চন্দনাইশের ৪টি আশ্রয়ন প্রকল্পের বেহাল দশা

0

মো. দেলোয়ার হোসেন, চন্দনাইশঃ চন্দনাইশের হত দরিদ্র ও ভুমিহীনদের পুনর্বাসনের জন্য সরকার বিভিন্ন সময়ে ৪টি আশ্রয়ন প্রকল্প স্থাপন করেছেন। ৪টি আশ্রয়ন প্রকল্পের মধ্যে ৩টি আশ্রয়ন প্রকল্প বর্তমানে চালু থাকলেও জামিজুরী গুচ্ছগ্রামটি হাতির ভয়ে ফেলে চলে আসে আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দারা। অপর ৩টি আশ্রয়ন প্রকল্পের মানুষগুলো কেমন আছে তাদের খরব কেউ রাখে না বলে অভিযোগ করেছেন তারা।

২০০৫ সালে জঙ্গল জামিজুরীতে গুচ্ছগ্রাম নির্মাণ করে ২০০৬ সালের ২ জুন উদ্বোধন করেছিলেন তৎকালীন সাংসদ আলহাজ্ব ড. কর্নেল (অব:) অলি আহমদ বীর বিক্রম। উপজেলার পাহাড়ী এলাকা দোহাজারী জামিজুরীতে সে গুচ্ছগ্রামে গৃহহীন ৪০টি পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করা হয়। সে সাথে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা, গুচ্ছগ্রামের লোকজনের জন্য ১টি ক্লাব, ছেলে-মেয়েদের জন্য একটি প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা হয়। ৪ একর পাহাড়ি জমির উপর সারিবদ্ধভাবে ৪০টি পরিবারের বাসস্থান নির্মাণ করে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা, ত্রাণ ও ভুমি মন্ত্রণালয়।

বেশ কয়েক বৎসর ৪০টি পরিবার সেখানে বসবাস শুরু করলেও পরবর্তীতে বন্যহাতির আক্রমণের ফলে এ সকল পরিবারগুলো সে গুচ্ছগ্রাম ফেলে চলে আসে। তাছাড়া হাতির আক্রমণে ২ জনের মৃত্যুও ঘটেছিল, অনেক ঘর গুড়িয়ে দিয়েছিল হাতির পাল। ফলে আদর্শ গ্রামের সব লোকজন পালিয়ে চলে যায়। জনমানব শূন্য হয়ে পড়ে আদর্শ গ্রাম। পরবর্তীতে কে বা কারা সে ঘরের টিনগুলো পর্যন্ত খুলে নিয়ে যায়।

এদিকে ২০০৬ সালের মে মাসে বাংলাদেশ নৌ-বাহিনী কর্তৃক নির্মাণ করা হয়েছিল কাঞ্চননগর আবাসন প্রকল্প। উপজেলার কাঞ্চননগর পাহাড়ী এলাকায় ৪০টি পরিবারের জন্য এ আবাসন প্রকল্প নির্মাণ করা হয় সরকারি খাস জমির উপর। গুইল্যাছড়ি খালের পাশ ঘেঁষে ৪ একর জমির উপর ৪টি ব্যারাকে ৪০ পরিবারের জন্য আবাসনের ব্যবস্থা করে দেয়া হয়। এসব এলাকায় উপজেলার কাঞ্চননগর, জাফরাবাদ, চৌধুরী পাড়া, সাতবাড়ীয়া, হাশিমপুর, দোহাজারী সহ বিভিন্ন এলাকার ৪০টি ভুমিহীন পরিবার তাদের মাথাগুজার ঠাঁই পেয়ে যায়।

একইভাবে ২০০৪ সালে দিয়াকুল আশ্রয়ন প্রকল্পে সরকারিভাবে ১শ পরিবারের জন্য ১০টি ব্যারাকে নির্মাণ করা হয় ১শ পরিবারের বাসস্থান। সেখানেও বিভিন্ন এলাকার ভুমিহীন শ্রমজীবী মানুষ তাদের মাথাগুজার ঠাঁই পায়। তাছাড়া জামিজুরী এলাকায় গুচ্ছগ্রাম নামে একটি আশ্রয়ন প্রকল্পে ১৫ পরিবারের জন্য ১৫টি ঘর নির্মাণ করে আশ্রয় দেয়া হয় ১৫টি ভুমিহীন পরিবারকে। এ সকল আশ্রয়ন প্রকল্পের মানুষেরা সাধারণত দিনমজুরী, রিক্সা চালক, পাহাড় থেকে কাঠ কাটা, টেক্সী চালকসহ বিভিন্ন শ্রম দিয়ে নিজের সংসার জীবন অতিবাহিত করছে। কারো কারো পরিবার বেড়ে যাওয়ায় তাদের পাশে অতিরিক্ত কক্ষ তৈরি করে বসবাস করছে।

সরজমিনে গিয়ে দেখা যায়, এ সকল আশ্রয়ন প্রকল্পগুলোর মানুষ কিভাবে আছে যেন সে খবর কেউ রাখে না। দিয়াকুল আশ্রয়ন প্রকল্পে ২টি ডিপ টিউবওয়েল থাকলেও পর্যাপ্ত নয় বলে দাবী করেছেন তারা। এ এলাকায় সরকারিভাবে ১শ পরিবারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবে আরো ৫০টি পরিবার বসবাস করছে। তাদের বিশুদ্ধ পানির জন্য ২টি টিউবওয়েল থাকায় লাইনে দাড়িয়ে পানিতে নিতে দেখা গেছে এ এলাকার বাসিন্দাদের। সামনে পুকুর থাকলে শুষ্ক মৌসুমে পানি পাওয়া যায় না।

একইভাবে কাঞ্চননগর আবাসন প্রকল্পের একটি মাত্র সেলু টিউবওয়েল থাকায় শুষ্ক মৌসুমে বিশুদ্ধ পানি পায়না এ এলাকার বাসিন্দারা। এ আবাসন প্রকল্পটি গুইল্যাছড়ি খালের পাশে হওয়ায় আবাসন প্রকল্পের মুখে নির্মিত ব্রীজটির পাশে একজন দোকানদার খাল ভরাট করে ফেলায় আবাসন প্রকল্প এলাকা ভাঙ্গনের শিকার হচ্ছে। তারা জানালেন, এ ব্যাপারে খাল খনন করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করলে বিষয়টি তদন্ত সাপেক্ষে স্থানীয় চেয়ারম্যান খাল খননের জন্য উদ্যোগ নেয়ার পরামর্শ দেন।

কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। অপরদিকে দিয়াকুল আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের একমাত্র সড়কটি নালায় পরিণত হয়ে শুষ্ক মৌসুমে টিউবওয়েলের পানি চলাচল করে, বর্ষা এলে পাহাড়ি ঢলের পানি এ সড়ক দিয়ে চলাচলের কারণে তাদের যাতায়াত করা খুবই কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। দিয়াকুল আশ্রয়ন প্রকল্পের সন্নিকটে প্রাথমিক বিদ্যালয় থাকলেও অপর প্রকল্পগুলোর আশে পাশে প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় এসব এলাকার শিশু-কিশোরেরা লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে জানান। সে সাথে সরকারি কোন রকম সাহায্য সহযোগিতাও তারা যথাযথ পাচ্ছে না বলে জানান। চন্দনাইশে ৩টি আশ্রয়ন প্রকল্পের বাসিন্দাদের যথাযথ সাহায্য সহযোগিতা প্রদানের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ তথা মন্ত্রণালয়ের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন এসব আবাসন প্রকল্পের বাসিন্দারা।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.