কাজে আসছে না রেটিং মেশিন

0

সিটিনিউজবিডি : মাগুরায় পাটের আঁশ ছাড়ানোর জন্য বিনামূল্যে কৃষকদের দেওয়া ১ হাজার ৩০৮টি রিবন রেটিং মেশিন কাজে আসছে না।এ কারণে সরকারের দেওয়া কোটি টাকার যন্ত্র কৃষি বিভাগের কার্যালয় ও কৃষকের বাড়িতে পড়ে নষ্ট হচ্ছে। অতিরিক্ত শ্রমিক এবং খরচ বেশি হওয়ায় কৃষকেরা এ পদ্ধতি ব্যবহার করতে আগ্রহী নন বলে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।

কৃষি সম্প্রসারণ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১০ সালে সরকার মাগুরা জেলার চার উপজেলার কৃষকদের জন্য ৭৩০টি এবং ২০১১ সালে ৫৭৮টি পাটের আঁশ ছাড়ানোর যন্ত্র (রিবনার মেশিন) সরবরাহ করে। পাটকাঠি থেকে এ যন্ত্র দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে স্বল্প পানিতে তা পচানোর জন্য এই পদ্ধতি উদ্ভাবন করা হয়।

জেলার ৩৩ হাজার কৃষককে ২০০ টাকা করে দুই বছরে মোট ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা ভর্তুকি দেওয়া হয়। এ সময় সরকারি ব্যয়ে কৃষকদের প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়। কিন্তু এ পদ্ধতিতে পাটের আঁশ পচাতে ১০ থেকে ১৫ জন অতিরিক্ত শ্রমিক ও ৩ থেকে ৪ হাজার টাকা বেশি খরচ হয়। এ কারণে কৃষকেরা এই পদ্ধতি ব্যবহার করতে আগ্রহ হারিয়েছেন।

পাট চাষিরা জানান, ঢাকঢোল পিটিয়ে কৃষি বিভাগ পাটের আঁশ ছাড়ানোর যন্ত্র (রিবনার মেশিন) সরবরাহ করে। পানি সংকট হলে খুব সহজে কাঁচা পাট থেকে আঁশ ছাড়িয়ে স্বল্প সময়ে তা জাগ দেওয়া যাবে বলে কর্মকর্তারা জানান।

একটি লোহার পাতের ওপরে প্রতিটি এক জোড়া করে মোট তিন জোড়া লম্বাকৃতির হুইল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এই রিবন রেটিং মেশিন। প্রতি জোড়া হুইলের মধ্যে কাঁচা পাটের গোড়ার অংশ ঢুকিয়ে পাটের আঁশ ও পাটকাঠি আলাদা করা হয়। এরপর বাড়িতেই প্রতি বিঘা জমির পাটের জন্য ৬ মিটার দীর্ঘ, ৩ মিটার প্রস্থ এবং ১ মিটার গভীরতাসম্পন্ন জলাশয় তৈরি করে পাট জাগ দিতে হয়।

পাটের মান ও রং উজ্জ্বলতা ঠিক রাখতে এই পদ্ধতিতে জাগ দেওয়া পাটের গর্তে সীমিত পরিমাণ ইউরিয়া সার ব্যবহার করার কথা বলা হয়। এভাবে পাট পঁচাতে সময় লাগে সাত থেকে সর্বোচ্চ ১০ দিন। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে যেখানে সময় লাগে ২৫ থেকে ৩০ দিন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মাগুরা জেলা কার্যালয়েরর উপ-পরিচালক পার্থ প্রতীম সাহা জানান, কৃষকেরা এ পদ্ধতিতে পাট পচানোর বিষয়টিকে ঝামেলা মনে করছেন। এ কারণে তারা বিভিন্ন ইউনিয়নের দায়িত্ব পাওয়া উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের কাছ থেকে পাটের আঁশ ছাড়ানোর যন্ত্রও নেননি।

কয়েককজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা জানান, ভর্তুকির টাকা দেওয়ার পর দুই বছর কৃষকদের অনেকে যান্ত্রিক পদ্ধতিতে পাট পচান। কিন্তু এখন আর তাদের সামনে এ পদ্ধতিতে পাটের আঁশ পচানোর কথা বলাই যাচ্ছে না। এ এলাকায় বর্ষায় প্রচুর পানি জমে থাকে। কৃষক ক্ষেতেই পাট জাগ দিতে পারেন। তাই গর্ত করে পানিতে পাট পচানোর পদ্ধতি কৃষক কখনো প্রয়োজন মনে করেনি।

সরেজমিনে বিভিন্ন গ্রাম ঘুরে কৃষকদের সনাতন পদ্ধতিতে প্রাকৃতিক পানিতে ডোবা, নালা, পুকুর ও খাল-বিলে পাটের আঁশ পচাতে দেখা গেছে। কৃষকেরা জানান, রিবন রেটিং পদ্ধতিতে আঁশ ছাড়ালে পাটকাঠিগুলো কাজে লাগানো যায় না। কিন্তু সনাতন পদ্ধতিতে ছাড়ালে পাটকাঠি ভালো দাম পাওয়া যায় ও নানা কাজে ব্যবহার করা যায়।

হাজরাপুর গ্রামের কৃষক জাফর আলী বলেন, ‘ওই যন্ত্র দিয়ে আঁশ ছাড়িয়ে পাট পচানো অত্যন্ত ঝামেলার কাজ। পাটের বীজ বপণ থেকে শুরু করে আঁশ ছাড়িয়ে ঘরে তোলা পর্যন্ত যেখানে সনাতন পদ্ধতিতে ১৫ থেকে ২০ জন শ্রমিক লাগে, সেখানে রিবন রেটিং পদ্ধতিতে ২৫ থেকে ৩০ জন লাগে। রিবন রেটিং পদ্ধতিতে এক বিঘায় ১৫ হাজার টাকা খরচ হয়, আর সনাতন পদ্ধতিতে খরচ হয় মাত্র ১০ হাজার টাকা।

উল্লেখ্য, জেলায় এবার ৩৩ হাজার ৫৯০ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩২ হাজার ৭৭২ হেক্টর। চার উপজেলার মধ্যে সদরে ৯ হাজার ৭০০ হেক্টর , শ্রীপুরে ৯ হাজার ৯০ হেক্টর , মহম্মদপুরে ১০ হাজার ৮০৯ হেক্টর ও শালিখায় ৪ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে।

কৃষকেরা পাট কেটে জাগ দিচ্ছেন। আশঁ ছাড়িয়ে পানিতে ধুয়ে শুকিয়ে বাজারে নিচ্ছেন। দামও পাচ্ছেন ভালো। পাট চাষের প্রধান সমস্যা আঁশ পচানোর পানি। অন্য বছর কৃষক পাট নিয়ে পানির সংকটে থাকলেও এবার পর্যাপ্ত বৃষ্টি হওয়ায় তারা পাটক্ষেতেই জাগ দেওয়ার কাজ সারছেন। এতে তাদের উৎপাদন খরচ কমে গেছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.