তদবিরবাজরা সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ: দুদক চেয়ারম্যান

0

গোলাম সরওয়ার,সিটি নিউজ: তদবিরবাজদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম শুরু করার আহবান জানিয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, তদবিরবাজরা সবচেয়ে বড় দুর্নীতিবাজ। তদবিরবাজ দ্বারা প্রভাবিত না হলে আপনারা কেউ অসম্মানিত হবেন না।

রোববার ২৭ জানুয়ারি সন্ধ্যায় চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এসব কথা বলেন।চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার আব্দুল মান্নানের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠিত সভায় দুদক চেয়ারম্যান প্রধান অতিথি ছিলেন।

তিনি আরো বলেন, দুদক কাউকে ফোন করে না। দুদক লিখিতভাবে জানায়। কারণ দুদকের আইন হচ্ছে, কখনো কারও বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়া গেলে তাকে লিখিতভাবে জানানো। তাই কেউ যদি আপনাকে দুদকের পরিচয় দেয়, তাহলে উল্টা তাকে প্রশ্ন করুন কোন কিছু থাকলে লিখিতভাবে জানাতে বলুন।

দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আজ চট্টগ্রামের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে আসি। বিদ্যালয়ে শিক্ষকদের উপস্থিতি দুএকটি জায়গায় মোটামুটি ভালো পাওয়া গেলেও বেশিরভাগ স্কুলের অবস্থা হতাশাজনক। আমরা অনেকেই মনে করি এমপিওভুক্ত স্কুলগুলো সরকারি নয়। এই ধারণা সম্পূর্ণ ভুল। সরকারি কোষাগারের একটি টাকাও যেখানে ব্যয় হবে সেটি সরকারি প্রতিষ্ঠান। সন্তানদের স্কুলে জিম্মা দেয়া হয় শিক্ষকদের কাছে। সেই শিক্ষকরা যদি বিদ্যালয়ে উপস্থিত না থাকে তাহলে সন্তানরা সুশিক্ষিত হবে কীভাবে। দেশের উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে যদি প্রজন্ম শিক্ষিত না হয় তাহলে সেই উন্নয়ন টেকসই হবে না। দায়িত্বে অবহেলা একটি অপরাধ। শিক্ষা সেক্টরেও কেউ দায়িত্ব অবহেলা করছে কি না তা দেখার দায়িত্ব দুদকের। সবক্ষেত্রে দুদক দন্ডবিধির ১৬৬ ধারা প্রয়োগ করবে।

দুদক চেয়ারম্যান আরো বলেন, শুধুমাত্র মামলা করা দুদকের কাজ নয়। মামলা করলেই দুদক খুশি হয় না। কারণ দুদকের এক একটি মামলা মানে ক্যান্সার। দুদকের মামলায় পড়লে জীবনের অর্জিত সহায়-সম্পত্তি সব শেষ হয়ে যাবে। দুর্নীতি যেন না ঘটে-সবাই মিলে এর প্রতিরোধ করলে দেশ আরো এগিয়ে যাবে। দুদক শিক্ষা সেক্টরকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। আজকের বাচ্চারাই আগামী দিনে নেতৃত্ব দেবে। তারা যদি সুশিক্ষায় শিক্ষিত না হতে পারে তাহলে সব উন্নয়ন বৃথা যাবে। তিনি সকল সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তাদের প্রাথমিক ও উ”চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর দিকে নজর দেয়ার আহ্বান জানান।

বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পরিদর্শনে স্কুলগুলোর অবস্থা হতাশাজনক উল্লেখ করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, স্কুলের প্যারেন্টস কমিটিগুলো কতটুকু দায়িত্ব পালন করে তা নিয়ে প্রশ্ন আছে। ম্যানেজিং কমিটিগুলোকে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখতে হবে। শুধুমাত্র জিপিএ ৫ অর্জন করলে হবে না, তাদের পড়াশোনায়, দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে নিজেদের তৈরি করতে হবে। স্বাস্থ্য খাতে দুর্নীতির কথা তুলে ধরে

ইকবাল মাহমুদ বলেন, বিভাগীয় শহর ছাড়া ডাক্তাররা গ্রামের হাসপাতালে যেতে চান না। একটু কষ্ট হলেও দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে ডাক্তারদের নিজ নিজ কর্মস্থলে থাকার আহবান জানান তিনি। দুদক চেয়ারম্যান বলেন, আপনারা চাপের কাছে মাথা নত করবেন না, সে যত বড় চাপওয়ালাই হোক। কারো চাপে পড়ে আপনারা অনৈতিক কোনো কাজে জড়াবেন না। চাপ মানে মাথা নত করা। দুদকের চাপের মতো কোনও চাপ নেই। এই চাপ সহ্য করার মতো ক্ষমতা কারও নেই। দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত থাকলে কেউ রেহাই পাবে না।

ইতোমধ্যে দুদকের একজন পরিচালককে দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়ায় বরখাস্ত করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ যে কেউ হোক-তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ করার পরামর্শ দেন তিনি। পুলিশ প্রশাসনকে উদ্দেশ্য করে দুদক চেয়ারম্যান বলেন, ‘উল্টো পথে গাড়ি চালাতে দিবেন না। সড়কে যে যানজট হয়, সেটি উল্টো পথে আসা গাড়ির জন্যই হয়। তাই উল্টো পথে আসা গাড়িকে এমনভাবে ধরবেন, যাতে আর কেউ জীবনে উল্টো পথে গাড়ি চালানোর সাহস না পান। ট্রাফিক রুল না মানলে আপনারা ছবি তুলে পাঠিয়ে দিন।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি গোলাম ফারুক, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মাহবুবুর রহমান,চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক ইলিয়াস হোসেন, অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার শংকর রঞ্জন শাহা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে উপ-উপাচার্য অধ্যাপক শিরিন আখতারসহ বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রধানরা উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.