মোহাম্মদপুরে জঙ্গি আস্তানায় অভিযান সমাপ্ত ঘোষনা
সিটি নিউজ ডেস্কঃ র্যাক জানিয়েছেন, রাজধানী ঢাকার মোহাম্মদপুরের বছিলায় জঙ্গি আস্তানার অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
আজ সোমবার (২৯ এপ্রিল) বিকেল ৪টা দিকে এ অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়। অভিযানে নিহত দুই জঙ্গির মরদেহ উদ্ধার করে সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে।
র্যাব-২ এর কোম্পানি কমান্ডার (এসপি) মহিউদ্দিন ফারুকী এসব তথ্য জানিয়েছেন। তিনি জানান, আস্তানা থেকে আলামত সংগ্রহ ও মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়া র্যাব সদস্যা ওই আস্তানা কর্টন করে রেখেছে।
অভিযান শেষে ঘটনাস্থলে সাংবাদিকদের র্যাব-২ এর অধিনায়ক (সিও) লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ বলেন, বিকেল ৪টায় (সোমবার) অভিযান সমাপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। এর আগে ঘটনাস্থলে ফরেনসিক বিভাগের কর্মকর্তা, সিআইডি কর্মকর্তারা কাজ করেছেন। ঘটনাস্থল থেকে ৩টা বিদেশি পিস্তল, অবিস্ফোরিত ৪টি ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইস (আইইডি) উদ্ধার করে নিষ্ক্রীয় করা হয়েছে।
এর আগে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গি আস্তানায় কমপক্ষে দু’জন নিহত হয়েছে। তিনটি পা দেখা গেছে। এখনও আস্তানায় আগুনে জ্বলছে।
কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম বলেন, র্যাবের অভিযানে সম্ভাব্য দুই জঙ্গি নিহত হয়েছেন। তারা মাত্র ১৫০০ টাকায় টিনশেডের ঘরটি ভাড়া নেন। সেখানে কেয়ারটেকার সোহাগ স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন। তারা (সম্ভাব্য দুই জঙ্গি) ঘর ভাড়া নেয়ার যে ফরম আছে সেটা পূরণ করেননি এবং তাদের বিষয়ে তেমন কোনো তথ্য কেয়ারটেকার সোহাগের কাছেও নেই। ঘর ভাড়া নেয়ার সময় তাদের একজন পেশায় বেসরকারি চাকরিজীবী এবং অন্যজন ভ্যানগাড়ির চালক হিসেবে পরিচয় দেন।
কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম আরও বলেন, আমরা বাড়ির মালিক আব্দুল ওহাবের সঙ্গে মোবাইল ফোনে কথা বলেছি। তিনিও জানিয়েছেন, ঘর ভাড়া নেয়া দু’জনের একজন ভ্যানগাড়ির চালক বলে পরিচয় দেন। তারা তাদের নাম বলেন সুজন ও সুমন।
প্রসঙ্গত, জঙ্গি আস্তানা রয়েছে -এমন সন্দেহে রোববার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে মোহাম্মদপুর বছিলার মেট্রো হাউজিং এলাকায় অভিযান শুরু করে র্যাব সদস্যরা। র্যাবের উপস্থিতি টের পেয়ে জঙ্গিরা সেখানে বিস্ফোরণ ঘটায়। ভোর ৫টার দিকে বড় ধরনের বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।
পরে আস্তানাটি ঘেরাওয়ের পর কেয়ারটেকারসহ তিনজনকে আটক করেন র্যাব সদস্যরা। সোমবার সকাল ৯টার দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট পরে জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা বাড়িটিতে যায় র্যাবের বম্ব ডিসপোজাল দল। তারা সেখানে ছিন্ন-ভিন্ন দেহ ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকতে দেখেন।
এদিকে অভিযানস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে র্যাবের মহাপরিচালক (ডিজি) বেনজীর আহমেদ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, সন্দেহভাজনদের মরদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে।
তিনি বলেন, ‘জঙ্গি আস্তানা’য় বিস্ফোরণে সেখানে থাকা সন্দেহভাজনদের মরদেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে। আস্তানায় তিনটি পায়ের চিহ্ন পাওয়া গেছে। সে হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ২ জনের মরদেহ রয়েছে। আজ দুপুরে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান র্যাব মহাপরিচালক।
তিনি বলেন, সুনির্দিষ্ট গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে রাত সাড়ে তিনটা থেকে র্যাব জঙ্গি আস্তানায় অভিযান চালায়। প্রথমে র্যাব সদস্যরা তাদের দরজায় নক করলে দরজা খুলেনি। এরপর বাসার ভেতর থেকে র্যাব সদস্যদের লক্ষ্য করে গুলি ছোঁড়ে। র্যাবও আত্মরক্ষার্থে প্রায় ১৫০ রাউন্ড গুলি ছুঁড়ে। এর মধ্যেই ভেতর থেকে ব্যপক বিস্ফোরণ ঘটায়।
ভেতরে কতোজন নিহত সঠিক বলা যাচ্ছে না, কারণ বিস্ফোরণে সব লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। তিনটা পায়ের নমুনা দেখা গেছে, সে হিসেবে ধারণা করা হচ্ছে, অন্তত ২ জন নিহত হয়েছেন। বোম্প ডিসপোজাল ইউনিট বাসাটিতে তল্লাশি চালাচ্ছে, পরিস্কার করতে সময় লাগবে।
জঙ্গি বিরোধী অভিযানটি র্যাবের ধারবাহিক কার্যক্রম। দেশের সর্বশেষ জঙ্গি নিয়ন্ত্রণ না হওয়া পর্যন্ত এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে বলেও জানান তিনি।
যারা জঙ্গিবাদের দিকে ঝুঁকে পড়েছে সবাইকে ফিরে আসার আহ্বানও জানিয়ে তিনি বলেন, কেউ জঙ্গিবাদের আহ্বান জানালে বিষয়টি সঙ্গে সঙ্গে আমাদের জানাবেন।
ভেতরে অবস্থান করা জঙ্গিরা কোন সংগঠনের জানতে চাইলে তিনি বলেন, তারা কোন সংগঠনের প্রাথমিকভাবে নিশ্চিত নই। তাদের পরিচয়ও এখনো জানা যায়নি, এ বিষয়ে পরে জানানো হবে।
এর আগে বেলা সাড়ে ১০টার দিকে র্যাবের এডিজি (অপারেশন) কর্নেল জাহাঙ্গীর আলম পরিবর্তন ডটকমকে বলেন, ‘বিস্ফোরণে জঙ্গিদের শরীর ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে বাসাটির ভেতরে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়েছে। আমাদের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ভেতরে সুইপিং করার সময় তা দেখতে পেয়েছে। কমপক্ষে একজনের মরদেহ পড়ে থাকতে দেখা গেছে। তবে নিহতের সংখ্যা বাড়তে পারে।’
তিনি আরো বলেন, ভেতরে অবিস্ফোরিত বোমা ও আইইডি দেখা গেছে। সেগুলো নিষ্ক্রিয করার চেষ্টা চলছে। বিস্ফোরণে টিনশেড ভবনের টিনের চাল ও টিনের বেড়া উড়ে গেছে। ভবনটির পেছনে খাল রয়েছে। খালের পাড়ে ঝোপ-জঙ্গল। সেখানেও উড়ে যাওয়া টিনের টুকরো ও শরীরের অঙ্গ দেখা গেছে।
এদিকে, জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে রাখা টিনশেড বাড়িতে বেলা পৌনে ১১টার দিকে আগুন জ্বলতে দেখা যায়। পরে ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়ি দেখা যায়।
এর আগে সোমবার ভোরে ওই বাড়িটি জঙ্গি আস্তানা সন্দেহে ঘিরে ফেলে র্যাব। সেখান থেকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য বাড়ির কেয়ারটেকারসহ তিনজনকে আটক করা হয়।
সে সময় র্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার মুফতি মাহমুদ খান জানান, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে আমরা জানতে পারি, বসিলার মেট্রো হাউজিং এলাকায় জঙ্গিরা অবস্থান করছে। এমন তথ্যের ভিত্তিতে এখানে অভিযান চালালে এখানকার একটি টিনশেড বাড়ির একটি কক্ষ থেকে বিস্ফোরণ ঘটানো হয়। এর পর ভেতর থেকে র্যাবকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়লে র্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। ভোর পৌনে ৫টার দিকে ওই বাসা থেকে বেশ বড় ধরনের একটি বিস্ফোরণ ঘটানো হয়েছে।