বাঁশখালীতে মুক্তিযোদ্ধার প্রতি চরম অসম্মান, রাষ্ট্রীয় সম্মানের পরিবর্তে কবরে পুষ্পমাল্য

0

বাঁশখালী প্রতিনিধিঃ বাঁশখালীতে মৃত এক মুক্তিযোদ্ধার প্রতি চরম অসম্মান প্রদর্শন করা হয়েছে। জানাজা ও দাফনের সময় সব কিছু জানানো হলেও বাঁশখালী প্রশাসনের কেউ যায়নি গার্ড অব অনার বা রাষ্ট্রীয় সম্মান জানাতে। দাফনের আধা ঘন্টা পরে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা গিয়ে কবরে পুষ্পমাল্য দিয়ে মোনাজাত করে দুঃখ প্রকাশ করে দায় সেরেছে। এতে মুক্তিযোদ্ধার পরিবার ও এলাকাবাসীর মনে গভীর ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।

এ ঘটনা ঘটেছে বাঁশখালী উপজেলার সেখেরখীল গ্রামে। সেই বীর মু্ক্তিযোদ্ধা আর কেউ নন। তিনি বঙ্গবন্ধু হত্যার প্রথম প্রতিবাদকারী মৌলভী ছৈয়দ এর বড় ভাই ডা. আলী আশরাফ।

জানা যায়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু হত্যার চট্টগ্রামের প্রথম প্রতিবাদকারী ও চট্টগ্রাম ছাত্রলীগ, যুবলীগের প্রতিষ্টাতা সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী ছৈয়দ এর বড় ভাই মুক্তিযোদ্ধা ডা: আলী আশরাফ (৭৫) গত রবিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মেড়িকেলে ইন্তেকাল করেন ।

আজ সোমবার সকাল ১১টায় তার নামাজে জানাযার সময় নির্ধারণ করা হলেও পুলিশ, মুক্তিযোদ্ধাসহ অন্যান্যরা উপস্থিত হলেও প্রশাসনের কোন প্রতিনিধি উপস্থিত হননি। প্রশাসনের প্রতিনিধি সহকারি কমিশনার (ভুমি) মো: আতিকুর রহমান পৌছে জানাযার আধাঘন্টা পর । এ সময় লাশ কবরে নিয়ে যাওয়া হয় এবং দাফন কার‌্য সম্মন্ন করা হয়। এ সময় গার্ড অব অনার প্রদান করতে চাইলে স্থানীয়রা অস্বীকৃতি জানায় । তাতে জনগন ক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে ।

পরিবারের পক্ষ থেকে জানান, আজ সকাল ১১টায় মরহুমের নামাজে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাযা শেষে বাঁশখালীর দক্ষিণ শেখেরখীলর লালজীবন এলাকার হাছনি বাপের জামে মসজিদ সংলগ্ন কবরস্থানে দাফন করা হয়।

স্থানীয়রা জানান, মুক্তিযোদ্ধার লাশ জানাজার জন্য নির্ধারিত স্থানে নিয়ে যাওয়া হয় এবং নির্ধারিত সময় পেরিয়ে দাফনের সময় হয়ে গেলেও আসেনি উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে কেউই। দাফনকার্য শেষ হওয়ার পরই সহকারী কমিশনার (ভূমি) জানাজা স্থলে উপস্থিত হন।

এনিয়ে এলাকাবাসী ও মৃতের স্বজনদের মধ্যে দেখা দেয় চরম অসন্তোষ ও ক্ষোভ। এসময় কিছুসময় সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলামের উপর ক্ষোভ ঝাড়েন এলাকাবাসী।

মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের ছোট ছেলে জহির উদ্দীন মুহাম্মদ বাবর বলেন, মারা যাওয়ার পর আমার বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফের মৃত্যুর সংবাদ এবং জানাযার সময় আমরা উপজেলা প্রসাশনকে অবহিত করি।

কিন্তু প্রসাশনের পক্ষ থেকে আমার বাবাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হয়নি। জানাযার প্রায় ৩০ মিনিট পর উপজেলা প্রসাশনের পক্ষ থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) আতিকুল ইসলামকে মুক্তিযোদ্ধার দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর জানাযাস্থলে পাঠান।

তিনি আরো বলেন, জানাজার নির্দিষ্ট সময় অতিবাহিত হওয়ার পরেও কিছু সময় উপজেলা প্রশাসনের জন্য অপেক্ষা করে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা ছাড়াই দাফন কার্য সম্পন্ন করি। আমি মনে করি এটা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। একজন মুক্তিযোদ্ধাকে এভাবে অসম্মান জানাবে কখনও ভাবিনি।

এ ব্যাপারে বিকেলে বাঁশখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোমেনা আক্তার দুঃখ প্রকাশ করে সাংবাদিকদের বলেন, আমি পরিষদের অন্য একটি জরুরী মিটিং থাকায় যেতে পারিনী। পরে এ খবর শুনে সেখানে পৌঁছি তখন কবর দেওয়া হয়ে যায়। তখন পরিবারের সদস্যদের সন্মতিতে কবরে পুষ্পস্তবক ও কবর জেয়ারত করে চলে আসি । যথাসময়ে পৌঁছতে না পারায় আমি দু:খ প্রকাশ করছি ।

বাঁশখালী উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মুক্তিযোদ্ধা অধ্যাপক আবুল হাশেম বলেন, ‘আমরা উপজেলা প্রশাসনকে জানাযার সময় জানিয়েছি। তারপরেও কেন তারা সঠিক সময়ে উপস্থিত হলনা তা আমাদের বোধগম্য হচ্ছে না। এ ঘটনায় আমরা মুক্তিযোদ্ধারা চরমভাবে হতাশ হয়েছি । বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মাহফুজুল হক চৌধুরী এ ঘটনার প্রতিবাদ জানান ।

এদিকে বিলম্বের কারন জানতে সহকারি কমিশনার (ভুমি ) মো: আতিকুর রহমান বলেন, জানাযায় অসংখ্যা মানুষের আগমন হওয়া এবং রাস্তাটি সরু হওয়ায় আমার বহনকারি গাড়ি ডুকানো সম্ভব হয়নি । ফলে প্রায় এক কিলোমিটার জায়গা হেটে গিয়ে আমি পৌছতে ২৬ মিনিট দেরি হয়। আমি তাদের গার্ড অব অনার জানাতে চাইলে তারা বিলম্বের কারনে অস্বীকৃতি জানায়।

বীর মুক্তিযোদ্ধা ডা.আশরাফ আলীর কবরে পুষ্পমাল্য আর্পন ও জেয়ারতের সময় সহকারি কমিশনার (ভুমি ) মো: আতিকুর রহমান, বাঁশখালী থানার ওসি তদন্ত মো: কামাল উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামীলেিগর সাধারন সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর, মুক্তিযোদ্ধা, আবদুর রাজ্জাক, অধ্যাপক আবুল হাশেম মানিক, আহমদ ছফা, শেখেরখীল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ইয়াছিন, চাম্বল ইউনিয়নের চেয়ারম্যানমুজিবুল হক চৌধুরী সহ পরিবারের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন ।

উল্লেখ্য, মুক্তিযোদ্ধা ডা. আলী আশরাফ ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যার চট্টগ্রামের প্রথম প্রতিবাদকারী ও জেলা যুবলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ মৌলভী সৈয়দের বড় ভাই।

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.