চন্দনাইশ ভূমি অফিসে দালাল ও প্রভাবশালীদের উৎপাত
সিটি নিউজ,চন্দনাইশ: চন্দনাইশ উপজেলার ১টি পৌরসভা ও ৯টি ইউনিয়নে ভূমি বিরোধের ফলে মারামারি, হানাহানি, দলাদলি, দখল-বেদখল, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে ফ্যাঁসাদ সৃষ্টি, মামলা-পাল্টা মামলা দিন দিন বেড়েই চলেছে। পক্ষ-বিপক্ষ একে অপরকে মিথ্যাভাবে ফাঁসানোর প্রতিযোগিতা চলছে প্রতিনিয়ত। এ ভূমি বিরোধের ফলে দালাল ও প্রভাবশালীদের উৎপাতে সর্বস্ব হারাচ্ছে এলাকার দরিদ্র পরিবারের সদস্যরা।
এ সব সামাল দিতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে এলাকার নিরীহ পরিবারগুলো। আবাদি জমি, পুকুর, দখলী খাস জমি, ভিটি, বসতবাড়ী নিয়ে বিরোধ যেন লেগেই আছে। আবার কেউ হারাচ্ছে এতটুকুন সম্বল বসতভিটা। জানা যায়, থানার বেশিরভাগ অভিযোগ ভুমি সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা লুটছে এলাকার কিছু টাউট, বাটপার ও দালালেরা।
অভিযোগ রয়েছে যে, তারা এলাকার কিছু বেকার যুবকদের টাকা-পয়সার লোভ দেখিয়ে বিরোধীয় জমি জবর দখলের মাধ্যমে এলাকায় সংঘাতের সৃষ্টি করে যাচ্ছে। এসব দালালেরা কৌশলে জমির খতিয়ানভুক্ত পরিবারের সদস্যদের মধ্যে প্রথমে ভূমি সংক্রান্ত ফ্যাঁসাদ সৃষ্টি করে। পরে খতিয়ানের বিভিন্ন দাগাদির অংশ বিক্রির জন্য কুপরামর্শ দিয়ে থাকে।
সেখানে তারা দালালি হিসেবে হাজার হাজার টাকা চুক্তি করে নিচ্ছে। উপজেলার ২টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নে প্রায় এলাকায় চলছে এ বিরোধ। বিশেষ করে বৈলতলী, বরমায় নদী ভাঙ্গন এলাকায় এ বিরোধ সবচেয়ে বেশি পরিলক্ষিত হচ্ছে। এলাকার কিছু টাউট প্রকৃতির লোক আর এস, বি এস খতিয়ান সহ জমি সংক্রান্ত কিছু ধারনা থাকায় আইনজীবী এবং বিচারকের চেয়েও নিজেদের বেশি জ্ঞানী মনে করেন।
মুখের জোরে প্রতিপক্ষকে ধরাশায়ী করার কৌশল অবলম্বন করতে দেখা যায়। এসব টাউট প্রকৃতির লোকেরা বেশিরভাগই থানা ও ইউনিয়ন পরিষদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে গলাবাজী করে বিচারের নামে দৈনিক ১ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকে। অথচ তাদের এ টাকা যোগান দিতে গিয়ে কিছু পরিবার সর্বস্ব হারাতে বসেছে। এসব শালিশকারেরা দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে একেক সময় একেক পক্ষ সময় নিয়ে বিচার প্রার্থীদের নিকট থেকে তাদের ফি ১ হাজার টাকা নিয়ে নেয়। এভাবে চলে বছরের পর বছর। হয়রানির শিকার হতে হয় বিচার প্রার্থীদের।
দালালেরা স্থানীয় চেয়ারম্যানদের আশ্রয়ে-প্রশ্রয়ে এবং থানার সম্মতির কারণে এসব দালাল, বখাটেরা পক্ষে-বিপক্ষের প্রতিনিধি পরিচয়ে চালিয়ে যাচ্ছে হঠকারিতামূলক কার্যকলাপ। এসব দালাল, টাউটের জন্য গ্রাম্য আদালতে চেয়ারম্যানদের পাশাপাশি একটি চেয়ার দখল করে থাকতেও দেখা যায়। এরা পক্ষে-বিপক্ষের অবস্থান নিলেও সবাই নিজেদের স্বার্থে সংঘবদ্ধ থাকে। এলাকার সাধারণ দরিদ্র জনগণ বিরোধ মিমাংসার জন্য গ্রাম্য আদালতের স্মরণাপন্ন হয়ে দালালদের খপ্পরে পড়ছে প্রতিনিয়ত। অনেক সালিশকারক নিজে বিচারকে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আদালতে মামলা চলাকালীন অবস্থায় বিরোধীয় সম্পত্তিতে খুঁটি স্থাপনও করে দিতে দেখা গেছে।
উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সালিশকারক নামে একটি চক্র অসহায় গরীবদের জায়গা জমি বিরোধ মিটানোর নামে প্রহসন চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের এ সিন্ডিকেটটি পুরো চন্দনাইশে সংঘবদ্ধভাবে গ্রাম্য আদালত থেকে শুরু করে থানা পর্যন্ত কাজ করছে বীরদর্পে। চন্দনাইশে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভালো থাকলেও জমিজমা সংক্রান্ত বিরোধ নিয়ে সংঘাত লেগেই আছে। ফলে পক্ষদ্বয়ের মধ্যে মিচ মামলা, মারামারির মামলা, মারামারির ঘটনা যেন নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার হয়ে দাড়িয়েছে। এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে দালাল চক্রটি সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
এরা বিচারের নামে তাদের অর্থ আদায়, প্রয়োজনে থানায় মামলা রুজু করার দায়িত্বও নিয়ে থাকেন। এ ব্যাপারে অফিসার ইনচার্জ কেশব চক্রবর্তী বলেছেন, সাধারন মানুষ জমিজমার হিসাব বুঝেন না বিধায় এসব লোকদেরকে তাদের পক্ষে সালিশকার হিসেবে দিয়ে থাকেন। এ সকল বিচারিক কার্যক্রম থানা ক্যাম্পাসে না হয়ে অনেক সময় থানা পার্শ্ববর্তী চায়ের দোকানেও হয়ে থাকে, সাধারণ মানুষ এর থেকে পরিত্রাণ চায়। কিছুদিন থেকে চন্দনাইশ থানার আশেপাশে’র দালালেরা থানায় আগের মত অবস্থান করতে পারচ্ছেন না, বিধায় থানায় মামলা-মোকাদ্দমা কমে এসেছে।