলাংশে বৃদ্ধি পাবে।

চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, বর্তমানে বন্দরের ধারণক্ষমতার প্রায় পুরোপুরি ব্যবহার করা হচ্ছে। অনেক সময় কনটেইনারের সংখ্যা ধারণক্ষমতার চেয়ে বেশি হওয়ায় অপারেশনাল কাজে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি করে। কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের পরিমাণ যেভাবে দ্রুত গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে, তার সঙ্গে সমন্বয় করে সুষ্ঠুভাবে বন্দরের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কনটেইনার প্রাইভেট ডিপোতে বা আমদানিকারকের চত্বরে নিয়ে ডেলিভারি দেয়ার বিকল্প নেই।

তাছাড়া বন্দর কর্তৃপক্ষ কনটেইনার টার্মিনাল ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম (সিটিএমএস) চালু করার পরিপ্রেক্ষিতে আমদানি-রপ্তানি কনটেইনারের প্রি-প্ল্যানিংয়ের মাধ্যমে সব কাজ সম্পন্ন করতে হচ্ছে। এ কারণে বন্দরের অভ্যন্তরে প্রচুর ইয়ার্ড স্পেস প্রয়োজন। যত বেশি ইয়ার্ড স্পেস ব্যবহারের জন্য রাখা যাবে, তত বেশি জাহাজের উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে ও বহির্নোঙরে কনটেইনার জাহাজের অপেক্ষমাণ থাকার সময় ১ দিনে নামিয়ে আনা সম্ভব।

এ ব্যাপারে ইনল্যান্ড কনটেইনার ডিপো অ্যাসোসিয়েশনের (বিকডা) সচিব রুহুল আমিন সিকদার বলেন, কনটেইনার জট কমাতে দেড় বছর আগে অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে বন্দর কর্তৃপক্ষকে এ প্রস্তাব দেয়া হয়েছিল। এখন প্রস্তাবের গুরুত্ব অনুধাবন করতে পেরে বন্দর কর্তৃপক্ষ এনবিআরে সুপারিশ করেছে। এখনও যদি এনবিআর সুপারিশ বাস্তবায়ন করে, তাহলে বন্দরে কনটেইনার জট কমাতে তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে।

যদিও প্রাইভেট আইসিডিগুলোর বিরুদ্ধে খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে দ্বিগুণেরও বেশি চার্জ নেয়ার অভিযোগ আছে। সম্প্রতি আইসিডিগুলোর চার্জ বৃদ্ধির পরিসংখ্যান তুলে ধরে ইস্পাত খাতের একটি শিল্প প্রতিষ্ঠান এফবিসিসিআই’র সহায়তা চেয়েছে। যেখানে বলা হয়েছে, মনগড়া যুক্তি দেখিয়ে আইসিডিগুলো ১-৪ হাজার টাকা পর্যন্ত হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়িয়েছে। ক্রমান্বয়ে তা আকাশচুম্বী ও অসহনীয় পর্যায়ে যাচ্ছে।

এছাক ব্রাদার্স ২০১৭ সালে ১ হাজার ১৫০ টাকা হ্যান্ডলিং চার্জ নিত, এখন নিচ্ছে আড়াই হাজার টাকা। একইভাবে চিটাগাং কনটেইনার ট্রান্সপোর্ট কোং লি. দেড় হাজার থেকে বাড়িয়ে আড়াই হাজার টাকা, সামিট অ্যালায়েন্স পোর্ট লি. ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৮৭৫ টাকা, ভার্টেক্স অব ডক ডিপো লি. ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৮০০ টাকা, পোর্টলিংক লজিস্টিকস লি. ১ হাজার ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৮৭৫ টাকা এবং কেডিএস লজিস্টিকস লি. ২ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ২ হাজার ৮৭৫ টাকা আদায় করছে।

এ ব্যাপারে বিকডার সভাপতি নূরুল কাইয়ুম খান বলেন, অফ-ডকে কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়ানো হয়নি। ৩ বছর আগে চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ যে চার্জ নির্ধারণ করে দিয়েছে, সে অনুযায়ী চার্জ আদায় করা হচ্ছে। উল্টো ব্যাংক ঋণসহ নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে অফডকগুলো বন্ধের উপক্রম হয়েছে।

তিনি দাবি করেন, কনটেইনার হ্যান্ডলিং চার্জ বাড়ানোর কোনো অভিযোগ পাননি। এ নিয়ে কেউ আলোচনাও করতে আসেনি।

অ্যাসোসিয়েশনের সচিব রুহুল আমিন সিকদারও খালি কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে চার্জ বৃদ্ধির অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ঢালাওভাবে কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ের চার্জ বৃদ্ধির অভিযোগ ভিত্তিহীন। ২০১৪ সালে যে হারে চার্জ আদায় হতো, এখনও সে হারেই আদায় হচ্ছে। তবে খালি কনটেইনারের চার্জ বেশি নেয়ার যৌক্তিকতাও আছে।

ব্যবসায়ীরা পণ্য খালাসের পর খালি কনটেইনার আইসিডিতে পাঠিয়ে দেন। দীর্ঘদিন সেগুলো বিদেশে ফেরত না পাঠানোয় আইসিডিতে স্থান সংকুলান হচ্ছে না। মঙ্গলবার চট্টগ্রাম বন্দরে যেখানে ৫ হাজার টিইউএস খালি কনটেইনার ছিল, সেখানে আইসিডিতে ৪৫ হাজার টিইউএস কনটেইনার ছিল। বন্দরে খালি কনটেইনার রাখলে ৪৮০ টাকা চার্জ দিতে হয়, সেখানে আইসিডিকে দিচ্ছে ৮০-৯০ টাকা।

তিনি বলেন, রপ্তানিমুখী পোশাক শিল্পের কনটেইনার স্টাফিং করতে ৩৬শ’-৩৮শ’ টাকা চার্জ নেয়া হয়। এ টাকার ভেতরে আছে কাভার্ডভ্যান থেকে পণ্য নামানো, পণ্য কনটেইনারে ভর্তি, পণ্যবোঝাই কনটেইনার বন্দরে পাঠানো। অথচ শ্রীলংবায় এ কাজের জন্য ১৪ হাজার টাকা, পাকিস্তানে ১১ হাজার টাকা নেয়া হয়। তারপরও ব্যবসায়ীরা বলছেন, বেশি টাকা আদায় করা হচ্ছে।

দুঃখ লাগে, আইসিডিগুলো রপ্তানির গতি বৃদ্ধি করতে যে ভূমিকা রাখছে, তা কেউ বোঝে না। আইসিডিগুলোয় অবস্থা খুবই শোচনীয়। এ কারণে ১০ বছরে নতুন বিনিয়োগ আসেনি। এ অবস্থা চলতে থাকলে ৫ বছরের মধ্যে এটি রুগ্ণ শিল্পে পরিণত হবে।

এ ব্যাপারে বিজিএমইএ সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান বলেন, তৈরি পোশাকবোঝাই কাভার্ডভ্যান স্টার্ফিংয়ের পর ওজন দেয়ার নামে অফডকগুলো অতিরিক্ত ১ হাজার টাকা চার্জ আদায় করছে। এ নিয়ে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়সহ সরকারের উচ্চমহলের সঙ্গে আলোচনা করা হবে। তাছাড়া কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়েও চার্জ বাড়িয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.