চট্টগ্রামের সরকারী দপ্তরে দুদক আতঙ্ক

0

সিটি নিউজঃ চট্টগ্রামে সরকারী ও শায়ত্বশাসিত প্রতিষ্টানের কর্মকর্তারা দুদকের আতঙ্কে আছেন। একই আতঙ্ক বিরাজ করছে পুলিশ বিভাগেও। সম্প্রতি ট্রাফিক বিভাগের তিনজন পরিদর্শকের অবৈধ সম্পদের খোঁজে দুদক মাঠে নামায় এ আতঙ্ক এখন ছড়িয়ে পড়েছে।

দুদক কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, জেলা ট্রাফিক পুলিশ পরিদর্শক মীর নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের প্রাথমিক সত্যতা পেয়েছে সংস্থাটি। সম্প্রতি এ কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ঢাকার প্রধান কার্যালয়ে অনুসন্ধান প্রতিবেদনও জমা দিয়েছে তদন্তকারী কর্মকর্তা। এ ছাড়া নগর ট্রাফিক বিভাগের সাবেক পরিদর্শক (বন্দর জোন) আবুল কাশেম চৌধুরী এবং এবিএম শাহাদাৎ হোসেন মজুমদারের বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের সত্যতা পেয়েছে দুদক।

দুদক চট্টগ্রাম সমন্বিত জেলা কার্যালয়-২ এর উপ-পরিচালক লুৎফর রহমান চন্দন বলেন, আমাদের কার্যালয়ে তিনজন ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নিয়ে অনুসন্ধান চলছে। এর মধ্যে ট্রাফিক ইন্সপেক্টর নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়েছে এবং মামলার অনুমতি চাওয়া হয়েছে। এ ছাড়া টিআই আবুল কাশেম চৌধুরী এবং এবিএম শাহাদাৎ হোসেন মজুমদারের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান চলছে।

দুদক উপ-সহকারী পরিচালক সৈয়দ মো: সোহেল বলেন, পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগ দুদকের কাছে আসে। বিভিন্ন পত্রপত্রিকায়ও অসাধু পুলিশ সদস্যের দুর্নীতি ও অনিয়ম নিয়ে রিপোর্ট ছাপা হয়। অভিযোগগুলো যাচাই বাছাই করা হয়। মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তাকারী হিসেবে অভিযোগ ওঠা নগর পুলিশের পাঁচজন ওসির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে এ কর্মকর্তা বলেন, অভিযোগ ওঠা পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দুদক নিজস্ব নিয়মে তদন্ত করে।

অভিযোগের সত্যতা পেলে ওই পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। এসআই পদমর্যাদার পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মাদক বেচাকেনায় জড়িত থাকার বেশি অভিযোগ পান বলে জানান তিনি। এদিকে মাদক কারবারে জড়িত অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। বছর খানেক আগে নগর পুলিশের পাঁচজন ওসির বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তার অভিযোগ ওঠায় দ্রুত তা অনুসন্ধানের জন্য চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারকে নির্দেশ দেন পুলিশ সদর দপ্তর।

অভিযোগ উঠা পুলিশ কর্মকর্তারা হলেন পাঁচলাইশ থানার সাবেক ওসি মহিউদ্দিন মাহমুদ, আকবর শাহ থানার সাবেক ওসি জসিম উদ্দিন, বন্দর থানার সাবেক ওসি ময়নুল ইসলাম, পতেঙ্গা থানার সাবেক ওসি আবুল কাশেম ভুঁইয়া এবং পাহাড়তলী থানার সাবেক ওসি মো: আলমগীর। এর মধ্যে ওসি আবুল কাশেম ভুঁইয়া এবং ময়নুল ইসলামের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ তদন্ত করে সম্প্রতি একটি প্রতিবেদন সিএমপি কমিশনারের কাছে জমা দিয়েছেন তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটির সভাপতি সিএমপির বন্দর জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার আরেফিন জুয়েল। তবে তদন্ত কমিটি ওই দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসায়ীদের সহায়তা করার অভিযোগের কোন প্রমান পায়নি বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে। এতে বলা হয়েছে, অভিযোগকারী কথিত জাহাজ ব্যবসায়ী নুরুল আবছার স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয়ের তালিকাভুক্ত পতেঙ্গা থানার ১ নম্বর মাদক ব্যবসায়ী।

দুদক জানিয়েছে, সিএমপির বিভিন্ন পদমর্যাদার অন্তত ১৮ জন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে জ্ঞাত আয়বহির্ভুত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ অনুসন্ধান করছে দুদকের একাধিক টিম। তারা নগর পুলিশের বিভিন্ন ইউনিটে ছদ্মবেশে ঘোরাফেরা করছেন। বিষয়টি আঁচ করতে পেরে অনেকেই ভুগছেন দুদক আতঙ্কে। নাম প্রকাশ না করে সিএমপি উপ কমিশনার পদমর্যাদার একজন কর্মকর্তা বলেন, অতি সম্প্রতি সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের ডিআইজি (প্রিজন) পার্থ গোপাল বণিক নিজ বাসা থেকে ৮০ লাখ টাকাসহ ধরা পড়ার পর সিএমপির পুলিশ কর্মকর্তারা আছেন দুদক আতঙ্কে।

অপরদিকে নগরীর বিভিন্ন আবাসিক হোটেল, গেষ্ট হাউজ, মাদকের আঁখড়া, জুয়ার আসর সহ অপরাধমুলক খাত থেকে পুলিশের নামে চাঁদাবাজি করা কথিত ক্যাশিয়ারদের খোঁজা হচ্ছে। গত এক মাসে খুলশী ও কোতোয়ালী থানায় ১৩টি হোটেল ও গেষ্ট হাউজ সিলগালা করা হয়েছে। ডিবি পুলিশের নাম ভাঙ্গিয়ে চাঁদাবাজিতে অভিযুক্ত কথিত ক্যাশিয়ার সেলিম হাওলাদার সহ চারজন অবসরপ্রাপ্ত পুলিশ সদস্যকে খুঁজছে ডিবি পুলিশ। বাকী তিনজন হলেন দিদার, এরশাদ মোল্লা ও মাসুদ।

পুলিশের মতে, কথিত ক্যাশিয়ারদের অপকর্মের কারনেও সংস্থাটির অনেক কর্মকর্তার সুনাম ক্ষুন্ন হয়। এর আগে ২০১৬ সালের ২ ফেব্রুয়ারী সেলিম হাওলাদারসহ চারজনকে ২৪ ঘন্টার মধ্যে গ্রেপ্তারের জন্য ডিবির কর্মকর্তাদের নির্দেশ দিয়েছিলেন তৎকালীন সিএমপি কমিশনার আবদুল জলিল মন্ডল। শুধু পুলিশ নয়, সরকারী ও শায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারাও আছেন দুদক আতঙ্কে। অনেক কর্মকর্তা ও পরিবারের লোকজন চালচলনে চাকচিক্য পরিহার করে সাদাসিদা জীবন যাপন বেছে নিচ্ছেন। প্রাইভেট কার মাইক্রো বাদ দিয়ে সিএনজি টেক্সিতে চলাফেরা করছেন তারা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.