কৃষি ডেস্ক : হতাশ মানিকগঞ্জের পাটচাষিরা। যে পাটকে বলা হতো সোনালী আঁশ, সেই পাটই এখন কৃষকের গলার ফাঁস হয়ে দাঁড়িয়েছে। ফলন ভাল হলেও কাঙ্খিত দাম না পায়নি তারা। অথচ গত বছরের চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেশি জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে এবার। কিন্তু উৎপাদন খরচ উঠানোই যেন দায় হয়ে উঠেছে কৃষকের। এমন অবস্থা চলতে থাকলে আগামীতে পাট চাষে আগ্রহ হারাবে কৃষক।
চলতি মৌসুমে ৪১৪৮ হেক্টর জমিতে তোষা ও দেশি পাটের আবাদ হয়েছে বলে জানিয়েছে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্র। যা কিনা গত বছরের চেয়ে ৩৪২ হেক্টর বেশি।
সদর উপজেলার আন্ধারমানিক গ্রামের পাটচাষি আব্দুল লতিফ জানান, এ বছর তিনি দুই বিঘা জমিতে পাটের আবাদ করেছেন। জমি তৈরি, সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি শ্রমিক সব মিলিয়ে বিঘা প্রতি কৃষকের খরচ হয়েছে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা। প্রতি বিঘায় ফলন ৬ মণ। বর্তমানে পাটের বাজার দর ১২ থেকে ১৬ হাজার টাকা।
একই গ্রামের চাষি আফজাল হোসেন জানান, পাটের ফলন ভাল হয়েছে। তবে, আশানুরুপ দাম নেই বাজারে। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে তাদের কোন লাভ হয়নি বলেও জানান তিনি।
ঘিওরের পাটচাষি মফিজুল জানান, বর্তমান বাজারে সব কিছুরই দাম বেশি। সার, বীজ ও কৃষি শ্রমিক মিলিয়ে যে খরচ তাতে করে আগামীতে পাট চাষ বাধ্য হয়েই ছেড়ে দিতে হবে। তিনি আরো বলেন, অনেক অঞ্চলের জমিতে পাট ছাড়া অন্য ফসল ভাল না হওয়ায় কৃষকদের এই চাষ করে যেতে হচ্ছে।
তরা হাটের পাট ব্যবসায়ী লাল মিয়া জানান, দেশের অনেক পাটকল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পাটের কাঙ্খিত দাম পাওয়া যাচ্ছেনা। বর্তমানে ১৫০০/১৬০০ টাকা মন দরে পাট বিক্রি করেও কৃষকের লাভ থাকছে না।
এ ব্যাপারে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক আলীমুজ্জামান মিয়া জানান, পাটের মূল্য কৃষকের উৎপাদন খরচ থেকে কম, তা ছাড়া অনেক পাটকল বন্ধ থাকায় এমন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে, পাটের সোনালী অতীত ফিরিয়ে আনতে দরকার সরকারী উদ্যোগ। সরকার প্রয়োজনীয় সার ও কীটনাশকের দাম কমালে এবং চাষিদের নায্য মূল্য প্রদান করলেই পাটের সুদিন আবার ফিরে আসবে বলে মনে করেন স্থানীয়রা।