কর্মক্ষম রাখুন মস্তিষ্ককে!

0

লাইফস্টাইল ডেস্ক : বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে যেমন মানুষের বাইরের শরীরের জড়তা আসে, বিকল হতে শুরু করে সেটা, তেমনি জড়া আসে আর বিকল হতে শুরু করে মানসিক শরীরও। ধীরে ধীরে আরো অনেক যন্ত্রপাতির মতন নষ্ট হতে শুরু করে মানুষের মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতাও।

অন্য সব যন্ত্রপাতি খারাপ হতে শুরু করলে বা নষ্ট হয়ে গেলে সেটাকে ঠিক করে নেওয়া যায়। সেটার ব্যবহারের নির্দেশিকা পড়ে প্রথম থেকেই যত্ন করা যায় সেটার। কিন্তু মস্তিষ্ক এমন একটি জিনিস যেটাকে সারিয়ে তোলা সোজা কথা নয়। অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এই জিনিসটি ব্যবহারের জন্যে নেই সঠিক কোনো নির্দেশিকাও! আর তাই গবেষকেরা অনেক গবেষণা শেষে শেষ পর্যন্ত কিছু পদ্ধতি বের করতে সক্ষম হয়েছেন যেগুলো অনুসরণ করলে আর সব যন্ত্রপাতির মতন মস্তিষ্ককেও করে তোলা যাবে নতুনের মতন, ধারালো!

নিজের প্রতি বিশ্বাস রাখা
বয়স আড়লে অনেকেই ভুলে যেতে শুরু করেন অনেককিছু। এই যেমন ঘরে ঢুকে ভুলে গেলেন ঠিক কি কারণে ঘরে ঢুকেছিলেন আপনি। তবে অবাক হবেন শুনলে যে এমনটা কেবল বয়স্কদের ক্ষেত্রেই হয়না। হয় কমবয়সী অনেকেরও। নর্থ ক্যারোলিনা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০ বছর গবেষণা করার পর এই সমস্যাটির কারণ বের করতে সমর্থ হয়েছেন ডায়ানা টরন। আর কারণটি হচ্ছে নিজের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলা। নিজে কোনো কাজ করতে পারবেন সেটা যদি নিজেকেই বিশ্বাস করাতে না পারেন তাহলে অন্যরা সেটা বিশ্বাস করবে কী করে?

অনেক সময় বয়স বাড়লেই মানুষ অন্যের ওপর এতটাই নির্ভর হতে শুরু করে দেয় যে পরবর্তীতে মস্তিষ্ক পুরোপুরি সচল থাকলেও সেটা অচল হতে বাধ্য হয়। শুধু বয়সের কারণেই নয়, বর্তমান প্রযুক্তির কারণেও অনেকে যন্ত্রের প্রতি বেশি নির্ভর হয়ে পড়েন। ফলে একটা সময় যে কাজগুলো অবলীলায় করে ফেলা যেত সেটাই শুধু বিশ্বাসের অভাবে অনেক বেশি কষ্টকর হয়ে ওঠে তার পক্ষে। আর তাই এসব সমস্যার মোকাবেলা করে মস্তিষ্ককে সচল রাখতে বিশ্বাস রাখুন নিজের ওপর। নিজেকে বলুন, আমি পারব!

কানকে রক্ষা করা
ইন্দ্রিয়গুলোর অক্ষমতা ধীরে ধীরে মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতার ওপর প্রভাব ফেলে। এই যেমন- কানের ওপর অতিরিক্ত চাপ ফেলা হতে পারে মস্তিষ্কের ধুসর অংশের পরিমাণ কমে যাওয়ার কারণ। আর কানের এই সমস্যাগুলো মূলত আসে প্রচন্ড শব্দদূষণ থেকে। প্রতিদিন ১৫ সেকেন্ড উচ্চমাত্রার রক গান শুনলেও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্থ হয় কান। কেবল তাই নয়, সামান্য চুল শুকানোর যন্ত্রের ব্যবহারও আপনার কানকে প্রচন্ড ক্ষতির মুখে ফেলে দেয়। আর কানের শোনবার ক্ষমতা কমে গেলে মস্তিষ্কও কাজ করতে ঢিলেমি শুরু করে দেয়। সুতরাং, কর্মক্ষম মস্তিষ্কের জন্যে বাঁচিয়ে রাখুন কানকে!

বাদ্যযন্ত্র কিংবা ভাষা রপ্ত করা
এক পরিসংখ্যানে দেখা গিয়েছে যে, যারা বাদ্যযন্ত্র বাজাতে পারেন অন্যদের চাইতে ৬০ শতাংশ কম স্মৃতিশক্তিহীনতায় ভোগেন তারা। এ ছাড়াও নতুন কোনো ভাষা রপ্ত করা আলঝেইমার্স রোগকে পাঁচ বছর দেরি করিয়ে দেয়। কারণ অন্যসব ছোটখাটো ধাঁধা বা মোবাইল অ্যাপের চাইতে অনেক বেশি করে মস্তিষ্ককে নাড়া দেয় এগুলো। সাহায্য করে নতুন জিনিস মনে রাখতে, মনযোগ দিতে, দক্ষতা বাড়াতে আর অবশ্যই নিজের প্রতি বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে। ফলে মস্তিষ্ক হয়ে ওঠে অনেক বেশি কর্মক্ষম। অন্তত অবসরের চাইতে বেশি!

ফাস্টফুড দূরে রাখা
ফাস্টফুডগুলো অবশ্যই ভরা থাকে অনেক বেশি পরিমাণ ক্যালোরিতে। আর এই অতিরিক্ত পরিমাণের ক্যালোরি বাড়িয়ে দেয় মস্তিষ্কের ভেতরের কোলেস্টরলের মাত্রা। অবসাদ আর তন্দ্রাভাব আনে। ফলে অলসতায় পেয়ে বসে মস্তিষ্ককে। অক্সিজেন ও রক্ত চলাচল ঠিকমতন করতে না পারায় ভালোভাবে কাজ করতে পারেনা মস্তিষ্ক। এ ছাড়াও মাথার স্নায়ুগুলো ইনসুলিন হরমোনের দ্বারা অনেক বেশি প্রভাবিত হয়। ফলে অতিরিক্ত মিষ্টি ও পানীয় খাওয়ার ফলে যখন ইনসুলিনের মাত্রার তারতম্য ঘটে শরীরে তার একটা বাজে প্রভাব গিয়ে পড়ে মস্তিষ্কে। তবে ভালো ব্যাপার হচ্ছে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড, ভিটামিন ডি এবং বি ১২ এর মতন উপাদানগুলো সবসময়ই মস্তিষ্কের ভেতরে ঘটা বয়সের এই ক্ষতিকর প্রভাবগুলোকে সারিয়ে তোলে। আর তাই ফাস্টফুড এড়িয়ে চলুন আর ওপরে বলা উপাদান সমৃদ্ধ খাবার বেশি করে গ্রহণ করুন।

শরীরচর্চা করা
ভাবছেন শরীরচর্চার সঙ্গে সুস্থ মস্তিষ্কের কী যোগাযোগ? অবশ্যই যোগাযোগ আছে। দেখা যায় যে শিক্ষার্থীরা হেটে স্কুলে যায় তাদের ফলাফল ভালো আসে। ঠিক সেরকমভাবেই শরীরচর্চা করলে আপনার শরীরের রক্ত চলাচল বাড়বে, মস্তিষ্কের স্নায়ুগুলো একে অন্যের সঙ্গে আরো ভালোভাবে যোগাযোগ করতে পারবে। পুরোপুরি কর্মক্ষম হয়ে উঠবে মস্তিষ্ক!

সবার সঙ্গে মেশা
মস্তিষ্ক তখনই ভালো থাকবে যখন এটি ভাবার মতন নতুন নতুন উপাদান এর সামনে পাবে। আর তাই সবার সঙ্গে মিশুন। বয়স হয়েছে বলে ঘরের কোণে পড়ে না থেকে বাইরে বেরিয়ে আসুন। নতুন সব অভিজ্ঞতা নিন। গবেষণায় দেখা গিয়েছে ৭০ বছরের উর্ধ্বে যারা সবার সঙ্গে সামাজিক হবার চেষ্টা করেছেন তারা অন্যদের তুলনায় ৭০ শতাংশ কম মানসিক সমস্যা বা স্মৃতিহীনতায় ভুগেছেন। আর তাই বয়স হয়েছে বলে ঘরে বসে না থেকে বেরিয়ে পড়ুন বাইরে। আর সতেজ রাখুন মস্তিষ্ককে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.