জাল টাকা সনাক্তে কোরবানি হাটে ৪১ ব্যাংক

0

সিটিনিউজবিডি : আর কিছুদিন পর মুসলমানদের ধর্মীয় বড় উৎসব ঈদুল আজহা। এই উৎসবকে কেন্দ্র করে রাজধানীসহ সারাদেশে কোরবানি পশুরহাটগুলোতে বরাবরের মতোই কাজ করবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।

শুধু রাজধানীতে ১৬টি স্থানে বসবে পশুর কেনাবেচার হাট। বাংলাদেশ ব্যাংকের তদারকিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে মোট ৪১টি ব্যাংক ঢাকার ১৬টি কোরবানির পশুর বাজারে জাল টাকা প্রতিরোধে কাজ করবে । ঈদ-পুজোর মতো বড় দুই উৎসবকে সামনে রেখে জাল টাকার কারবারিদের অপতৎপরতা ঠেকাতেই এ ধরনের বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে এ তথ্য জানা যায়।

এবারের পশুরহাটগুলোয় নতুন-পুরনো মিলে প্রায় এক হাজার জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন নিয়ে সতর্ক অবস্থানে থাকবেন বিভিন্ন ব্যাংক ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে জাল নোট প্রতিরোধে সচেতনাতামূলক ভিডিও প্রদর্শন, গণমাধ্যমগুলোতে বিজ্ঞাপন ও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোতে প্রচারণা চালানো হবে। এদিকে জামিনে থাকা জাল নোট কারবারিদের ওপরেও বিশেষ নজর রাখতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে অনুরোধ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।

চলতি মাসের ২৫ সেপ্টেম্বর ঈদুল আজহা অনুষ্ঠিত হতে পারে। এর সপ্তাহ খানেক আগে থেকেই কোরবানি পশু কেনার হাট জমে উঠবে। এছাড়া উপহারসামগ্রীসহ অন্য পোশাক-আশাক কেনার ধুম পড়বে। পরের মাসে ২৩ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হবে হিন্দুদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। এই দুই উৎসবে বিপুল পরিমান নগদ টাকার লেনদেন হবে।

নগদ টাকার লেনদেনের এ সময় সক্রিয় হয়ে ওঠে জাল টাকার কারবারিরা। দেশে প্রচলিত নোটগুলোর মধ্যে ৫০০ ও ১০০০ টাকা মূল্যমানের নোটই বেশি জাল হচ্ছে। তাদের ঠেকাতেই এসব প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যাংক কর্মকর্তা বলেন, ‘অধিকাংশ ক্ষেত্রে পুরাতন টাকার ওপর ছাপ বসানো হয়, যা জালটাকা সনাক্তকারী মেশিন ধরতে পারে না। এজন্য প্রতিটি টাকার নোট চোখে দেখে সনাক্ত করে রাখতে হচ্ছে।’ উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহারে ছাপানো এসব জাল টাকা মানুষের হাত ঘুরে চলে আসে, নগদ লেনদেনের সবচেয়ে ব্যস্ততম জায়গা ব্যাংকের ক্যাশ কাউন্টারেও।

বাংলাদেশ ব্যাংক সূত্রে জানা যায়, পশুরহাটে নোট জালকারী চক্রের অপতৎপরতা রোধকল্পে দেশের সব সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও থানাপর্যায়ের অনুমোদিত কোরবানির পশুরহাটগুলোয় বাংলাদেশ ব্যাংক ও আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সহযোগিতায় বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো বিরতিহীনভাবে জাল নোট যাচাই-সংক্রান্ত সেবা প্রদান করবে। এবার রাজধানীতে দুই সিটি করপোরেশন কর্তৃক নির্ধারিত ১৬টি স্থানে পশুরহাট বসবে। এসব পশুরহাটে ৪১টি ব্যাংকের মাধ্যমে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন স্থাপন করা হবে। ইতোমধ্যে এই হাটগুলোয় ক্রেতা-বিক্রেতাদের জাল টাকার নোটসংক্রান্ত সেবা দেয়ার জন্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এটি সরাসরি তত্ত্বাবধান করবে বাংলাদেশ ব্যাংক।

ঢাকার বাইরে যেসব জেলায় কেন্দ্রীয় ব্যাংকের শাখা অফিস রয়েছে সেখানেও ওই শাখা অফিস তত্ত্বাবধান করবে। যেখানে শাখা অফিস নেই সেখানে সোনালী ব্যাংকের নির্ধারিত শাখার (চেস্ট শাখা) মাধ্যমে বাজার তদারকি করা হবে।

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অনুমোদিত পশুরহাটগুলোয় নোট যাচাই-সংক্রান্ত সেবা দেয়ার লক্ষ্যে সব তফসিলি ব্যাংককে চিঠি দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ঢাকার বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের আওতাধীন সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার অনুমোদিত কোরবানির পশুরহাটে জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিনসহ বুথ স্থাপন করা হবে। ক্যাশ বিভাগের অভিজ্ঞ কর্মকর্তাদের সহায়তায় হাট শুরুর দিন থেকে ঈদের পূর্বরাত পর্যন্ত বিরতিহীনভাবে তফসিলি ব্যাংকগুলো নোট যাচাই-সংক্রান্ত সেবা প্রদানের নির্দেশের পাশাপাশি বাংলাদেশ ব্যাংকের পক্ষ থেকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ব্যবহারে উন্নতমানের জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন সরবরাহ করা হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রধান কার্যালয় থেকে অন্য জেলা অফিসে কী পরিমান জাল নোট শনাক্তকরণ মেশিন প্রয়োজন তার চাহিদা জানতে চেয়ে ইতোমধ্যে চিঠি দেয়া হয়েছে। এছাড়াও জাল নোট প্রতিরোধে জনগণকে সচেতনতার অংশ হিসেবে আসল নোটের নিরাপত্তা বৈশিষ্ট্যসংবলিত ভিডিওচিত্র প্রচারের জন্য তথ্য মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কোরবানির হাটে ক্রেতা-বিক্রেতা সবাইকে লেনদেনের সময় মেশিনের সাহায্যে নোট পরীক্ষা করে নেয়ার জন্য কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পক্ষ থেকে অনুরোধ জানানো হয়েছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের কারেন্সি ম্যানেজমেন্ট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক শুভঙ্কর সাহা বলেন, ‘প্রতি ঈদেই বিভিন্ন ব্যবসায়ী সংগঠনের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন বিপণিবিতানে জাল নোট শনাক্তকারী মেশিন সরবরাহ করে থাকি। এবারও যদি ব্যবসায়ী সংগঠনগুলো চায় তবে মেশিন দেয়া হবে।’

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.