বাঁশখালীতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে আত্মসমর্পণ করলেন ৩৪ জলদস্যু
দিলীপ তালুকদার, বাঁশখালী থেকে ফিরেঃ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মো. আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, জলদস্যু ও বনদস্যু বাহিনীর সদস্য যারা এখনও আত্মসমর্পণ করেননি, তারা এখনও সময় আছে দ্রুত আত্মসমর্পন করুন। না হলে পরিণতি ভালো হবে না। আমরা উপকূল এলাকায় কোন জলদস্যু থাকতে দেব না। কোথাও কোন জলদস্যু লুকায়িত থাকতে পারবেন না।
তিনি আরো বলেন, যারা আত্মসমর্পণ করেছেন, তাঁদের হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া অন্যান্য মামলা থেকে পর্যায়ক্রমে মুক্তি দেয়া হবে। অন্য মামলা গুলোও আমরা দেখবো। আর যারা আত্মসমর্পণ করেননি, তাদের স্থান এদেশে হবে না। বনদস্যু আর জলদস্যু যারা আত্মসমর্পন করেননি তাদের তালিকাও আমরা হাতে পেয়েছি। কাউকে রেহাই দেওয়া হবে না। যারা আজ আত্মসমর্পণ করছেন তাদের আমরা সাধুবাদ জানাচ্ছি। তাদের কর্মসংস্থানের জন্য সরকার প্রস্তুত।
আজ বৃহস্পতিবার (১২ নভেম্বর) দুপুরে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে র্যাব-৭ চট্টগ্রামের উদ্যোগে আয়োজিত জলদস্যু আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী উপরোক্ত কথা গুলো বলেন।
তিনি আরও বলেন, আত্মসমর্পণের পর সরকারিভাবে তাদেরকে আর্থিক প্রণোদনাসহ পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করা হবে। আবারও তারা অপরাধে যুক্ত হচ্ছে কি না, সে ব্যাপারেও নজরদারি থাকবে। সরকারের সক্ষমতা অনুযায়ী স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে চাওয়া এসব মানুষদের সহযোগিতা করা হবে।
বাংলাদেশ এখন সারাবিশ্বে উন্নয়নের রোল মডেল উল্লেখ করে মন্ত্রী আরও বলেন, এই দেশকে দস্যু, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত করে গড়ে তুলতে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনায় এদেশকে দুর্নীতি ও সন্ত্রাসমুক্ত করা হবে।
র্যাব-৭ এর অধিনায়ক লে. কর্নেল মো.মশিউর রহমান জুয়েলের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রনালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি শামশুল হক টুকু এমপি, চট্টগ্রাম-১৬ বাঁশখালী আসনের সংসদ সদস্য আলহাজ্ব মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী এমপি, মহেশখালী কুতুবদিয়া আসনের সংসদ সদস্য আশেক উল্লাহ রফিক এমপি, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমদ, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক তোফাইল মোস্তাফা সরওয়ার, চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি আনোয়ার হোসেন, চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এএসএম শরীফ হোছাইন, চট্টগ্রাম জেলা পুলিশ সুপার রশিদুল হক প্রমুখ।
এর আগে মন্ত্রী সকাল ১১ টায় র্যাবের একটি হেলিকপ্টার যোগে বাঁশখালীর চাম্বল উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অবতরণ করেন। সেখান থেকে সড়ক পথে গাড়িবহরসহ বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠানস্থলে আসেন।
আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে আব্দুল হাকিম প্রকাশ বাইশ্যা ডাকাত নিজের অনুভূতির কথা প্রকাশ করে বলেন, খারাপ মানুষের পাল্লায় পড়ে প্রায় ৫/৬ বছর আগে এই পথে গিয়েছিলাম। অন্ধকার পথে পা বাড়িয়ে নিজে নানা বঞ্চনার শিকার হওয়ার পাশাপাশি পরিবারের সদস্যদেরও করেছি ঘৃণার পাত্র। তবে দীর্ঘ সময় গড়িয়ে একসময় বুঝেছি- আমার বেছে নেওয়া পথটি ছিলো ভুল পথ।
সুযোগ পেয়ে এখন আমরা অনেকে আত্মসমর্পণ করেছি। অন্ধকার থেকে আলোর পথে ফিরে আসতে চাই। আমরা র্যাবের পক্ষ থেকে ভালো আচরণ পেয়েছি। এজন্য র্যাবকে ধন্যবাদ জানাই প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে তিনি আরো বলেন, আমাদেরও পরিবার আছে। তাই আমাদেরকে সহায়তা করার জন্য সরকারের প্রতি অনুরোধ জানাই। আমি সবার পক্ষ থেকে আমাদের কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চাইছি।
অনুষ্ঠানে চট্টগ্রামের বাঁশখালী উপজেলার ছনুয়া এলাকার কুখ্যাত ডাকাত ইউনুছ মেম্বার বাহিনীর প্রধান ইউনুছ ও আব্দুল হাকিম বাইশ্যা ছাড়াও মহেশখালী, চকরিয়া, কুতুবদিয়া এলাকার ৩৪ জলদস্যু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের কাছে অস্ত্রসহ আত্মসমর্পণ করেন।
র্যাব জানায়, সবর্মোট ১১ বাহিনীর ৩৪ জন আত্মসমর্পন করেছে। জলদস্যু দলের সদস্যরা এ সময় দেশি-বিদেশি ৯০ টি আগ্নেয়াস্ত্রসহ ২ হাজার ৫৬ টি গুলি ও কার্তুজ জমা দেন। আত্মসমর্পণ করা জলদস্যুদের বাড়ি কুতুবদিয়া, মহেশখালী, চকরিয়া ও বাঁশখালী এলাকায়।
একই অনুষ্ঠানে এর আগে আত্মসমর্পণ করা বাইশ্যা বাহিনী, খলিল বাহিনী, রমিজ বাহিনী, বাদশা বাহিনী, জিয়া বাহিনী, কালাবদা বাহিনী ও ফুতুক বাহিনীসহ অন্যান্য ১১ জলদস্যু বাহিনীর প্রত্যেককে আর্থিক অনুদান দেওয়া হবে বলে ঘোষনা দেওয়া হয়।