প্রবাসীদের পরিবারগুলো পড়েছে চরম অর্থকষ্টে
মহসীন কাজী » এই মহামারিতে নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তের পাশাপাশি প্রবাসীদের পরিবারগুলো চরম অর্থকষ্টে পড়েছে। ইউরোপ, আমেরিকাসহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন দেশে একমাসেরও বেশি সময় ধরে লকডাউন এবং কারফিউ জারি হয়েছে। আইনী কড়াকড়ির কারণে তারা বাসা থেকেও বের হতে পারছেন না। বের হলেই আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদস্যদের লাঠিপেটা ও মোটা দাগের নগদ জরিমানা।
এ কারণে যেসব প্রবাসী মাইনে পেয়ে বা ব্যবসার মুনাফা থেকে মাসান্তে বাড়িতে টাকা পাঠান তারা কোনো টাকাই পাঠাতে পারেননি। নিজেরাই চলছে স্বস্ব দেশের সরকারের দেয়া ত্রাণে। সে কারণে দেশে প্রবাসীদের পরিবারগুলোতেও অভাব দেখা দিয়েছে।
সেদিন আমাদের সাংবাদিক মহররম হোসাইনের ওপর হামলার বিষয়ে নগরীর কোতোয়ালী থানায় গেলে ওসি মহসীনও প্রসঙ্গটির আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, অনেকেই ফোন করে বিদেশ থেকে টাকা না পাঠানোর কারণ দেখিয়ে খাদ্যসামগ্রী সহায়তা চেয়েছেন।
আমার এক বন্ধু বললেন, বোয়ালখালী এলাকার অনেক প্রবাসীর ঘর খরচ চালানো দুরূহ হয়ে পড়েছে। তারা এখন চলছেন ধারকর্য করে।
নিজের পরিবারের কথাই বলি, আমার তিন চাচাতো ভাই ওমান প্রবাসী। তারাও আছে কার্ফুতে আটকা। ফলে বাড়িতে টাকা পাঠাতে পারেনি। সেদিন আমার বাড়িতে ফোন করে তাদের কুশল জানতে গিয়ে শোনেন এ দুর্দশার কথা। মা শুনেই তাদের নিয়ে চিন্তিত হয়ে পড়েন। বললেন, আমাকে বাড়িতে তাদের জন্য কিছু টাকা পাঠাতে। তাদের সমস্যার আপাতত: সমাধান হবে।
বাড়িতে থাকা চাচাতো ভাই জানালো, এলাকার অন্যান্য প্রবাসীদের পরিবারগুলোতে নিম্নআয়ের মানুষের মতো অভাব এসে গেছে। তবে তারা কারও কাছে হাত পাততে পারছে না। এখন পর্যন্ত আত্মীয় স্বজনই ভরসা।
আমার শ্বশুর বাড়ির আয়ের উৎসও প্রবাসী নির্ভর। তারা বিদেশের টাকা না পেয়ে আপাতত: জমাজাতি ও দেশে যারা আয় করছে তাদের উপর নির্ভর হয়ে পড়েছে।
প্রবাসীরা ওদিক থেকে বলেন, তাদের টাকা আছে, কিন্তু টাকা পাঠানোর সব মাধ্যম বন্ধ থাকায় বিপাকে পড়েছেন।
সবার কথা তো বললাম এবার আমাদের ঘরের কথায় আসি। যুক্তরাষ্ট্র ও মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতার থেকে আয়ের একটা অংশ আসে মাস শেষে। টাকার চিন্তা এখন বাদ সেখানে থাকা দু;ছেলে এবং নাতি-নাতনির চিন্তায় অস্থির আমার মা। তারা লকডাউনে ঘর বন্দি। ব্যবসা বাণিজ্য নেই প্রায় দুইমাস। ওদের চিন্তা এদিক নিয়ে, আর আমাদের চিন্তা তাদের নিয়ে। কারও মন ভাল নেই। তবে আর্থিক চাপ আপাতত: পড়েনি। চিন্তার বিষয় হলো কতদিন চলা যাবে।
আসা যাক মূল কথায়, সার্বিকভাবে প্রবাসীদের পরিবারগুলো ভাল নেই। একে তো স্বজনের জন্য চিন্তা তারউপর আর্থিক কষ্ট। তাই খোঁজখবর নেয়ার সময় রেমিট্যান্স যোদ্ধাখ্যাত প্রবাসীদের পরিবার নিয়েও চিন্তাভাবনা রাখলে ভাল হয়। অনেক প্রবাসীর পরিবার ইতোমধ্যে অর্থকষ্টে পড়লেও লোকলজ্জ্বায় মুখ খুলছে না।
লেখকঃ যুগ্ম-মহাসচিব, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের (বিএফইউজে)।