চন্দনাইশে নির্বাচনী মামলায় চার্জশিট, ক্ষোভে ফুসছে আ’লীগ

0

নিজস্ব সংবাদদাতাঃ চন্দনাইশে উপজেলা নির্বাচনের ঘটনায় করা মামলায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও যুগ্ম-সম্পাদকসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ২০ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করায় জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা ক্ষোভ ও নিন্দা জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইস বুকে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে, আসছে কঠিন কর্মসূচি। আজ বিকালে তৃণমূল নেতাদের বসে সভা করে সিদ্ধান্ত নেয়ার ঘোষনা দিয়েছে।

জানা যায়, গত বছর ২৪ মার্চ চন্দনাইশ উপজেলা নির্বাচনে পূর্ব চন্দনাইশ চৌধুরী পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ভোট চলাকালীন গোলাগুলিতে ১ কনস্টেবল গুলিবিদ্ধ হয়। সে মামলায় পুলিশ বাদী হয়ে ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করেন। সে মামলায় তদন্তকারী কর্মকর্তা ইন্সপেক্টর (তদন্ত) মাহাবুবুল আলম আকন্দ দীর্ঘ তদন্ত শেষে গত ২৪ জানুয়ারি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর, যুগ্ম-সম্পাদক মাহাবুর রহমান চৌধুরীসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগের ২০ নেতাকর্মীকে আসামী করে চার্জশিট দাখিল করেন।

কিন্তু করোনা ভাইরাসের কারণে সাধারণ ছুটি ও নিয়মিত কোর্ট না চলার কারণে অদ্যবধি চার্জশিট গৃহিত হয়নি বলে জানা যায়। আসামীদের মধ্যে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়ন নেতাকর্মী রয়েছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ।

এ নিয়ে গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশিত হওয়ার পর জেলা ও উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকে গত ২ দিন প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে। অনেকে এমন মন্তব্য করেছেন যে, একটি মহল কৌশলে আ’লীগে প্রবেশ করে আ’লীগকে ধ্বংস করার জন্য এ চার্জশিট পুলিশকে দিয়ে করিয়ে নিয়েছেন।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সভাপতি মোসলেম উদ্দীন আহমেদ এমপি বলেছেন, আ’লীগের সভাপতি ও যুগ্ম-সম্পাদকসহ নেতৃবৃন্দ নৌকার প্রার্থীর পক্ষে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদেরকে চার্জসিট ভূক্ত করা সঠিক হয়নি। এ বিষয়ে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পদক্ষেপ নেয়া হবে বলে তিনি জানিয়েছেন এবং ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

চট্টগ্রাম ১৪-আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব নজরুল ইসলাম চৌধুরী বলেছেন, সভাপতি ও যুগ্ম-সম্পাদকসহ যারা ঘটনায় ছিল না, এ সমস্ত নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দেয়া সমীচিন হয়নি। এ ব্যাপারে উপজেলা আ’লীগ, জেলা আ’লীগের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারেন। এ বিষয়ে থানা অফিসার ইনচার্জের সাথে কথা বলেছেন বলেও জানান তিনি। তবে তিনি বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে জবাব দেয়ার চেষ্টা করেছেন বলেও জানিয়েছেন।

দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক মফিজুর রহমান বলেছেন, একজন উপজেলা আ’লীগের সভাপতি ও যুগ্ম-সম্পাদককে আসামী করা সৃষ্টতা বর্হিভূত। তারা নৌকার প্রতীকের পক্ষে কাজ করেছেন, সবাই সম্মানিত ব্যক্তি। তারা কোনভাবে এ ধরণের ঘটনার সাথে জড়িত ছিল না। তাদের বিরুদ্ধে এ ধরনের মামলায় চার্জশিট নাম দেয়াটা সঠিক হয়নি। তাই তিনি প্রতিবাদ ও তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন। তিনি আরো বলেছেন, দেশে আইনের প্রতি মানুষ শ্রদ্ধা হারিয়ে ফেলবে, তাই তিনি এ বিষয়ে আইনগত ও সাংগঠনিক ভাবে পদক্ষেপ নিবেন বলে জানিয়েছেন। সে সাথে পুনঃ তদন্তের দাবি জানিয়েছেন।

উপজেলা আ’লীগের সভাপতি জাহিদুল ইসলাম জাহাঙ্গীর বলেছেন, তার নাম এজাহারে ছিল না। তিনি নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী নাজিম উদ্দীনের প্রধান নিবার্চনী এজেন্ট ছিলেন। সকাল সাড়ে ১০ টায় এ কেন্দ্রে গোলাগুলির ঘটনার পর পর পুলিশ ২/৩ কিলোমিটার দূরে গিয়ে আ’লীগ সমর্থিত এলাকায় তান্ডব চালিয়ে নৌকার এজেন্টদের কেন্দ্র থেকে বের করে দেয় এবং নৌকার প্রার্থীর সমর্থকদের এলোপাতাড়ি মারধর করে এলাকা ছাড়া করেছেন। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে মোবাইল ট্যাকিংসহ বিভিন্ন কৌশলে প্রকৃত অপরাধীদের চিহ্নিত করা সম্ভব। তাই তিনি বিষয়টি অন্য একটি সরকারী সংস্থাকে দিয়ে পুনঃ তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের চিহ্নিত করে চার্জশিটভূক্ত করার দাবি জানিয়েছেন। অন্যথায় উপজেলা আ’লীগ, জেলা আ’লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে আলোচনার মাধ্যমে কঠিন কর্মসূচি ঘোষনা করবেন বলে জানিয়েছেন।

সাধারণ সম্পাদক আবু আহামদ জুনু বলেছেন, সভাপতি, যুগ্ম-সম্পাদকসহ আ’লীগ ও যুবলীগের জড়িত নয় এমন কিছু নেতাকর্মীকে চার্জশিটভূক্ত করায় তিনি তীব্র প্রতিবাদ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। সে সাথে জেলা আ’লীগের সভাপতি, সম্পাদক ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন বলে জানিয়েছেন।

উপজেলা আওয়ামী যুবলীগের আহ্বায়ক তৌহিদুল আলম বলেছেন, বিএনপি ক্ষমতা থাকাকালীন কর্ণেল অলির মহিলা কলেজের সামনে তার উপস্থিতিতে রাঙ্গামাটির সংসদ সদস্য ও পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী দীপংকর তালুকদারকে শারীরিক নির্যাতন করে তার গাড়ি পুড়িয়ে দিয়েছিল। উপজেলা আ’লীগের তৎকালীন সাধারণ সম্পাদক এম ওয়াহিদুজ্জামান চৌধুরীসহ আ’লীগ নেতৃবৃন্দকে চন্দনাইশ সদরে শারীরিকভাবে নির্যাতন করে গুরুত্বর আহত করেছিল। কিন্তু এ সকল বিষয়ে কোন ধরণের মামলা পর্যন্ত করতে পারেনি আ’লীগ।

যুবলীগ নেতা জহির উদ্দীন হিরু সাতবাড়িয়া বেপারীপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে এজেন্ট থেকেও এ মামলায় চার্জশিটভূক্ত হয়েছে। আমরা মনে করি এ চার্জসিট আ’লীগকে চন্দনাইশে নিশ্চিন্ন করার গভীর ষড়যন্ত্র। থানা প্রশাসন এলডিপি, বিএনপি, জামায়াত ও হাইব্রিডদের সাথে মিলে এ নীল নক্সা বাস্তবায়ন করেছে। আমরা অভিলম্বে এ চার্জশিট বাতিলপূর্বক ষড়যন্ত্রমূলক মামলার প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি। অন্যথায় উদ্বুদ্ধ পরিস্থিতির জন্য প্রশাসন দায়ী থাকবেন।

এদিকে আজ ৮ জুলাই বিকালে উপজেলা আ’লীগের সভাপতির বাসভবনে তৃণমূল নেতাকর্মীদের একসভা পৌর আ’লীগের আহ্বায়ক এম কায়ছার উদ্দীন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। এতে আলোচনায় অংশ নেন, দক্ষিণ জেলা আ’লীগের সহ-সভাপতি চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান, আ’লীগ নেতা বলরাম চক্রবর্তী, সমীরন দাশ তপন, গাউস মোহাম্মদ জাবেদ মিল্টন, হুমায়ুন কবির, মাহাবুবুল আলম বাবুল, আবদুর শুক্কুর, ফরিদুল ইসলাম চৌধুরী, এস এম মোরশেদ, মাহাবুবুল আলম, মো. সেলিম, এস এম সায়েম, মো. বেলাল উদ্দীন প্রমূখ। সভায় চার্জসিটে সভাপতি ও যুগ্ম-সম্পাদকসহ আ’লীগ, যুবলীগ নেতাকর্মীর নাম অর্ন্তভূক্ত করায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়। সে সাথে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবির পাশাপাশি জেলা নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে আলোচনা সাপেক্ষে পরবর্তী কর্মসুচি ঘোষনা করা হবে বলে বক্তাগণ জানান।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.