আনোয়ারা পারকি সৈকতে চলছে প্রকাশ্যে পতিতাবৃত্তি!
জাহেদুল হক,সিটি নিউজ : পরনে বোরখা। মুখে নেকাব। কপাল আর চোখ দুটি দেখা যাচ্ছে। স্নো পাউডার মাখা ধবধবে সাদা। দেখতে ভদ্র-মার্জিত পর্দানশীল কোনো নারী। পরক্ষণে বুঝা গেল আসল ঘটনা! বোরখা তাদের পর্দা নয়, আড়ালে থাকার কৌশল মাত্র। চলাফেরা এলোমেলো। দিকবেদিক ছুটাছুটি করছে। তবে লক্ষ্যে তারা স্থির। কোনো পর্যটকের চোখে চোখ পড়লেই ইশারায় বুঝিয়ে দেয়,টাকার বিনিময়ে সময় কাটাতে তারা প্রস্তুত।
নিত্যদিনের এমনই চিত্র চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার পারকি সমুদ্র সৈকতে। দীর্ঘদিন ধরে প্রভাবশালী মহলের মদদে চলছে প্রকাশ্যে এই দেহ ব্যবসা। এ কারণে এলাকার সামাজিক পরিবেশ কুলষিত হচ্ছে দিনদিন। এলাকাবাসীর অভিযোগ সত্ত্বেও পুলিশ প্রশাসন এ ব্যাপারে কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না।
জানা যায়,পারকি সৈকত এলাকায় অর্ধশতাধিক খাবারের দোকান গড়ে উঠেছে। এসব দোকানের প্রত্যেকটির ভেতরে আলাদাভাবে ছোট ছোট কক্ষ রাখা হয়েছে। একেকটি কক্ষ যেন মিনি পতিতালয়। সেখানে প্রকাশ্যে চলছে দেহ ব্যবসা। পাশাপাশি মাদকের ভয়াবহতায় এলাকার যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বিপদগামী আর নেশায় আক্রান্ত হচ্ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়া শিক্ষার্থীরা।
এই অপকর্মের কারণে পরবর্তী প্রজন্মের ভবিষৎ অন্ধকার আমানিশার অতল গহবরে নিমজ্জিত হচ্ছে। এসবে জড়িতরা কোনো আইন-কানুন বা সামাজিক দায়বদ্ধতার তোয়াক্কা না করে চালিয়ে যাচ্ছে মাদক ও দেহ ব্যবসার মতো গুরুতর অপরাধ। আর এ অপকর্মে তাদের মদদ দিচ্ছে সমাজের কিছু প্রভাবশালী ও স্বার্থন্বেষী মহল।
অনুসন্ধানে জানা গেছে,সৈকত এলাকার দোকানদার মোহাম্মদ আলী খান,মোহাম্মদ ইব্রাহিম,আবদুল মন্নান,মোহাম্মদ ইদ্রিচ,মোহাম্মদ নুর,মোহাম্মদ ইউনুস,কামাল উদ্দিনসহ প্রায় দোকানি এই অপকর্মের সাথে জড়িত। তাদের অনেকে সরাসরি আবার কেউ কেউ কর্মচারীর মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে এ দেহ ব্যবসা। বিনিময়ে খদ্দেরের কাছ থেকে হাতিয়ে নিচ্ছে হাজার হাজার টাকা।
অনেক সময় টাকা দিতে অপারগ হলে পর্যটকদের নামিদামি মোবাইলও কেড়ে নেয়া হয় এ আসরে। শুধু তাই নয়,সৈকতে বেড়াতে আসা অনেক প্রেমিক যুগল তাদের হাতে হেনস্তা হয়েছে। এমন অনেক ঘটনা থানা পর্যন্ত গড়িয়েছে বলে জানা যায়। এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান এম এ কাইয়ুম শাহ্ একাধিকবার অভিযান চালিয়ে কুঠিরগুলো গুড়িয়ে দিলেও তা কমেনি।
রেশমা (ছদ্মনাম) নামে একজন যৌনকর্মী জানান,তার মতো অনেকে ১৫নং ঘাট হয়ে শহর থেকে পারকি সৈকতে আসে। দালালরা খদ্দের ঠিক করে কল দিলেই তারা বাসা থেকে বের হয়। সৈকতে সকালে এসে আবার সন্ধ্যায় বাসায় ফিরে যায়। তবে আয়ের অর্ধেকাংশ দালালরা নিয়ে নেয় বলে অভিযোগ করেন তিনি।
এদিকে,সৈকতের প্রতিটি দোকান থেকে মাসিক আটশ টাকা করে চাঁদা তোলা হয়। এসব টাকায় প্রভাবশালীদের ম্যানেজ ও পুলিশের মাসোহারা দেয় ব্যবসায়ী সমিতি। এর বাইরে সমিতির সভাপতি মো.ইলিয়াছ ও সাধারণ সম্পাদক মো.জামালকে দৈনিক ভিত্তিতে আলাদা উৎকোচ দিতে হয় বলেও জানা যায়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সৈকতের এক দোকান কর্মচারী বলেন,বিভিন্ন জায়গা থেকে বোরখা পরা পতিতারা এখানে আসে। এখানকার দোকানের ভেতর ছোট ছোট রুম করা আছে। সেখানে তারা খদ্দের নিয়ে প্রবেশ করে তারপর কাজ সেরে চলে যায়। যারা মেয়ে নিয়ে আসে তাদের কাছ থেকে ঘর ভাড়া ঘন্টায় পাঁচশ টাকা। আর যারা আমাদের মাধ্যমে চাহিদা মাফিক মেয়ে নেয় তাদের কাছ থেকে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা পর্যন্ত নেয়া হয়।
ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে পারকি সৈকত ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ ইলিয়াছ বলেন,সৈকতের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী টাকার লোভে এসব করছে। আমরা এসব অপকর্মের বিরুদ্ধে সবসময় সোচ্চার। পুলিশও প্রায়সময় এসব দোকানে অভিযান চালায়। তারপরও অনৈতিক কাজগুলো বন্ধ হচ্ছে না। এই অপকর্মে আপনারা তিন ভাই জড়িত রয়েছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি তা অস্বীকার করেন।
রায়পুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ও জেলা সৈকত ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য জানে আলম বলেন,সৈকতে গড়ে উঠা বেশিরভাগ দোকান অবৈধ। তারা সেখানে ব্যবসার আড়ালে পতিতাবৃত্তি শুরু করেছে। এ কারণে সাধারণ পর্যটকরা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। পাশাপাশি এলাকার যুব সমাজ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
এসব অপকর্মের কুঠিরগুলো উচ্ছেদ করতে প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। জানতে চাইলে কর্ণফুলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আলমগীর মাহমুদ জানান,থানায় নতুন যোগ দিয়েছি তাই বিষয়টি আমার জানা নেই। খোঁজ-খবর নিয়ে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আনোয়ারা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) গৌতম বাড়ৈ বলেন,অনৈতিক কাজের বিরুদ্ধে সেখানে শিগগির অভিযান চালানো হবে।