রাউজানে সংঘবদ্ধ জালিয়াতি চক্রের“টর্চারসেল”পশ্চিম আধাঁর মানিক গ্রাম!
কোথায় মিলবে সু-বিচার ?
সিটি নিউজ,চট্টগ্রাম : একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের অত্যাচারে চট্টগ্রাম জেলার রাউজান উপজেলার পশ্চিম আধাঁর মানিক গ্রাম যেন এখন টর্চারসেলে পরিণত হয়েছে! গ্রামের অনেকেই ওই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। সংঘবদ্ধ ওই অপরাধ চক্র গ্রামের নিরীহ-অসহায় মানুষের জায়গা-জমি জাল দলিল ও ভুয়া ওয়ারিশন সার্টিফিকেটের মাধ্যমে পেশিশক্তি প্রয়োগ করে বেদখল করে। কেউ প্রতিবাদ করলে তার ওপর নেমে আসে অমানবিক খড়গ। তাকে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানির পাশাপাশি শারীরিক নির্যাতন-নিপীড়ন করা হয়। জানে মেরে ফেলারও চেষ্টা করা হয়। জীবন রক্ষায় কেউ কেউ গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র মানবেতর জীবন-যাপন করছেন।
এই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে সোমবার ২২ অক্টোবর দুপুর ১২ টায় চট্টগ্রাম নগরীতে এক সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করেন ভুক্তভোগীরা। ওই সংবাদ সম্মেলনে অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা দেন তারা। সেইসঙ্গে ওই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন রাউজান উপজেলার ১০ নম্বর পূর্ব গুজরা ইউনিয়নের পশ্চিম আধাঁর মানিক গ্রামের মৃত নলিনী রঞ্জন বড়ুয়ার পুত্র সত্যপ্রিয় বড়ুয়া। লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমাদের গ্রামের একটি সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের প্রাণনাশের হুমকিতে আমি গত ছয় মাস ধরে ঘরছাড়া।
জীবনের নিরাপত্তায় নিজ গ্রাম ছেড়ে চট্টগ্রাম শহরে এসে যাযাবরের মতো খেয়ে না খেয়ে মানবেতর জীবন-যাপন করছি। এই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের নেতৃত্বে রয়েছে স্থানীয় ইউপি সদস্য উজ্জল বড়ুয়া। এই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের আরেক হোতা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পালি বিভাগের প্রভাষক ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া।
এছাড়াও এই চক্রের অন্য সদস্যদের মধ্যে উল্লেখযোগ্যরা হলো- চৌকিদার পরিমল বড়ুয়া, সুজিত বড়ুয়া, সজল বড়ুয়া (জাংগুলু), প্রণব বড়ুয়া (বলরাম), জয়ধন বড়ুয়া, নিদর্শন বড়ুয়া, সুভাস বড়ুয়া ও সুজাতা বড়ুয়া।
এরমধ্যে ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া ওই অপরাধ চক্রের সহযোগিতায় এবং গুজরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সাবেক তহসিলদার মন্টু চাকমার যোগসাজসে আমার বাবার ভুয়া ওয়ারিশ সেজে ভুয়া নামজারি করে আমার বাপ-দাদার সম্পত্তি জবর দখল করে রেখেছে।
এ ব্যাপারে আমি ২০১৬ সালের ৬ নভেম্বর রাউজান ভূমি অফিসে বিবিধ মামলা নং ৮৭/২০১৬-১৭ রুজু করি। ওই মামলার রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে ড. বিমান চন্দ্র বড়–য়ার ওয়ারিশ অবৈধ ও তার নামজারি বাতিল করে আমার বাবার বৈধ ওয়ারিশ হিসেবে আমাদের তিন ভাইয়ের নামে বিএস ৩৪৬০ নং খতিয়ান সৃষ্টি (পুনরায় নামজারি) করা হয়।
কিন্তু তারপরও ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া তার সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের সদস্যদের দাপটে এখনও আমাদের বাব-দাদার ভিটেমাটিসহ জায়গা-জমি অবৈধভাবে নিজ দখলে রেখেছে। এ ব্যাপারে প্রশাসনসহ বিভিন্ন দফতরে প্রতিকার চেয়েও সুবিচার পাইনি। কোথায় গেলে সুবিচার পাবো জানি না। আমি এই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের বিরুদ্ধে বিচার চেয়ে এখন নিজেই চরম বিপদের মধ্যে রয়েছি। আমাকে প্রাণনাশের হুমকি দেয়া হয়েছে। ওই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের ভয়ে আমি নিজ গ্রামেও যেতে পারছি না। আমাদের গ্রামে আমার মতো অনেক ভুক্তভোগী রয়েছেন।
এই সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্রের হোতা ড. বিমান চন্দ্র বড়ুয়া ও উজ্জল বড়ুয়াসহ ওই অপরাধ চক্রের সকল সদস্যকে অবিলম্বে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি। সেইসঙ্গে পুলিশ ও প্রশাসন যাতে রাউজানের আধাঁর মানিক গ্রামের নিরীহ মানুষদের পাশে দাঁড়ায় এবং তাদের সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসে সেই দাবিও জানাচ্ছি ।
আরেক ভুক্তভোগী সজল বড়ুয়া অশ্রুসজল নয়নে বলেন, ‘ওই অপরাধ চক্রের লোকজন আমার গর্ভবতী স্ত্রীকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়ার কারণে তার গর্ভের সন্তান নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়াও একাধিক মিথ্যা মামলা দিয়ে আমাকে বেশ কয়েকবার জেল খাটিয়েছে ওই সংঘবদ্ধ অপরাধ চক্র।’
সংবাদ সম্মেলনে আরেক ভুক্তভোগী প্রেমানন্দ বড়ুয়ার পক্ষ থেকে বলা হয়, তার ওপর হামলা চালিয়ে তাকে পঙ্গু করেছে ওই অপরাধ চক্রের সদস্যরা। এ ব্যাপারে সে মামলা করলে গ্রামবাসীর কাছ থেকে জোরপূর্বক ও ভুয়া গণস্বাক্ষর নিয়ে ওই মামলাটি প্রত্যাহারে তাকে বাধ্য করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে সত্যপ্রিয়া বড়ুয়া, সজল বড়ুয়া ও তার স্ত্রী বিশাখা বড়ুয়া, প্রেমানন্দ বড়ুয়া এবং মৃদুল বড়ুয়া উপস্থিত ছিলেন।