চন্দনাইশে মাদক ব্যবসা অব্যাহত!

0

সিটি নিউজ, চন্দনাইশঃঃ চন্দনাইশে ধরাছোঁয়ার বাইরেই রয়ে গেছে মাদক ব্যবসায়ীরা। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান শুরুর পরও চন্দনাইশে মাদক ব্যবসায়ীরা তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। তাদের অর্থের দাপটে অসহায় সুশীল সমাজ। নির্বাচনে রাজনৈতিক নেতাদের অর্থ যোগানেরও সুযোগ খুঁজছেন তারা।

চন্দনাইশে দু’টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি এলাকায় কোন না কোনভাবে মাদক ব্যবসা অব্যাহত রয়েছে। প্রশাসন যথাসাধ্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন, মাদককে জিরো ট্রলারেন্সে নিয়ে আসার জন্য। স্থানীয়দের মতে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে সন্ধ্যার পর থেকে মোটর সাইকেল করে এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় এসে ইয়াবা বিক্রি করে যাচ্ছে। আর এ সকল ইয়াবা বিভিন্ন শ্রেণির, পেশার মানুষের কাছে পৌঁছে যাচ্ছে।

সন্ধ্যার পর বিভিন্ন এলাকায় ইয়াবা সেবনকারীরা সংঘবদ্ধ হয়ে ইয়াবা সেবন করে যাচ্ছে। এসকল অল্প ও মধ্য বয়সী কিশোরেরা কখনো পিতার পকেট, কখনো মায়ের ব্যাগ, কখনো ঘরের চাউল, স্বর্ণ-অলংকার, মোবাইল চুরি করে নিয়ে যাচ্ছে মাদকের টাকা যোগান দিতে। এতে ব্যর্থ হলে সন্ধ্যার পর, দুপুর বেলা বিভিন্ন সড়কের নির্জনস্থানে বসে ছিনতাইয়ের ঘটনাও ঘটাচ্ছে।

অনেকে ইয়াবা সেবন করার সময় অথবা অল্প-স্বল্প ইয়াবা বিক্রির সময় পুলিশের হাতে ধরা পড়লেও ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যাচ্ছে প্রকৃত ইয়াবা ব্যবসায়ী বা গডফাদারেরা। সম্প্রতি সরকার ইয়াবা রাখার দায়ে সর্বোচ্চ সাজা মৃত্যুদন্ড করলেও ইয়াবা সেবন ও ব্যবসা কোনভাবে বন্ধ করা যাচ্ছে না। সরকার সম্প্রতি ইয়াবা পাচার ও সেবন প্রতিরোধে ক্রস ফায়ারের মত পদক্ষেপও গ্রহণ করেছেন।

উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে একটি সংঘবদ্ধ চক্র ইয়াবা পাচার করে যুব সমাজকে ধ্বংসের দিকে টেলে দিচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য সচেতনতা, সেমিনার, সিমপোজিয়ামের মাধ্যমে যুব সমাজকে মরণ নেশা মাদকের কুফল সম্পর্কে অবহিত করতে হবে। চন্দনাইশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা মাদক ব্যবসায়ীদের অর্থের দাপটে অসহায় সুশীল সমাজ। এ সকল মাদক ব্যবসায়ীরা নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক নেতাদের অর্থের যোগান দেয়ার অপচেষ্টায় লিপ্ত রয়েছে। সচেতন মহল এ সকল মাদক ব্যবসায়ীদের সাথে জনপ্রতিনিধিদের সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।

বাংলাদেশে ইয়াবা নামে মাদকের ছোবল মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। এর থেকে ব্যতিক্রম নয় চন্দনাইশের এ জনপদ। বাংলাদেশে সরকারি হিসাব অনুযায়ী দিনে ইয়াবা সেবন হয় প্রায় ২০ লাখ। প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার থেকে শ্রোতের মতো ইয়াবা ঢুকছে বাংলাদেশে। বাংলাদেশের লাখ লাখ তরুণ ইয়াবায় আসক্ত হয়ে নিজেদের নিঃশেষ করে দিচ্ছে। এদের মধ্যে চন্দনাইশে একটি বিশাল যুব গোষ্ঠি সম্পৃক্ত হয়ে পড়েছে। এদেরকে বাচাতে না পারলে এলাকা তথা দেশের জন্য ব্যাপক ক্ষতি সাধন হবে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ব্যাহত হতে পারে।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, ২০১০ সালে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ ৮১ হাজার ইয়াবা ট্যাবলেট আটক করে। ২০১৬ সালে এই সংখ্যা বেড়ে প্রায় ৩ কোটিতে দাঁড়ায়। গত জুনে এক দিনেই বিশেষ বাহিনী চট্টগ্রাম উপকূলে মাছ ধরার একটি ট্রলার থেকে ১৫ লাখ ইয়াবা ট্যাবলেট আটক করে। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে ২৮ লাখ ইয়াবার একটি চালানের কথা বাদ দিলে এর আগে এত বড় চালান আর ধরা পড়েনি।

এসব তথ্য থেকেই অনুমান করা যায় বর্তমানে বাংলাদেশে ব্যাপক সংখ্যক মানুষ এ মারণ নেশায় জড়িত হয়ে পড়েছে। তথ্য সূত্রমতে বাংলাদেশে প্রতি ২৪ ঘণ্টায় ২০ লাখ ইয়াবা সেবন করা হয়ে থাকে। মেথামফেটামিন ও ক্যাফেইনের সমন্বয়ে তৈরি ইয়াবা ট্যাবলেটটির সেবন বাংলাদেশে শুরু হয় ২০০৬ সালের দিকে। তাদের মতে অভিজাত শ্রেণির কিশোর ও তরুণ ছেলে-মেয়েদের মধ্যেই ইয়াবার নেশা চালু ছিল।

বিশেষ করে দেশের ইংরেজি মাধ্যমের স্কুল-কলেজে পড়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে এর সংখ্যা বেশি। তরুণী মডেল, চলচ্চিত্রের নায়িকা, গায়ক-গায়িকা, ড্যান্সার এবং তারকা জগতের অনেকেই ইয়াবায় আসক্ত হয়ে পড়েছে। বাংলাদেশের সঙ্গে মিয়ানমারের ২শ ৫০ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। জাতিসংঘের মাদক ও অপরাধ বিষয়ক কার্যালয়ের তথ্য মতে, দক্ষিণ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশির ভাগ দেশে ইয়াবা সরবরাহকারী দেশ এ মিয়ানমার।

সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর আর্থ-সামাজিক অবস্থা এ পরিবর্তনের জন্য দায়ী। স্থানীয় অনেকে ইয়াবা মাদক সমস্যার জন্য কিছু অশুভ শক্তিকে দায়ী করেছেন। ইয়াবার মরণ ছোবল বাংলাদেশি তরুণ প্রজন্মকে কিভাবে ধ্বংস করছে তার একটি তথ্যচিত্রে দেখা যায়, বাংলাদেশের জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ ১৫ থেকে ৩০ বছর বয়সী ইয়াবা সেবন করছে।

তাদের রয়েছে প্রচুর অবসর সময় এবং ওড়ানোর মতো নগদ টাকা, যা এর আগের কোনো প্রজন্মের নিকট ছিল না। ‘ডেইলি স্টার পত্রিকার (২০১৩) মতে, বাংলাদেশে মাদকাসক্তের সংখ্যা ৬০ লাখ। এরা দিনে সাত কোটি টাকার বেশি মাদকের পেছনে খরচ করে। ২০১৪ সালে দেওয়া আরেকটি তথ্য থেকে জানা যায়, বাংলাদেশের ৫৩.২৭ শতাংশ তরুণ মাদকাসক্ত।

বর্তমানে একেকটি ইয়াবা ট্যাবলেট গুণগত মান ভেদে ৩০০ থেকে ৯০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। ‘বাংলাদেশের বহু লোক হতাশায় ভোগে, অনেকে সমাজের অন্যদের সঙ্গে ঠিকমতো মিশতে পারে না। তাদের অনেকেই ইয়াবার মতো নেশার দিকে ঝুঁকে পড়ে নিজেকে উদ্যমী অনুভব করে। অনেকে যৌন লালসা থেকেও ইয়াবা আসক্ত হয়ে পড়ছে।

সম্প্রতি চন্দনাইশ মিডিয়া ক্লাবের গোলটেবিল বৈঠকে মাদক উন্নয়নের অন্তরায়, বিষয়টি উঠে আসে। ফলে দক্ষিণ জেলা আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান তার বক্তব্যে চন্দনাইশে একজন জনপ্রতিনিধি মাদক ব্যবসার সাথে সরাসরি জড়িত বলে আলোচনায় অভিযোগ করেছেন।

একই অনুষ্ঠানে উপজেলা চেয়ারম্যান আবদুল জব্বার চৌধুরী তার বক্তব্যে বলেছেন, জনপ্রতিনিধিদের গাড়িতে যদি মাদক ব্যবসায়ী বা সেবনকারীরা না উঠে তাহলে মাদক সেবন ও বিক্রি বন্ধ হয়ে যাবে। বেশ কয়েকজন বক্তা বলেছেন, মাদকাসক্ত যুব সমাজকে মাদকমুক্ত করতে প্রয়োজন বিনোদন, ক্রীড়া, সংস্কৃতি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। অন্যথায় বেকার যুবকেরা তাদের অতিরিক্ত সময় নষ্ট করতে মাদকাসক্ত হবে বলে মন্তব্য করেছেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.