ফেসবুকে পরিচয় বিয়ে অতপর খুনঃ খুনী স্ত্রী আটক

0

কারেন্ট টাইমসঃ  চারদিন আগে (১৭ ফেব্রুয়ারী) পাহাড়তলীতে এক যুবকের গলাকাটা লাশ উদ্ধারের ঘটনায় বগুড়া থেকে তার দ্বিতীয় স্ত্রীকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ জানিয়েছে, প্রথম স্ত্রীর কথা গোপন এবং একাধিক নারীর সঙ্গে সম্পর্ক থাকায় ক্ষোভ থেকে আশা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। বাড়ির মালিক বলেন, কয়েক দিন আগে স্বামী-স্ত্রী পরিচয়ে এক নারীসহ সেখানে একটি সেমিপাকা বাসা ভাড়া নেয় ওই যুবক। শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারী) সকাল ১১টার দিকে তারা বাসায় ওঠেন। বিকেলেই স্বামীকে গলা কেটে হত্যা করে। ওই নারী পলাতক থাকায় নিহতের পরিচয় জানা যায়নি বলে জানান তিনি।

আজ বুধবার সকালে মোছাম্মৎ আশা আক্তার (২৩) নামের ওই নারীকে বগুড়া থেকে গ্রেপ্তারের পর চট্টগ্রাম নিয়ে আসা হয়।আশা বগুড়া সদর উপজেলার ঠনঠনিয়া পাড়ার বাসিন্দা।

হত্যাকাণ্ডের তদন্তে নেমে একটি মোবাইল ফোনকলের সূত্র ধরে নিহত যুবকের পরিচয় উদঘাটনের পাশাপাশি তার দ্বিতীয় স্ত্রী আশা আক্তারেরও খোঁজ পায় পুলিশ। নিহত যুবকের নাম মো. শামীম। পেশায় বাবুর্চি শামীমের বাড়ি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগরে; থাকতেন চট্টগ্রামের খুলশী ঢেবার পাড় এলাকায়। বছর খানেক আগে ফেইসবুকে পরিচয়ের সূত্রে আশাকে বিয়ে করেন তিনি।

হত্যাকাণ্ডের পর আশা শামীমের মোবাইল সেটও নিয়ে যায়। পরে সেটি ঢাকার রাস্তায় ফেলে দেয়। শামীম যে বাসায় খুন হয় সেটি ভাড়া নেওয়ার সময় বাড়িওয়ালার মেয়েকে ফোন করেছিল। সেই ফোনকলের সূত্র ধরে আমরা তার পরিবার ও আশার সন্ধান পেতে কাজ শুরু করি। পরিচয় নিশ্চিত হওয়ার পর বগুড়ায় গিয়ে মঙ্গলবার আশার কর্মস্থল থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা হয়।

আশা জানিয়েছে বিয়ের মাস ছয়েক পর আশা জানতে পারে শামীমের আগের স্ত্রী আছে। সেখানে তার দুইটি সন্তানও আছে। আশার দাবি, শামীমের সাথে আরও একাধিক নারীর সম্পর্ক ছিল। তাদের সাথে তোলা বিভিন্ন ‘অন্তরঙ্গ ছবি’ শামীম নিজেই আশার কাছে পাঠাত।”

আজ বুধবার (২ে০ ফেব্রুয়ারী) চট্টগ্রাম নগর পুলিশ কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলন করে অতিরিক্ত উপ-কমিশনার কুসুম দেওয়ান হত্যাকাণ্ডের বিস্তারিত তুলে ধরেন।

তিনি বলেন, শামীম তার আগে স্ত্রী ও দুই সন্তান থাকার কথা গোপন করে বগুড়ায় গিয়ে আশাকে বিয়ে করে। বিয়ের পর শামীমের স্থায়ীভাবে বগুড়ায় থাকার কথা থাকলেও প্রায়ই চট্টগ্রাম চলে আসতেন। জিজ্ঞাসাবাদে আশা জানিয়েছে, শামীমকে বগুড়ায় থাকার জন্য এনজিও থেকে ৬৫ হাজার টাকা ঋণ করে একটি ইজি বাইকও কিনে দিয়েছিল। তার আগেও শামীম আশার কাছ থেকে ৩০ হাজার টাকা নিয়েছিল।

তবে বিভিন্ন সময়ে শামীম বগুড়া গেলেও কয়েকদিন থেকে চট্টগ্রামে চলে আসত। ইজি বাইক না চালানোর কারণে শামীমের জন্য আশা চাকরিও ঠিক করেছিল বলে জানিয়েছে। পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এতকিছু করার পরও স্বামীকে নিজের করে না পাওয়ায় ও একাধিক নারীর সাথে মেলামেশার ক্ষোভ থেকে শামীমকে খুন করে আশা।

আশার কাছ থেকে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, হত্যাকাণ্ডের দুইদিন আগে শামীম বাসাটি ঠিক করে আশাকে আনতে বগুড়া যান। ১৬ ফেব্রুয়ারি সকালে আশাকে নিয়ে চট্টগ্রাম এসে নতুন বাসায় ওঠেন। বাসায় ওঠার পর শামীম ঘুমিয়ে পড়লে আশা তার গলায় ছুরি চালিয়ে হত্যা করে আবার বগুড়া চলে যায়, বলেন পুলিশ কর্মকর্তা জানান কুসুম দেওয়ান। বগুড়া থেকে আসার সময়ই আশা ছুরি কিনে এনেছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন।

আশা আক্তার জানায়, গত এক বছর আগে শামীম এর সাথে ফেইসবুকের মাধ্যমে পরিচয় হয়। উক্ত পরিচয়ের মাধ্যমে তাদের মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠে। একপর্যায়ে তারা উভয় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বিবাহের পর আসামী জানতে পারে যে, তার স্বামী পূর্বে আরও একটি বিবাহ করেছে। উক্ত সংসারে দুইটি ছেলে সন্তান রয়েছে। আশা আক্তার তার স্বামী শামীম’কে একান্ত নিজের করে না পাওয়ার বেদনা, দুই সংসারের টানা পোড়েন এবং আরো একাধিক মেয়ের সাথে শামীমের মেলামেশা সহ্য করতে পারছিলেন না আশা। তাকে কয়েকবার বারণও করেছিলেন। কিন্তু সে এগুলো ছাড়িনি। তাই সে শামীমকে হত্যা করার জন্য পরিকল্পনা করে। উক্ত পরিকল্পনা মোতাবেক বগুড়া সদরের রেল লাইনের খোলা বাজার থেকে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত ধারালো ছুরি ক্রয় করে। পরে মোঃ শামীম এর সাথে চট্টগ্রামে এসে পাহাড়তলী থানাধীন আব্দুল আলী নগরস্থ নেছারিয়া মাদ্রাসার সামনে মরহুম ইউসুফ মিয়ার বাড়ির ৩নং ঘর ভাড়া নিয়ে ১৬ ফেব্রুয়ারী সকাল ৭টার সময় উঠে। কিছুক্ষণ পর ক্লান্ত হয়ে শামীম ঘুমিয়ে পড়ে। এ সুযোগে আশা আক্তার তার সাথে থাকা ধারালো ছুরি দিয়ে জবাই করে তার স্বামী শামীম’কে নৃশংস ভাবে হত্যা করে ঘর তালাবদ্ধ করে বেরিয়ে যায়। পরে আশা সোজা বগুড়া চলে যায়।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.