তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবেঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ কক্সবাজার জেলার টেকনাফে মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যাকাণ্ডের ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ করে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন তদন্ত প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানিয়েছেন ।

আজ সোমবার (৭ সেপ্টেম্বর) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে তদন্ত প্রতিবেদন হস্তান্তর করেন কমিটির প্রধান চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার (উন্নয়ন) ও যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান।

প্রতিবেদনে ১৩টি সুপারিশ রয়েছে। মূল প্রতিবেদন ৮০ পৃষ্ঠার; তবে এর সঙ্গে ৫৮৬ পৃষ্ঠার সংযুক্তি রয়েছে। হত্যার সঙ্গে দায়ীদেরও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে তদন্ত কমিটি সূত্রে জানা গেছে। তবে তদন্ত প্রতিবেদনের বিষয়বস্তু নিয়ে কোনো তথ্য দেননি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কিংবা কমিটি প্রধান।

সিনহা হত্যার পরপরই চট্টগ্রামের অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনারকে আহ্বায়ক করে চার সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, সরেজমিন তদন্ত করে কারণ, উৎস, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে করণীয় নিয়ে সার্বিক বিষয় বিশ্লেষণ করে সুস্পষ্ট মতামতসহ প্রতিবেদন দিতে বলা হয়।

তিনি বলেন, কমিটি পূর্ণাঙ্গ তদন্ত রিপোর্ট নিয়ে এসেছে। রিপোর্টে কী আছে আমরা এখনও দেখিনি। তারা আমাদের কাছে জমা দিয়ে তাদের কার্য শেষ হয়েছে জানিয়ে যাবেন। পরবর্তী সময়ে আমাদের সচিব মহোদয় এগুলো বিশ্লেষণ করে যেখানে যেটা প্রয়োজন সেই অনুযায়ী কাজ করবেন।

আপনারা নিশ্চয় জানেন, এটার পুলিশি তদন্ত চলছে, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী। সেই কারণে আমরা প্রকাশ্যে কিছু জানাতে পারবো না। আমরা আদালতকে এটার সম্বন্ধে জানিয়ে দেব, আদালত মনে করলে এটাকে আমাদের কাছ থেকে অফিসিয়ালি নিয়ে যাবেন- এটাই হয়ে থাকে।

আসাদুজ্জামান খান বলেন, আদালত তদন্তের জন্য হয়তো এটা নিয়েও নিতে পারেন। আমরা এ সম্পর্কে কিছু জানি না, এটা আদালতের এখতিয়ার। যাদের নামে রিপোর্ট আসবে, পরবর্তীতে করণীয় কী আপনাদের জানাবো।

এই হত্যা পরিকল্পিত কি না- জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তদন্ত রিপোর্ট আমার কাছে মাত্র এলো। এর ভেতর কী লেখা আছে, কী উল্লেখ আছে- আমরা তো জানি না কিছু। আমরা বের করে নেই, এগুলো স্টাডি করি তারপর আপনাদের জানাতে পারবো।

সুপারিশ কী এসেছে- এ বিষয়ে তিনি বলেন, আমরা তো এখনও দেখিনি। বন্ধ অবস্থায় আছে।

এ ধরনের ঘটনা যেন আর না ঘটে সেজন্য কী উদ্যোগ নিয়েছেন- এ বিষয়ে আসাদুজ্জামান খান বলেন, দেখুন, এটা দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। আমরা মনে করি এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটুক। কেন ঘটেছে, কীভাবে ঘটেছে এগুলো পুরোপুরি বিশ্লেষণ এখানে রয়েছে। সেগুলো আমাদের স্টাডি করতে হবে। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী কাজ করছে, সবাই সজাগ রয়েছে, আমরা মনে করি যে এ ধরনের ঘটনা আর যাতে না ঘটে, আমরা সবাই সজাগ রয়েছি।

দুই বাহিনীর (পুলিশ ও সেনাবাহিনী) মধ্যে গুজব ছড়িয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি করা হচ্ছে- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে মন্ত্রী বলেন, ‘দুই বাহিনীর মধ্যে গুজব ছড়িয়ে এদের অসস্তুষ্ট করবে আমরা এ ধরনের উপাদান পাইনি। আমরা মনে করি চকৎকার একটি পরিবেশ রয়েছে, আমরা দেখেছি পুলিশ প্রধান ও সামরিক বাহিনীর প্রধান দুজনে মিলে কক্সবাজারে গেছেন। তারা ব্রিফ করেছেন, কাজেই দুই বাহিনীর ভেতরে কিছু মতপার্থক্য রয়েছে এগুলো সত্য নয়। চমৎকার পরিবেশ রয়েছে, দুই বাহিনী একসাথে কাজ করছে।’

একটি ভিডিও বের হয়েছে, সেখানে দেখা গেছে গ্রেফতার পুলিশ কর্মকর্তা প্রদীপ বলছেন, আমাকে নির্যাতন করা হয়েছে- এ বিষয়ে জানেন কি-না জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘ভিডিও কোথা থেকে কী হচ্ছে আমরা সেগুলো নজরে আনি না। তথ্যভিত্তিক যেসব সংবাদ আমাদের কাছে আসে সেগুলোই আমরা নজরে আনি, সেগুলোই আমরা গ্রহণ করি।

গত ৩১ জুলাই রাত ১০টার দিকে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভের বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশ পরিদর্শক লিয়াকত আলীর গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। এ ঘটনা প্রকাশের পর দেশজুড়ে নিন্দার ঝড় উঠলে ঘটনার উৎস, কারণ ও ভবিষ্যতে এমন ঘটনা যেন না ঘটে সে বিষয়ে সুপারিশ দিতে ২ আগস্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে একটি চার সদস্যের কমিটি গঠন করে।

কমিটির অন্য সদস্যদের মধ্যে ছিলেন- সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রতিনিধি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর লে. কর্নেল এস এম সাজ্জাদ হোসেন, বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর প্রতিনিধি অতিরিক্ত উপমহাপরিদর্শক জাকির হোসেন খান ও কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের প্রতিনিধি অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ শাজাহান আলী।

সাত কর্মদিবস অর্থাৎ ১০ আগস্টের মধ্যে কমিটিকে প্রতিবেদন জমা দেয়ার সময় বেঁধে দেয় মন্ত্রণালয়। এরপর প্রথমবার কমিটির সময় বাড়ানো হয় ২৩ আগস্ট পর্যন্ত। পরে কমিটির আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সময় ফের ৩১ আগস্ট পর্যন্ত বাড়ানো হয়।

এ সময়ের মধ্যে ঘটনার অন্যতম অভিযুক্ত টেকনাফ থানার বহিষ্কৃত ওসি প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য গ্রহণ করতে না পারায় কমিটির মেয়াদ সর্বশেষ ৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ানো হয়। ২ সেপ্টেম্বর কমিটি কক্সবাজার জেলা কারাগার ফটকে প্রদীপ কুমার দাশের বক্তব্য নেন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.