পটিয়ায় পূর্বাঞ্চল পাহাড়ে পর্যটন স্পটের হাতছানি

0

সুজিত দত্ত, পটিয়া প্রতিনিধি:: দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাবেক মহকুমা সদর পটিয়ার পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ে শত শত একর পাহাড় জুড়ে পর্যটন স্পটের হাতছানি মিলেছে। এতে সরকার যদি পর্যটন স্পট গড়ে তুলে কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের সম্ভাবনা প্রবল। এ পাহাড়ে অবারিত সম্ভাবনা থাকলেও যথাযথ কর্তৃপক্ষের স্বদিচ্ছার অভাবে তা মুখ থুবড়ে পড়ছে।

বর্তমান সরকারের বিগত মেয়াদের দ্ইু বছরের মাথায় এখানে একটি ইকোপার্ক করার পরিকল্পনা নিয়ে জরিপ চালানো হলেও তা লাল ফিতায় বন্দী হয়ে পড়েছে। অথচ এখানে পর্যটন স্পট করা গেলে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব আয়ের উজ্জল সম্ভাবনা রয়েছে।

বানিজ্যিক রাজধানী চট্টগ্রামের অতীব নিকটবর্তী পটিয়া একটি বড় উপজেলা। পূর্বে পাহাড়, মধ্যখানে সমতল ভূমি, পশ্চিমে বঙ্গোপসাগর সব মিলিয়ে পটিয়ার অপরূপ সৌন্দর্যের নিদর্শনগুলো যে কোন মানুষের হৃদয় ছুয়ে যায়। বিশেষ করে পাহাড়ের উপর অংশ থেকে গড়িয়ে পড়া জলরাশি যেন প্রকৃতির এক অপরূপ দান।

পটিয়ার পূর্বাঞ্চলের হাইদগাঁও, কেলিশহর, কচুয়াই ও খরনার পাহাড়ে উৎপাদিত হয় দেশের বিখ্যাত শ্রীমাই’র মিষ্টিপান, কাগজী লেবু ও পেয়ারা। পটিয়া সদর থেকে দুই কিলোমিটার পূর্ব দিকে রয়েছে শ্রীমাই পাহাড়। শ্রীমাই পাহাড়ের পাদদেশে হাইদগাঁও গ্রামে রয়েছে শত শত একর পাহাড়ি ভূমি। প্রকৃতির ছোঁয়ায় সাজানো ভূমি আর পাহাড়ের নয়াভিরাম দৃশ্য যেন প্রকৃতির এক লীলা ভূমি। এর পার্শ্ববতী শ্রীমাই পাহাড়ের দুইকূল বেষ্টিত সারি সারি বৃক্ষ আর মাঝখানে প্রবাহিত ঝর্ণাধারা প্রকৃতিতে নেমে এসেছে অপরূপ চাহনীর অপূর্ব দৃশ্য। ভ্রমন পিপাসু লোকজন তার প্রেয়সীকে বলছে “চলনা ঘুরে আসি অজানাতে”। শীত মৌসুম এলে শত শত লোকজন নয়াভিরাম প্রকৃতির দৃশ্যগুলো উপভোগ করার জন্য এখানে ভ্রমনে আসে। শুধু তাই নয়, শীতের সকালে শিশির ভেজা ঘাসগুলো প্রকৃতিকে আরো মোহনীয় করে তুলে। ভ্রমন পিয়াসী লোকজন এখানে এসে তা দেখে মুগ্ধ হয়। মনের তৃপ্তি মেটায়। তবে এখানে এখনো গড়ে উঠেনি কোন পর্যটন কেন্দ্র। পর্যটন কেন্দ্র না থাকার দরুণ ভ্রমনের জন্য আসা লোকজন বসার কোন উপযুক্ত ব্যবস্থা না থাকায় কিছুক্ষণ ঘুরে ফিরেই অতৃপ্ত মন নিয়ে চলে যায়। এখানকার শত শত একর পাহাড়ী ভূমিতে ভ্রমনকারী পর্যটকদের জন্য বসার চেয়ার, ফুল বাগান, খেলার রাইড, বিভিন্ন দৃশ্যময় আইটেম করা হলে পটিয়া হবে একটি শ্রেষ্ট পর্যটন কেন্দ্র।

আশির দশকের পর থেকেই রাষ্ট্রে নিয়োজিত বিভিন্ন সরকার প্রধান ও তাদের লোকজন পটিয়ার হাইদগাঁও সাতগাছিয়া শ্রীমাই এলাকাকে একটি পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলার আশ্বাস দিলেও এখনো এ ব্যাপারে কোন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহন করেনি।
পটিয়ার হাইদগাঁওয়ে ভ্রমনে আসা জাতীয় পার্টির চট্টগ্রাম বাকলিয়া সভাপতি জি.এম পারভেজ জানান, দক্ষিণ চট্টগ্রামের মধ্যবর্তী স্থান পটিয়ায় একটি পর্যটন স্পট সৃষ্টি হলে সারা দেশ থেকে মানুষ এখানে ভ্রমনে আসবে। বিশেষ করে এখানের প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো এতই মনোরম যে একবার দৃষ্টি পড়লে যেন ফেরানো দায়।

আওয়ামী যুবলীগের পটিয়ার উপজেলা সভাপতি নুর আলম সিদ্দিকী বলেন, এখানের এর পাহাড়ী এলাকার মধ্যবর্তী বুদবুদি ছড়ায় প্রকৃতির অপার দান বিপুল তেল, গ্যাস মজুদ থাকার জনশ্রুতি থাকলেও তা যথাসময়ে উত্তোলনে অদ্যবধী ব্যবস্থা না নেওয়ায় তা নিজেই জ্বলে শেষ হচ্ছে। প্রতিদিন এখানে লোকজন এ দৃশ্য দেখতে আসে। এখানে প্রতিদিন বিভিন্ন এলাকা থেকে বিনোদন পিপাসু মানুষের আনাগোনা আমরা দেখি। অনেকেই সেখানে পিকনিক করে। আমার মনে হয়ে এখানে যদি একটি ইকোপার্ক করা যায় তাহলে বিনোদনের অফুরন্ত সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।

হাইদগাও ইউপি চেয়ারম্যান মো: ইউনুচ মিয়া বলেন, পটিয়া পর্যটকদের মধ্যেও এর একটা আলাদা আকর্ষণ রয়েছে। মাঝখানে এখানে একটি ইকোপার্ক করার পরিকল্পনা নেওয়ার কথা আমি শুনেছি। কিন্তু কি কারণে এখনো সেটা আলোর মুখ দেখেনি আমি জানি না। তবে আশাবাদী এ প্রকল্পটি দ্রুত বাস্তবায়ন হবে।

পটিয়া বনরেঞ্জ এর বিট কর্মকর্তা সুলতানুল আলম চৌধুরী বলেন, এখানে একটি ইকোপার্ক করার যতেষ্ট সুযোগ রয়েছে। সরকার উদ্যোগ নিলে এ এলাকার মানুষের চিত্ত বিনোদনে নতুন মাত্রা যোগ হবে আমি বিশ^াস করি। পটিয়ার পূর্বাঞ্চলের পাহাড়ে অগ্নি ছড়া থেকে বুদবুদি ছড়া পর্যন্ত আমাদের বিশাল সামাজিক বনায়ন রয়েছে। সেখানো সব ধরনের বন্য প্রাণী বসবাস করে। এখানে ইকোপার্ক হলে পরিকল্পিত বিনোদন কেন্দ্র গড়ে উঠার সম্ভাবনা রয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.