রাইফার জন্মদিনে আর কেক কাটবেন না মা

0

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম :: রাফিদা খান রাইফা। ২০১৬ সালের ২৯ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় নগরীর বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে সিজার অপারেশনের মাধ্যমে জন্ম নেয় সে। চার বছর পর পর আসবে শিশু কন্যা রাইফার জন্মদিন। তাই জন্মের পর ডা. হোসনে আরা শ্যামা ওইদিনই হাসপাতালে কেক কেটে রাইফার জন্মদিন পালন করার দাবি জানান পরিবারের কাছে। রাইফার পরিবারও সানন্দে রাজি হয়ে যান। এরপর ওই হাসপাতালে জন্মদিনের কেক কেটে উপস্থিত ডাক্তার ও নার্সদেরকে খাওয়ানো হয়। পরিবারের কনিষ্ঠ ও নবীন সদস্য রাইফার জন্মদিন পালনের জন্য চার বছর অপেক্ষা করা ছিল তার বাবা-মার কাছে অনেক কঠিন একটি ব্যাপার। তাই পারিবারিকভাবে সিদ্ধান্ত হয়, চার বছর পর পর ঘটা করে শিশু কন্যা রাইফার জন্মদিন পালন করা হবে। আর প্রতিবছর মায়ের জন্মদিনে কেক কেটে পালন করা হবে রাইফার জন্মদিনও।

রাইফার জন্মদিনে আর কেক কাটবেন না মা

 

ওই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০১৬ সাল ও ২০১৭ সালের ২১ সেপ্টেম্বর কেক কেটে মায়ের সঙ্গে রাইফার জন্মদিনও পালন করা হয়। কিন্তু এবার মায়ের জন্মদিনে আর কেক কেটে রাইফার জন্মদিন পালন করা হচ্ছে না। গত ২৯ জুন নগরীর সেই ম্যাক্স হাসপাতালেই অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার কারণে মাত্র দুই বছর চার মাস বয়সেই মৃত্যুবরণ করেন সাংবাদিক কন্যা রাইফা। অবহেলা ও ভুল চিকিৎসায় ফুটফুটে এই শিশু কন্যার অকাল মৃত্যুতে সারাদেশে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। বিক্ষুব্ধ হয় দেশের সাংবাদিক সমাজ। শোকাহত হয় দেশের সকল বিবেকবান মানুষ। শোকে যেন পাথর হয়ে যান রাইফার বাবা-মা। সন্তানের এমন মৃত্যু মেনে নেয়া যে কোনো বাবা-মার জন্যই অনেক কঠিন। তাই শোকাহত রাইফার মা রুমানা খান সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নিজের জন্মদিনে আর কেক কাটবেন না তিনি।

এ প্রসঙ্গে শিশু কন্যা রাইফার মা রুমানা খান বলেন, ‘আমার প্রথম জন্মদিন উদযাপন করেছিলেন বাবা বেশ ঘটা করে। এরপর এটা যেন আমাদের পরিবারের রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল। প্রতিবছরই ২১ সেপ্টেম্বর নানা আয়োজনে আমার জন্মদিন পালন করা হতো। কিন্তু এবার থেকে আর জন্মদিনের কেক কাটবো না আমি। পালন করা হবে না জন্মদিনও। আমার একমাত্র আদরের কন্যা রাইফা জন্মদিনের কেক কাটতে এবং খেতে খুব পছন্দ করতো। তাই কোনো উপলক্ষ্য ছাড়াই মাঝে মাঝে রাইফার জন্য ওর বাবা কেক কিনে আনতো। সকলকে নিয়ে সেই কেক কেটে বেশ মজা করে খেতো রাইফা। তার ওইসব স্মৃতি আমি ভুলবো কি করে? কেক দেখলেই যে ওর কথা মনে পড়ে যাবে। ওকে ছাড়া কিভাবে জন্মদিনের কেক কাটবো? তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আর কখনোই জন্মদিনের কেক কাটবো না।’      

গত ২৯ জুন রাতে চট্টগ্রামের বেসরকারি ম্যাক্স হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান শিশু রাইফা। ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ আনেন রাইফার বাবা সমকালের সাংবাদিক রুবেল খান। ঘটনার দিন রাতে চকবাজার থানায় মামলা দায়ের করতে যান রাইফার বাবা রুবেল খান ও চট্টগ্রামের সংবাদ কর্মীরা। এ সময় সিভিল সার্জন ডা. মো. আজিজুর রহমান সিদ্দিকীন নেতৃত্বে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটি রাইফার চিকিৎসায় অবহেলার প্রমাণ পান। গত ৬ জুলাই প্রতিবেদন দেয় ওই কমিটি। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের গঠিত তদন্ত কমিটিও অভিযুক্ত ম্যাক্স হাসপাতালে ১১টি অনিয়ম পায়। ত্রুটি সংশোধনে তদন্ত কমিটি ম্যাক্স হাসপাতালকে ১৫ দিনের সময় বেঁধে দিয়ে নোটিশ দেন। পরে র‌্যাবের ভ্রাম্যমান আদালতও বিভিন্ন অনিয়মের দায়ে হাসপাতালটিকে ১০ লাখ টাকা জরিমানা করে। এদিকে গত ১৮ জুলাই ভুল চিকিৎসা ও চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ এনে চার চিকিৎসকের বিরুদ্ধে থানায় এজাহার দায়ের করেন রাইফার বাবা সাংবাদিক রুবেল খান। এজাহার দায়েরের দু’দিন পর এজাহারটি মামলা হিসেবে গ্রহণ করার কথা সাংবাদিকদের জানান চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আবুল কালাম। চকবাজার থানায় দায়ের করা মামলায় ডা. বিধান রায় চৌধুরী, ডা. দেবাশীষ সেনগুপ্ত, ডা. শুভ্র দেব ও বেসরকারি ম্যাক্স হাসাপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. লিয়াকত আলীকে আসামী করা হয়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.