দেশে যে কোন দুর্যোগ মোকাবিলায় সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছেঃ প্রধানমন্ত্রী

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশে এবারে বন্যা দীর্ঘস্থায়ী হতে পারে আশঙ্কা করে তা মোকাবিলায় সরকারের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি আছে বলে জানিয়েছেন ।

আজ বৃহস্পতিবার (২৩ জুলাই) সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে কক্সবাজার সদরে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য নবনির্মিত বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্প উদ্বোধন অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের প্রতিটি মানুষের আবাসের বন্দোবস্ত করছে সরকার। এছাড়া কক্সবাজারকে আধুনিক পর্যটন নগরী করে গড়ে তোলার কথা জানান সরকার প্রধান। করোনাকালে সবাইকে ঘরে-বাইরে মাস্ক পরে থাকার আহ্বান জানান তিনি।

বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আশ্রয়ণ প্রকল্পে ১ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ব্যায়ে ২৫৩ একর জমিতে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য আশ্রয়ণ প্রকল্প গড়ে তুলেছে সরকার। যেখানে রয়েছে পাঁচতলা বিশিষ্ট ১৯টি ভবন। আজ প্রথম ভাগে ৬০০ পরিবারকে বসবাসের জন্য চাবি হস্তান্তর করা হয়েছে নামমাত্র ১০০১ টাকা মূল্যে। প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ তদারকিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী। অনুষ্ঠানে কক্সবাজার থেকে স্থানীয় সংসদ সদস্য, প্রশাসন ছাড়া সেখানকার সাধারণ মানুষ যুক্ত হন।

সবগুলো ভবন নির্মিত হলে উদ্বাস্তু জীবনের অস্বাস্থ্যকর, নোংরা পরিবেশ ছেড়ে সাজানো পরিপাটি দালানে উঠবেন মোট প্রায় সাড়ে ৪ হাজার পরিবার। প্রতিটি ফ্ল্যাটে পানি, বিদ্যুৎ, গ্যাস সিলিন্ডারের সুবিধা থাকবে। প্রতিটি ভবনে থাকবে সৌর বিদ্যুতের প্যানেল।

খুরুশকুলে বাঁকখালী নদীর তীরে ২৫৩ একর জমির উপর গড়ে ওঠা এ বিশেষ আশ্রয়ণ প্রকল্পকে জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় আশ্রয়কেন্দ্র বলে দাবি করেছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন জানান, প্রকল্প এলাকায় ১৪টি খেলার মাঠ, সবুজ জায়গা, মসজিদ, মন্দির, প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পুলিশ ও ফায়ার স্টেশন, তিনটি পুকুর, নদীতে দু’টি জেটি, দুটি বিদ্যুতের সাবস্টেশন থাকবে।

এছাড়াও থাকবে ২০ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তা, ৩৬ কিলোমিটার ড্রেনেজ ব্যবস্থা, বর্জ্য পরিশোধন ও নিষ্কাশন ব্যবস্থাপনা, তীর রক্ষা বাঁধ, ছোট সেতু, পুকুর-খাল থাকবে পুরো প্রকল্প এলাকায়। আশ্রয়ণ প্রকল্পে যারা ফ্ল্যাট পাবেন তাদের ঋণ ও প্রশিক্ষণ দিয়ে অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী করে তোলা হবে। প্রকল্প এলাকায় একটি শুঁটকি মহালও থাকবে এবং এখানে পর্যায়ক্রমে বিক্রয় কেন্দ্র ও প্যাকেজিং শিল্পও গড়ে তুলবে সরকার।

ভবনগুলোর নাম প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই রেখেছেন। প্রথম ধাপে নির্মিত ভবনগুলোর নাম হলো-দোঁলনচাপা, কেওড়া, রজনীগন্ধা, গন্ধরাজ, হাসনাহেনা, কামিনী, গুলমোহর, গোলাপ, সোনালী, নীলাম্বরী, ঝিনুক, কোরাল, মুক্তা, প্রবাল, সোপান, মনখালী, শনখালী, বাঁকখালী, ইনানী ও সাম্পান।

প্রকল্প পরিচালক মো. মাহবুব হোসেন সাংবাদিকদের বলেন, এটাই দেশের সবচেয়ে বড় আশ্রয়ণ প্রকল্প এবং জলবায়ু উদ্বাস্তুদের জন্য দেশের প্রথম আশ্রয়ণ প্রকল্প। জলবায়ু উদ্বাস্তু পরিবারগুলোর জন্য এখানে যে পুনর্বাসন, এটাকে আমরা বিশ্বের বৃহত্তম জলবায়ু পুনর্বাসন প্রকল্প বলতে পারি। এ ধরনের প্রকল্প পৃথিবীতে বিরল।

২০১৯ সালে গ্লোবাল কমিশন অন অ্যাডাপটেশনের চেয়ারম্যান জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব বান কি মুনের এ প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করার কথাও উল্লেখ করেন প্রকল্প পরিচালক। একটি মানুষও গৃহহীন থাকবে না, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এ ঘোষণা বাস্তবায়নেরই অংশ এ আশ্রয়ণ প্রকল্প। এটি ছাড়াও গৃহহীনদের ঘর তৈরি করে দিতে সরকারের বিভিন্ন কার্যক্রম রয়েছে।

গৃহহীন ও ছিন্নমূল মানুষের পুনর্বাসনের জন্য ১৯৯৭ সালে ‘আশ্রয়ণ’ নামে প্রথম প্রকল্প গ্রহণ করেন তৎকালীন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার। এরপর ২০১০ সালে আওয়ামী লীগ সরকার আবার ক্ষমতায় আসলে আশ্রয়ণ-২ প্রকল্প শুরু হয়। এ প্রকল্পের মাধ্যমে ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ৩ লাখ ১৯ হাজার ১৪০টি পরিবার ঘর পেয়েছে।

অন্যান্য আশ্রয়কেন্দ্রগুলো পাকা ও আধাপাকা দালানের ব্যারাক আকারে তৈরি হলেও বহুতল ভবনের আশ্রয়ণ প্রকল্প এটিই প্রথম। প্রকল্পের নির্মাণ কাজের দায়িত্বে থাকা সেনাবাহিনীর দশম পদাতিক ডিভিশনের জিওসি এবং এরিয়া কমান্ডার মো. মাঈন উল্লাহ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, এটি অত্যন্ত নয়নাভিরাম একটি জায়গা। এ জায়গাটিকে সুরক্ষিত করার জন্য মাটিকে অনেক উঁচু করা হয়েছে। প্রতিটি ভবনের নিচের তলায় কোনো ফ্ল্যাট রাখা হয়নি। ফলে ঘূর্ণিঝড় হলে জলোচ্ছ্বাসের পানি ঢোকারও আশঙ্কা নেই।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.