অর্থবাণিজ্য ডেস্ক : বেসিক ব্যাংক থেকে ২ হাজার ৯ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ৫৬টি মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এসব মামলায় ব্যাংকটির কর্মকর্তা, ঋণগ্রহণকারী প্রতিষ্ঠান প্রধান ও সার্ভেয়ারসহ ১৮৫ জনকে আসামি করা হয়েছে।
গত সোমবার থেকে আজ বুধবার পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে রাজধানীর গুলশান, মতিঝিল ও পল্টন মডেল থানায় মামলাগুলো দায়ের হয়েছে। দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ ইকবালের নেতৃত্বে চার সদস্য বিশিষ্ট একটি অনুসন্ধানী টিম বাদি হয়ে এই তিন দিনে মামলাগুলো দায়ের করেন। দুদকের জনসংযোগ কর্মকর্তা বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
দুদক সূত্র জানায়, ৫৬টি মামলায় ব্যাংকটির সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাজী ফখরুল ইসলাম এবং ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর ফজলুস সোবহানসহ ১৮ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে আসামি করা হয়েছে। তবে কোনো মামলাতেই এই বিপুল পরিমান টাকা আত্মসাতের মূল হোতা ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান শেখ আবদুল হাই বাচ্চুকে আসামি করা হয়নি।
কাজী ফখরুল ইসলাম এবং ফজলুস সোবহানসহ বেসিক ব্যাংকের যেসব ১৮ কর্মকর্তাকে সব মামলায় আসামি করা হয়েছে তারা হলেন- উপ-মহাব্যবস্থাপক এ মোনায়েম খান, মো. সেলিম, ক্রেডিট ইনচার্জ এসএম জাহিদ হাসান, উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক কনক কুমার পুরকায়স্থ, গুলশান শাখার সাবেক ব্যবস্থাপক এসএম ওয়ালিউল্লাহ, উপ-ব্যবস্থাপক এনএ তফিকুল আলম, সাবেক ম্যানেজার মহিবুল হক, দিলকুশা শাখার উপ-মহাব্যবস্থাপক গোলাম ফারুক খান, সহকারী মহা-ব্যবস্থাপক আবদুস সাত্তার খান, প্রধান শাখার মহাব্যবস্থাপক জয়নাল আবেদীন চৌধুরী, উপ-মহাব্যবস্থাপক উমর ফারুক, শান্তিনগর শাখার ব্যবস্থাপক (অপারেশন) সরোয়ার হোসেন, উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. মোজাম্মেল হোসেন, শাখা প্রধান মোহাম্মদ আলী চৌধুরী, অতিরিক্ত ব্যবস্থাপক শেখ মঞ্জুর মোরশেদ, সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক কেএম সাজেদুর রহমান এবং প্রধান শাখার সহকারী মহাব্যবস্থাপক ও ক্রেডিট ইনচার্জ আবদুস সবুর।
এসব মামলাতেই আসামি করা হয়েছে ১০ সার্ভেয়ারকে। তারা হলেন- ইউনিক সার্ভে সার্ভিস ব্যুরোর চিফ সার্ভেয়ার মো. সিরাজুল ইসলাম, জসিম উদ্দিন চৌধুরী, রূপসা সার্ভেয়ার্সের সিনিয়র সার্ভেয়ার প্রকৌশলী মো. জহিরুল ইসলাম, সেবল্ট এডজাস্টার্সের সার্ভে ইনচার্জ আশরাফুল মাওলা, চিফ সার্ভেয়ার মো. শাহজাহান আলী, এসডি সার্ভে ফার্মের চিফ সার্ভেয়ার মো. ফারুক, সিনিয়র সার্ভেয়ার আবু সুফিয়ান, ম্যানেজিং পার্টনার ইকবাল হোসেন ভূঁইয়া, দেশ পরিদর্শন কোম্পানির মালিক মু. শফিকুল ইসলাম শিমুল ও বিডিএস এডজাস্টার্সের প্রধান নির্বাহী ইবনে মোফাজ্জল।
ঋণগ্রহীতা ও গ্যারান্টার হিসেবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের প্রধান ও পরিচালকের মধ্য থেকে আর বাকি ১৫৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই কয়েক মামলায় আসামি হিসেবে আছেন। প্রতারণা ও জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা আত্মসাতের অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় দণ্ডবিধির ৪০৯/১০৯/৪৬৬/৪৬৭ এবং ১৯৪৭ সালের দুর্নীতি প্রতিরোধ আইনের ৫(২) ধারায় মামলাগুলো করা হয়।
ঋণের নামে অর্থ লোপাটকারী প্রতিষ্ঠান হচ্ছে- এশিয়ান ফুড ট্রেডিং অ্যান্ড কোং, এশিয়ান শিপিং বিডি লিমিটেড, বি. আলম শিপিং লাইন্স, লাইফস্টাইল ফ্যাশনস মেকার লিমিটেড, তাহমিনা ডেনিম লিমিটেড, তাহমিনা নিটওয়ার লিমিটেড, বাসাভি ফ্যাশন লিমিটেড, মেসার্স খাদিজা অ্যান্ড সন্স, সিলভার কম ট্রেডিং, মেসার্স এআরএসএস এন্টারপ্রাইজ, আমিরা শিপিং এজেন্সি, সিমেক্স লিমিটেড, মেসার্স আলী কনস্ট্রাকশন অ্যান্ড সাপ্লায়ার্স, মেসার্স আহমেদ অয়েল মিল লিমিটেড, মেসার্স সৈয়দ ট্রেডার্স, মেসার্স ডায়নামিক ট্রেডিং, টেলিওয়েজ ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, মেসার্স এলআর ট্রেডিং, প্রপেল ইন্টারন্যাশনাল লিমিটেড, গুঞ্জন এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, ইমারেল্ড অয়েল ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেসার্স রিলায়েন্স শিপিং লাইন্স ও সৈয়দ রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট লিমিটেড, মনিকা ট্রেডিং ইন্টারন্যাশনাল, মেসার্স এসএফজি শিপিং লাইন, মেসার্স ট্রেড হাউজ, লিটল ওয়ার্ল্ড লিমিটেড, এসএল ডিজাইনার্স লিমিটেড, মেসার্স ইউকে বাংলা ট্রেডিং লিমিটেড, মেসার্স সৈয়দ কনস্ট্রাকশন লিমিটেড, মেসার্স বর্ষণ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, বিডিএস এডজাস্টার্স, নিউ অটো ডিফাইন, ফিয়াজ এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ফিয়াজ এন্টারপ্রাইজ, অটো ডিফাইন, মেসার্স ইমারেল্ড ড্রেসেসে লিমিটেড, হাসিব এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স ভয়েস এন্টারপ্রাইজ, হক ট্রেডিং এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স নীল সাগর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ, মেসার্স এসওএস ব্রাদার্স, মেসার্স বিথী এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স আজাদ ট্রেডিং, বি.আলম শিপিং লাইন্স, মেসার্স ফার্স্ট অ্যান্ড বেস্ট ট্রেডার্স ইম্পেক্স, আর.কে. ফুডস লিমিটেড, সুরমা স্টিল অ্যান্ড স্টিল ট্রেডিং কোং, মেসার্স নীল সাগর এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, মেসার্স নীল সাগর এগ্রো ইন্ডাষ্ট্রিজ লিমিটেড (ফিড মিল ইউনিট), মেসার্স রুদ্র স্পেশালাইড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড, মেসার্স আজবিহা এগ্রো ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড, আর.আই. এন্টারপ্রাইজ, মেসার্স পারুমা ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কস, মেসার্স ডায়নামিক ট্রেডিং, মেসার্স এমারেল্ড অটো ব্রিকস লিমিটেড, এমারেল্ড স্পেশালাইড কোল্ড স্টোরেজ লিমিটেড এবং মেসার্স নাহার গার্ডেন প্রা:লিমিটেড।
দুদকের অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঋণ নিয়ে সেটি আত্মসাতের লক্ষ্যেই প্রতিষ্ঠানগুলো সৃষ্টি করা হয়েছিল। এমনও প্রতিষ্ঠান রয়েছে যেগুলো ঋণ মঞ্জুরি হওয়ার পর রেজিস্ট্রেশন পেয়ছে। প্রতিষ্ঠানের একাউন্টে টাকা যোগ হওয়ার পরপরই প্রতিষ্ঠানগুলো লাপাত্তা। আর এভাবেই ব্যাংকটির উচ্চপর্যাওয়ের ওই কর্মকর্তা ও একটি বৃহৎ জালিয়াতি চক্রের মাধ্যমে দেশের রাষ্ট্রয়াত্ত এই ব্যাংকটি থেকে ২ হাজার ৯ কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। ২০১০ সালের ১৪ ডিসেম্বর থেকে চলতি বছরের জুলাই পর্যন্ত বিভিন্ন সময়ে বেসিক ব্যাংকের প্রধান কার্যালয়, শান্তিনগর শাখা, গুলশান শাখার এবং দিলকুশা শাখা থেকে এসব টাকা আত্মসাৎ করা হয়।