জন্ম নিবন্ধন,সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে নারী লোভী অপু’র ভুঁয়া শিক্ষকতা

0

শহিদুল ইসলাম, কক্সবাজার : কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার রাজাপালং ইউনিয়নের স্বনামধন্য টাইপালং হামিদিয়া দারুসুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটি ও সুপার মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে ভুঁয়া জন্ম নিবন্ধন, শিক্ষাগত যোগ্যতা ও শিক্ষক নিবন্ধন সনদ সহ একাধিক তথ্য জালিয়াতির মাধ্যমে বিএসসি শিক্ষক পদে ভুঁয়া শিক্ষক নারী লোভী অপুর্ব আহমেদ অপু কে নিয়োগ বাণিজ্যের গুরুতর অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত কয়দিন ধরে ঐ শিক্ষকের ব্যাপারে তথ্য প্রমাণ নিয়ে তার কর্মস্থলে তাকে খোঁজে পাওয়া যায়নি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, পার্বত্য বান্দরবান জেলার বালাঘাটার স্থায়ী বাসিন্দা ফরেষ্ট ডিপার্টমেন্টের কর্মচারী স্বপন বড়ুয়ার পুত্র নারী লোভী সুদর্শন বড়ুয়া ওরফে অপু এসএসসির পাশের পর বান্দরবান বিলকিছ বেগম উচ্চ বিদ্যালয়ে খন্ডকালীন শিক্ষকতা করেন। ওই সময় উক্ত বিদ্যালয়ের ছাত্রীর সাথে অবৈধ যৌন কেলেঙ্কারীর দায়ে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিগণ ও বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটি তাকে বরখাস্ত করে এবং শাস্তিমূলক মাথা ন্যাড়া করে দেয় বলে সূত্র নিশ্চিত করে।জন্ম নিবন্ধন,সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে নারী লোভী অপু’র ভুঁয়া শিক্ষকতা

উক্ত ঘটনার ফলে তার পিতা স্বপন বড়ুয়া তাকে মৌখিক ভাবে ত্যাজাপুত্র ঘোষণা করেন বলে জানা যায়। পরবর্তীতে উখিয়া উপজেলার পশ্চিম রত্না গ্রামের জনৈক ব্যক্তির সাথে তার বোনের বিবাহ সূত্রে স্থান নেয় পশ্চিমরত্না গ্রামের বোনের শ্বশুর বাড়ীতে। এ সুবাধে নারী লোভী, প্রতারক সুদর্শন বড়ুয়া ওরফে অপু একই গ্রামের পার্শ্ববর্তী মৃত মকবুল আহমদ মিস্ত্রীর কন্যা ছেনুয়ারা বেগমের সাথে অনৈতিক সম্পর্ক করে পালিয়ে বিয়ে করে। পরবর্তীতে তার সাথেও প্রতারণা করে অসহায় ছেনুয়ারাকে ফেলে অন্যত্র পালিয়ে যায় এবং পরিচয় গোপন করে উখিয়ায় উপজেলার জালিয়াপালং ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ভুঁয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ ইস্যু করে।

নিবন্ধন তারিখ- ২১/১১/২০১৩ইং, বহি নং-২২, পরিচিতি নং- ১৯৮৬২২১৯৪৩১১৪৭৮৬২, নাম- মোহাম্মদ অপু, পিতা- দিদার হোসেন, মাতা- খদিজা বেগম, সাং- সোনারপাড়া, জালিয়াপালং, উপজেলা-উখিয়া, জেলা- কক্সবাজার। ভুঁয়া পরিচয় দিয়ে দীর্ঘদিন সোনারপাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয় ও জালিয়াপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করাকালীন উক্ত প্রতিষ্ঠানে শূন্যপদে তাকে স্থায়ী ভাবে নিয়োগ করার জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্রাদি দাখিল করতে বলা হলে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সাথে অসদাচারণ সহ অফিস সহকারী হোছন আহমদকে চেয়ার ছুড়ে মেরে গুরুতর আহত করে বিদ্যালয় ত্যাগ করে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, পশ্চিম রত্না গ্রামের পিতৃহীন অসহায় ছেনুয়ারা বেগমের সাথে প্রতারণা পরবর্তী নারীলোভী প্রতারক ও সনদ জালিয়তকারী অপু জালিয়াপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে শিক্ষকতাকালীন অপূর্ব আহমেদ নামে পরিচয় দেন এবং নতুন করে প্রতারণা ফাঁদে ফেলে ২০/১১/২০১৩ইং তারিখ ভুঁয়া জন্ম নিবন্ধন সনদ জাল করে নিজেকে জালিয়াপালং ইউনিয়নের সোনারপাড়া গ্রামের দিদার হোসেনের পুত্র মোহাম্মদ অপু হিসেবে পরিচয় দিয়ে উখিয়া উপজেলার পশ্চিম ডিগলিয়া ওয়ালাপালং গ্রামের আবুল হাশেমের কন্যা রোজিনা আকতারের সাথে ৮২২/১৩ইং বালাম নং- ০৯, পৃষ্টা-৭২ মূলে নিকাহ্নামা সম্পাদন পূর্বক পুন: বিবাহ করে।জন্ম নিবন্ধন,সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে নারী লোভী অপু’র ভুঁয়া শিক্ষকতা

প্রতারক অপু এতে ক্ষান্ত নয় ! সম্প্রতি তার মেঝ ভাই নিদর্শন বড়ুয়ার বিয়ের পূর্ববর্তী বান্দরবান বালাঘাটা গ্রামে অবস্থানরত তার মাকে পুনরায় বিয়ে করার জন্য পাত্রী পছন্দ করার কথাও বলেছে বলে সুত্র নিশ্চিত করে। একাধিক সময় ভিন্ন ভিন্ন পরিচয়দানকারী মোহাম্মদ অপু রাজাপালং এম.ইউ ফাজিল মাদ্রাসায়ও অস্থায়ী ভিত্তিতে শিক্ষকতায় নিয়োজিত হলে পরবর্তীতে নিজের যোগ্যতা ও সঠিক পরিচয় দানে ব্যর্থ হওয়ায় প্রতিষ্ঠান ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। ওই সময় উক্ত প্রতিষ্ঠানের জনৈক কর্মচারীর হাত ধরে সর্বশেষ বি.এস.সি শিক্ষক হিসেবে অবস্থান নেয় টাইপালং হামিদিয়া দারুসুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসায়।

এ সময় মাদ্রাসা প্রধান মাও: আব্দুর রহিম, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি জাফর আলম ভুলু ও অপরাপর সদস্যদের মোটা অংকের উৎকোচের বিনিময়ে স্থায়ী ভাবে নিয়োগের জন্য গত ১৭/০৫/২০১৫ইং তারিখ, রবিবার, সকাল ১১টার সময় কক্সবাজার জেলা শিক্ষা অফিসে যথারীতি পরীক্ষা শেষে এমপিও ভুক্তির জন্য ফাইল প্রেরণ করা হয়। তার শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদ ও শিক্ষক নিবন্ধন সনদের মিল না থাকায় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফাইল আটক করে রাখে। পরবর্তীতে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তার রহস্যজনক ভুমিকা নিয়ে ভুঁয়া বি.এস.সি শিক্ষক অপুর এমপিও ভুক্তির জন্য ফাইল প্রেরণ করেন। যা পরবর্তীতে অনলাইনে তথ্যের একাধিক অমিল থাকায় ১৬/০৮/২০১৫ইং তারিখ উক্ত ফাইল ফেরত পাঠিয়ে দেয়। নিজেকে মোহাম্মদ অপু পরিচয়ে বি.এস.সি শিক্ষক হিসেবে দাবী করলেও তার শিক্ষাগত যোগ্যতা সনদে দেখা যায়, অপর এক ব্যক্তির পরিচয় যার নাম পূর্ণেন্দু বড়ুয়া, পিতা- অরুণ বড়ুয়া, যার এস.এস.সি পাশের সন- ২০০১, রোল নং- ১১৯২৬৭, শাখা- বিজ্ঞান, বিদ্যালয়ের নাম- বান্দরবান সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়।জন্ম নিবন্ধন,সার্টিফিকেট জালিয়াতি করে নারী লোভী অপু’র ভুঁয়া শিক্ষকতা

অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, জালিয়াপালং উচ্চ বিদ্যালয়ে চাকুরীকালীন সহকারী কুররাতুল আইন লাকীর শিক্ষক নিবন্ধন সনদ জালিয়াতি করে মাদ্রাসার কর্তৃপক্ষের সহযোগিতায় স্থায়ী এমপিও ভুক্তির অপচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ ব্যাপারে মাদ্রাসা সুপার মাও: আবদুর রহিম বলেন, তিনি বিধি মোতাবেক পত্রিকায় নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের মাধ্যমে শূন্যপদে বি.এস.সি শিক্ষক নিয়োগের দরখাস্ত আহবান করেন এবং যথাযথ পরীক্ষায় অংশ নিয়ে এমপিও ভুক্তির জন্য ফাইল প্রেরণ করা হলে মাউশি’র নিয়ম অনুযায়ী নির্ধারিত তারিখে ফাইল না পৌছাতে ব্যর্থ হওয়ায় পরবর্তীতে হবে বলে জানান এছাড়া সনদ জালিয়াতির বিষয়ে তিনি কিছুই অবগত নন জানান। নিয়োগে অনিয়ম, সনদ জালিয়াতি ও এমপিও ভুক্তির জন্য মাউশি তে ফাইল প্রেরণের বিষয়ে কিছুই জানেন না বলে জানান উখিয়া উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা রায়হানুল ইসলাম মিয়া।

জীবনের এসব প্রতারণা, অপকর্ম ও সনদ জালিয়াতির বিষয়ে মোহাম্মদ অপুর সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। জীবনের শুরু থেকে প্রতারণাকারী বান্দরবান বালাঘাটার নারী লোভী সুদর্শন বড়ুয়া বিভিন্ন সময় একাধিক নামে (মোহাম্মদ অপু, অপূর্ব আহমেদ অপু, পূর্ণেন্দু বড়ুয়া) পরিচয় দিয়ে সর্বশেষ টাইপালং হামিদিয়া দারুসুন্নাহ দাখিল মাদ্রাসায় আশ্রয় নিয়ে কোমলমতি শিক্ষার্থীদের সাথেও স্থায়ী প্রতারণা অব্যাহত রাখলে তার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না বলে এমন অভিযোগ খোদ শিক্ষার্থীদের। তার এহেন দূর্নীতি ও প্রতারণা মূলক কর্মকান্ড নিয়ে তদন্তপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবী জানান সচেতনমহল।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.