চট্টগ্রামের ৮ টি চেম্বারের নের্তৃবৃন্দ শেখ ফজলে করিমকে সমর্থন দিয়েছে

0

কারেন্ট টাইমসঃ  দেশের ভারসাম্যপূর্ণ উন্নয়ন প্রক্রিয়া অব্যাহত রাখতে এবং বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বিপুল সম্ভাবনা কাজে লাগাতে এ অঞ্চলে ব্যাপক শিল্পায়নের ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন ব্যবসায়ী নেতারা। সুষ্ঠুভাবে ব্যবসা কার্যক্রম পরিচালনার জন্য ব্যাংক ঋণের সুদের হার একক অংকে নামিয়ে আনারও দাবি জানিয়েছেন তারা। এছাড়াও ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম অঞ্চলের পর্যটন শিল্প এবং চট্টগ্রাম বন্দরের সক্ষমতা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন। নারী উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় সহায়তা এবং পাবর্ত্য জেলাগুলোর অর্থনৈতিক উন্নয়নের ওপরও তারা গুরুত্ব দিয়েছেন।

আজ সোমবার (১৮ ফেব্রুয়ারী) ব্যবসায়িদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সাথে বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ৮টি চেম্বারের এক সভায় এসব বক্তব্য উপস্থাপন করা হয়। এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিমের সভাপতিত্বে চট্টগ্রামের আগ্রাবাদ হোটেলে অনুষ্ঠিত এ সভায় এফবিসিসিআই পরিচালকবৃন্দ এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের চেম্বারগুলোর সভাপতিবৃন্দ অংশ নেন।

এফবিসিসিআই সিনিয়র সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম অনুষ্ঠানে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেন্টেশন দেন। শেখ ফাহিম তাঁর উপস্থাপনায় বলেন যে, সরকারের ৮ম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বিবেচনায় রেখে ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি উন্নত দেশে রূপান্তরের লক্ষ্যে দেশের বেসরকারি খাত কাজ করে যাচ্ছে। দেশের ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের নানা সমস্যা নিয়ে আলোচনার জন্য এফবিসিসিআই সারা দেশের চেম্বারগুলোর সাথে আলোচনার এ উদ্যোগ নিয়েছে বলে তিনি জানান।

জনাব ফাহিম বর্তমান সরকারের ভিশন ২০৪১ অনুসরণে এফবিসিসিআইয়ের ভিশন ২০৪১-এর উল্লেখ করে বলেন বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নানা বিষয়ে নীতিগত সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যে ‘এফবিসিসিআই ইন্সটিটিউট ফর ইকনোমিক পলিসি প্ল্যানিং এন্ড ডিজাইন’ প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে। এছাড়াও শেখ ফাহিম খুব শীঘ্রই ‘এফবিসিসিআই বিশ্ববিদ্যালয়’ প্রতিষ্ঠার কথা জানান, যেখানে বিজ্ঞান এবং প্রযুক্তিকে গুরুত্ব দিয়ে শিক্ষাকাঠামো তৈরি করা হবে। জনাব ফাহিম বলেন এফবিসিসিআইয়ের উদ্যোগে প্রকৌশল ও কারিগরি প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরির লক্ষ্যে ‘এফবিসিসিআই ইনস্টিটিউট’ প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়া চলছে। শেখ ফাহিম জানান যে, পূর্বাচলে সরকারের দেয়া ১ একর জমির ওপর ‘এফবিসিসিআই আইকন’ ভবন নির্মাণ করা হবে, যেখান থেকে আগামী দিনের এফবিসিসিআই দেশের ব্যবসায়ি সম্প্রদায়ের নেতৃত্ব দেবে। এছাড়াও এফবিসিসিআই সভাপতি বাণিজ্যিক সবধরনের বিরোধ নিস্পত্তির জন্য ‘এফবিসিসিআই আর্বিট্রেশন সেন্টার’ প্রতিষ্ঠার কথা উল্লেখ করেন।

অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম অঞ্চলের চেম্বারগুলোর সভাপতিবৃন্দ বক্তব্য রাখেন। শেখ ফজলে ফাহিম-এর বিগত বছরগুলোর সৎ, দূরদর্শী, বিচক্ষণ ও দায়িত্বপূর্ন ভূমিকার কারনে চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল চেম্বারের পক্ষ থেকে দল মত নির্বিশেষে এফবিসিসিআইয়ের আগামী ২০১৯-২০২১ মেয়াদকালের নির্বাচনে শেখ ফজলে ফাহিমকে সভাপতি পদে পূর্ণ সমর্থন ব্যক্ত করা হয়। উল্লেখ্য যে, এবছর এফবিসিসিআই সভাপতি চেম্বার গ্রুপ থেকে নির্বাচিত হবেন।

এফবিসিসিআই এর সাবেক প্রথম সহ-সভাপতি এবং চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সভাপতি মিসেস মনোয়ারা হাকিম আলী বলেন, দেশের সকল চেম্বারসমূহের উন্নয়নে নতুন নেতৃত্ব গড়ে উঠা প্রয়োজন। শেখ ফজলে ফাহিম আগামী দিনে এফবিসিসিআই এর ভবিষ্যৎ সভাপতি হিসেবে চেম্বারসমূহের সক্ষমতা উন্নয়নের পাশাপাশি দেশের বেসরকারি খাতের সার্বিক উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা রাখবেন বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন এবং শেখ ফজলে ফাহিমকে পূর্ণ সমর্থন জানান। মিসেস মনোয়ারা দেশের নারী উদ্যোক্তাদের জন্য একটি ‘বিশেষায়িত ব্যাংক’ প্রতিষ্ঠা, নারী উদ্যোক্তাদের সহায়তায় একটি শিল্প পার্ক স্থাপন এবং নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ডাটা ব্যাংক প্রতিষ্ঠার আহবান জানান।

এফবিসিসিআই এর সাবেক সহ-সভাপতি ও চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি জনাব মাহবুবুল আলম বলেন, দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়ার জন্য একজন যোগ্য নেতৃত্বগুণসম্পন্ন ব্যবসায়ী নেতা হিসেবে দেশের শীর্ষ ব্যবসায়ী সংগঠন এফবিসিসিআইতে শেখ ফজলে ফাহিম আগামী দিনের নেতৃত্ব পেতে যাচ্ছেন। চট্টগ্রাম চেম্বার এবং চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে তিনি শেখ ফজলে ফাহিমকে ঐক্যবদ্ধভাবে সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং তাঁর নেতৃত্বে এফবিসিসিআই একটি সুনির্দিষ্ট ভিশন নিয়ে কাজ করে যাবে বলে আশা প্রকাশ করেন।

চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন চেম্বারের সভাপতি জনাব খলিলুর রহমান বলেন, ব্যবসায়ী নীতিমালা প্রণয়নে ব্যবসায়ীদের মতামতকে গুরুত্বের সাথে বিবেচনা করতে হবে। তিনি বলেন, ব্যবসা-বান্ধব রাজস্ব ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করতে হবে, যাতে ব্যবসায়ীরা রাজস্ব প্রদানে আগ্রহী হন। শেখ ফজলে ফাহিম এর নেতৃত্বে এফবিসিসিআই বেসরকারি খাতের উন্নয়নে আরো বেশী কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

কক্সবাজার চেম্বারের সভাপতি জনাব আবু মোর্শেদ চৌধুরী বলেন, চট্টগ্রাম অঞ্চলের বহুমাত্রিক পর্যটন উন্নয়নে সরকার কাজ করছে ; এ কার্যক্রমকে আরো বেশী জোরালো করা প্রয়োজন। এ অঞ্চলের পর্যটন শিল্পের উন্নয়নে ভর্তুকি দেওয়া প্রয়োজন। এ অঞ্চলের ব্লু-ইকোনোমিকে প্রসারিত করতে উদ্যোগ নেওয়ার জন্য তিনি আহ্বান জানান। এছাড়াও তিনি এসএমই খাতকে ব্যাংকিং সহযোগিতা করতে বেসরকারি খাতের ব্যাংকগুলোকে অনুরোধ জানান।

খাগড়াছড়ি চেম্বারের সভাপতি জনাব কংজরী চৌধুরী পার্বত্য অঞ্চলের সম্পদকে কাজে লাগানোর ব্যাপারে গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি বলেন পার্বত্য অঞ্চলে পর্যটন শিল্পের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে। এই অঞ্চলের প্রান্তিক চাষীদের দিকে নজর দেওয়ার মাধ্যমে কৃষি প্রক্রিয়াজাত শিল্পের প্রসার ঘটানো যেতে পারে বলে তিনি উল্লেখ করেন।

রাঙ্গামাটি চেম্বার সভাপতি জনাব বেলায়েত হোসেন ভূঁইয়া বলেন, রাঙ্গামাটি লেকের বহুবিধ ব্যবহার নিশ্চিত করার মাধ্যমে এ জেলার পর্যটন শিল্পের প্রসার করা যেতে পারে। এই জেলায় ধর্মীয় (ৎবষরমরড়ঁং) এবং চিত্তবিকাশ – উভয় খাতের পর্যটন শিল্পের সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়াও তিনি উল্লেখ করেন, পাশ্ববর্তী ভারতের সাথে রাঙ্গামাটি জেলার ঠেকামুখ স্থলবন্দরকে অপারেশনাল করা হলে এই অঞ্চলের অর্থনীনৈতিক কার্যক্রম বৃদ্ধি পাবে এবং সরকারের রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পাবে।

চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সিনিয়র সহ-সভাপতি মিসেস আবিদা মোস্তফা নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে প্রশিক্ষণ কর্মসূচিসহ ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।

বান্দরবান উইমেন চেম্বার অব কমার্সের সভাপতি মিসেস লালছানী লুসাই বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের উন্নয়নে নীতিগত সহায়তা প্রদান করতে হবে। বিদেশ সফরে এফবিসিসিআই এর প্রতিনিধি দলে নারী উদ্যোক্তাদরে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান।

চট্টগ্রাম উইমেন চেম্বারের সহ-সভাপতি ডা. মুনাল মাহবুব বলেন, নারী উদ্যোক্তাদের ব্যাংক ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে গ্রেস প্রিরিয়ড বাড়ানো প্রয়োজন। পরিবেশের কথা বিবেচনায় রেখে তিনি রিসাইক্লিং শিল্পের উপর গুরুত্ব দেওয়ার অনুরোধ জানান।

নাসিব এর সভাপতি জনাব নুরুল গণী শোভন আশাবাদ ব্যক্ত করেন যে, জনাব শেখ ফজলে ফাহিম এর নেতৃত্বে আগামী দিনে এফবিসিসিআই ব্যবসা-বান্ধব পরিবেশ নিশ্চিত করতে আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। তিনি ইনফরমাল সেক্টরের দক্ষতা উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ এবং এসএমই খাতে ব্যাংকিং সুবিধা নিশ্চিত করার উপর জোর দেন।

বান্দরবান চেম্বার অব কমার্সের সহ-সভাপতি মি. লক্ষীপদ বলেন, দেশের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নে পার্বত্য জেলাগুলোর সম্পদ ও সম্ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে হবে।

চট্টগ্রাম চেম্বারের প্রাক্তন পরিচালক জনাব মাহফুজুল হক শাহ্ দেশের সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়নে যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। তিনি এফবিসিসিআইয়ের প্রতিনিধিদল বিদেশ সফরের সময় সংশ্লিষ্ট সকল খাতের অংশগ্রহন নিশ্চিত করার অনুরোধ জানান।

বাংলাদেশ শিপিং এজেন্ট এসোসিয়েশনের পরিচালক জনাব ওসমান গণি ব্যাংক ঋণের সুদের হার একক অংকে নামিয়ে আনতে বেসরকারি ব্যাংকসমূহের পরিচালনা ব্যয় হ্রাস করার ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করেন।

অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে এফবিসিসিআই পরিচালক আলহাজ্ব মোঃ বজলুর রহমান, মিসেস হাসিনা নেওয়াজ, জনাব মোঃ কোহিনুর ইসলাম, জনাব মোঃ আনোয়ার সাদাত সরকার, মি. প্রবীর কুমার সাহা, জনাব মোঃ রেজাউল করিম রেজনু, সিআইপি, জনাব তাবারুকুল তোসাদ্দেক হোসেন খান টিটু, জনাব মাসুদ পারভেজ খান (ইমরান), জনাব মোঃ নিজাম উদ্দিন, আলহাজ্ব আজিজুল হক, মি. সজীব রঞ্জন দাসও চট্টগ্রাম অঞ্চলের সকল চেম্বারের প্রতিনিধিবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.