সিটি নিউজ ডেস্ক : করোনাভাইরাসের পরিস্থিতিতে কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় বিশ্বের প্রায় ১৬০ কোটি শ্রমিক জীবিকা হারানোর ঝুঁকিতে আছে বলে সতর্ক করেছে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও)।
সংস্থাটি জানিয়েছে, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের এই কর্মীসংখ্যা বিশ্বের মোট শ্রমশক্তির প্রায় অর্ধেক।
বুধবার করোনাভাইরাস (কোভিড-১৯) নিয়ে আইএলও তাদের পর্যবেক্ষণ নিয়ে তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশ করেছে।
‘কভিড-১৯ অ্যান্ড দ্য ওয়ার্ল্ড অব ওয়ার্’’ শিরোনামে এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে এসে (এপ্রিল থেকে) যে হারে কর্মঘণ্টা কমে যাচ্ছে তা আগের ধারণার চেয়ে অনেক বেশি আশঙ্কাজনক।
২০১৯ সালের চতুর্থ প্রান্তিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) যখন এ সঙ্কটের শুরু হয়নি, সেই সময়ের তুলনায় এখন বিশ্বজুড়ে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ১০ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে, যা প্রায় ৩০ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির সমান (একটি ফুলটাইম চাকরিতে সপ্তাহে ৪৮ কর্মঘণ্টা ধরা হয়)।
আইএলও বলছে, এই সঙ্কটে বিশ্বজুড়ে শ্রমিকের কর্মঘণ্টা ৬ দশমিক ৭ শতাংশ কমতে পারে, যা প্রায় ১৯ কোটি পূর্ণকালীন চাকরির সমান। কিন্তু দেশে দেশে লকডাউন দীর্ঘায়িত হওয়ার কারণে ক্ষতি হচ্ছে ধারণার চেয়ে অনেক বেশি।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি সব বড় আঞ্চলিক গোষ্ঠীর জন্য আরও খারাপ হয়েছে। আশঙ্কা করা হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এই বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে ১২ দশমিক ৪ শতাংশ কর্মঘণ্টা হারাবে। ইউরোপ ও মধ্য এশিয়া হারাবে ১১ দশমিক ৮ শতাংশ কর্মঘণ্টা।
আইএলও জানিয়েছে, মহামারীর কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটের কারণে অনানুষ্ঠানিক অর্থনীতির প্রায় ১৬০ কোটি মানুষের জীবিকা নির্বাহ ঝুঁকিতে পড়বে। মূলত করোনার প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে দেশে দেশে নেওয়া লকডাউন পদক্ষেপের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে।
এই সংকটের প্রথম মাসে বিশ্বব্যাপী অনানুষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের আয় কমেছে ৬০ শতাংশ, যা আফ্রিকার দেশের ক্ষেত্রে ৮১ শতাংশ। যুক্তরাষ্ট্র, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে ২১ দশমিক ৬ শতাংশ এবং ইউরোপ ও মধ্য এশিয়ায় ৭০ শতাংশ।
আইএলওর বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর টুমো পটিআইনেন বলেন, জনসংখ্যার বিভিন্ন অংশ যেমন নারী, যুবক, বয়স্ক শ্রমিক, অভিবাসী ও চাকরিজীবী ব্যক্তিরা কোভিড-১৯ মহামারির কারণে আলাদাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন। তরুণ জনগোষ্ঠী এমনিতে উচ্চ বেকারত্বের হারে রয়েছে, তারা জীবিকা হারাতে বসেছেন। বয়স্ক কর্মীরা কর্মঘণ্টা কমে যাওয়ায় বেকারত্বের ঝুঁকিতে আছেন। নারীরা সামাজিক সুরক্ষার অভাবে রয়েছেন। স্ব-কর্মসংস্থানের কর্মীরা প্রচলিত সামাজিক সুরক্ষা প্রক্রিয়া দ্বারা সুরক্ষিত নন।
আইএলও বলছে, করোনাভাইরাস সঙ্কটে বিশ্বব্যাপী ৪৩ কোটি ৬০ লাখ ব্যবসায়িক উদ্যোগ মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত হওয়ার ঝুঁকি তৈরি হয়েছে। এর মধ্যে ২৩ কোটি পাইকারি ও খুচরা ব্যবসায়ীক উদ্যোগ রয়েছে। চার কোটি রিয়েল এস্টেট ও অন্যান্য ব্যবসাও রয়েছে এর মধ্যে।
এই পরিস্থিতিতে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও শ্রমিকদের সুরক্ষায় জরুরি ভিত্তিতে প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে বলছে আইএলও।
তাদের পরামর্শ, এই প্রণোদনা হতে হবে খাতভিত্তিক এবং ঋণ হতে হবে সহজ শর্তের। ঋণ সঙ্কট দূর করার পাশাপাশি থোক বরাদ্দ নিশ্চিত করতে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোও আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।