কেডিএস এর চাকরী ছেড়েও ১ বছরে ২৬ মামলা, জেলে আছেন ১ বছর ধরে

0

সিটি নিউজঃ দেশের শীর্ষস্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠান কেডিএস গ্রুপের ‘রোষানলে পড়ে’ প্রতিষ্ঠানটির সাবেক এক কর্মকর্তা একবছর ধরে কারাবন্দি হয়ে আছেন। তার বিরুদ্ধে এক বছরে ২৬টি মামলা দায়েরের অভিযোগ করেছে তার পরিবার। কারাবন্দি ওই ব্যক্তি বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত মার্কিন নাগরিক।

আজ বুধবার (২৫ নভেম্বর) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেছেন তার বাবাসহ পরিবারের সদস্যরা। কারাবন্দি সন্তানের মুক্তি চেয়ে এবং মামলা-হয়রানির হাত থেকে বাঁচানোর জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আকুতি জানিয়েছেন কারাবন্দি মুনির হোসেন খাঁন এর পিতা চট্টগ্রাম বন্দরের সাবেক কর্মকর্তা ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, আমেরিকান পাসপোর্টধারী মুনির হোসেন খাঁন। ব্যাংক অব আমেরিকা ফ্লোরিডায় সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসাবে কাজ করেছেন ২০০৬ সাল পর্যন্ত। উচ্চশিক্ষিত এ যুবক বাল্য বন্ধু কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমানের অনুরোধে স্ত্রী সন্তান নিয়ে আমেরিকা থেকে দেশে চলে আসেন। ২০০৭ সালে যোগ দেন কেওয়াই স্টিল মিলের নির্বাহী পরিচালক হিসেবে। অল্প সময়ে কোম্পানির উন্নতির কারণে পদোন্নতিও হয় তার। ‘পেইড ডিরেক্টর’ হিসেবে কাজ করতে থাকেন কেওয়াই স্টিল মিলে।

তিনি বলেন, শেষ পর্যন্ত এ চাকরি আর তার ঠেকেনি। কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের দ্বিতীয় ছেলে ইয়াসিন রহমান টিটু ভারতীয় নাগরিক হত্যার দায়ে যাবজ্জীবন সাজা খাটছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে। সেখানেই ব্যবসায়িক নীতি-নির্ধারণী সভা হতো। ২০১৮ সালের ১১ এপ্রিল বিকেলে কেন্দ্রীয় কারাগারে কনফারেন্স রুমে প্রতিষ্ঠানের আরো ১২ কর্মকর্তাসহ বোর্ড মিটিং বসে। প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বাকবিতণ্ডায় মুনিরকে বেধড়ক মারধর করে দেয়া হয় পরিবার নিশ্চিহ্নের হুমকি।

তিনি বলেন, এ ঘটনার পর কেডিএস গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সেলিম রহমানকে বিষয়টি ইমেইলে জানালে তিনি তাঁর কোন প্রতিউত্তর দেননি। পরে কেডিএস গ্রুপের চেয়ারম্যান খলিলুর রহমানের সাথে এ ব্যপারে দেখা করার অনুরোধ জানালেও তারা দেখা করতে রাজি হননি। পরবর্তীতে সেলিম রহমানের নির্দেশেই ২০১৮ সালের ২০ জুন চাকরি ছাড়েন। মেইল ও রেজিস্ট্রি ডাকযোগে পাঠান পদত্যাগপত্র। আবেদন করেন তার সমস্ত পাওনা, বকেয়া বেতনের জন্য। ছাড়পত্রের জন্যও আবেদন করে পাওয়া যায়নি কোন সাড়া।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি আরো বলেন, চাকরি ছাড়ার দেড় বছর পরে অর্থিক টানাপোড়নে পড়ে পরামর্শক হিসেবে যোগদেন এ্যাপোলো স্টিলে। তার নেতৃত্বেই কেওয়াই স্টিলের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে কোম্পানিটি। এরপর থেকেই নেমে আসে তার জীবনে বড় ঝড়। প্রথমে বায়েজিদ থানায় গাড়ি চুরির মামলা। পরে এ মামলায় জামিন নিতে না নিতেই আরো দুটি ফৌজদারি মামলায় তাকে পাঠানো হয় জেলে। এ পর্যন্ত তার বিরুদ্ধে বায়েজিদ থানায় ৫টি, ঢাকার গুলশান থানায় ১টি ও চট্টগ্রাম মেট্টোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আবু সালেহ মোহাম্মদ নোমানের কোর্টে ১৯টি মামলা করেছে কেডিএস গ্রুপ। ২৫টি মামলার মধ্যে ২০টি মামলায় মুনির হোসেন খাঁন জামিনে আছেন।

তিনি বলেন, আবার ছেলে নয়, মামলায় আসামি করা হযেছে আমাকে ও আমার ছোট ছেলেকেও। এসব মামলায় তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণা, অর্থ আত্মসাৎসহ ফ্যাক্টরির জন্য কাঁচামাল আমদানির সময় রপ্তানিকারক থেকে কমিশন নেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। আমেরিকান দূতাবাসও উদ্বেগ জানিয়েছে এমন ঘটনায়।

কেডিএস গ্রুপের মামলার অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট-এমন দাবি করে বেশ পক্ষে কিছু যুক্তিও দিয়েছেন তিনি। প্রশ্ন তোলেন কোম্পানির অডিট রিপোর্ট, মামলার শুরুতে কোম্পানির প্রসিডিউর, মালিক ও কোম্পানির ম্যানেজিং ডিরেক্টরের ভূমিকা নিয়েও।

মুনিরের বাবা ক্যাপ্টেন মোয়াজ্জেম হোসেন খাঁন বলেন, ‘মুনির হােসেন খান যতদিন কোম্পানির দায়িত্বে ছিল ততদিন কোম্পানি অডিট রিপাের্ট পরিষ্কার। যদি ৪০০ কোটি টাকা কোম্পানি থেকে সরানাে হয় তাহলে তা অডিট রিপাের্টে নাই কেন? অডিট মুনির হােসেন খান করেনি, তাহলে কী কেডিএস ভুল অডিট রিপাের্ট সরকারকে জমা দিয়েছে? কেডিএস-এর অভিযােগ মুনির ৪০০ কোটি টাকা ১০ বছরে আত্মসাৎ করেছে? এতদিন কোম্পানি মালিক, একাউন্ট কোথায় ছিল? কোম্পানি ম্যানিজিং ডিরেক্টর কোথায়? কেউ যদি ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করে তাহলে তার কী দরকার আমেরিকান পার্সপাের্ট নিয়ে দেশে বসে অন্য নতুন কোম্পানিতে চাকরি করার! চাকুরি ছাড়ার পর দিনই আমেরিকা পালিয়ে গিয়ে আয়েশী জীবন করতে পারত। যে কোম্পানির ৪০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছে তার একই কোম্পানির ১৬ লাখ টাকার দামের গাড়ি চুরি করার কি দরকার? ’

তিনি বলেন, ‘মুনির যতদিন কোম্পানিতে কাজ করেছে, এমনকি চাকুরি ছাড়ার পরও কোনােদিন কোম্পানি কোনাে অভিযােগপত্র দেয়নি। নিয়ম অনুযায়ী আগে অভিযােগপত্র দিবে তারপর মামলা করবে, মুনিরের প্রতি কেডিএস অভিযােগপত্র কোথায়? কেডিএস-এ চাকুরি করেছে মুনির, কিন্তু মুনিরের স্ত্রী, মুনিরের ৭৭ বছরের বাবা, মুনিরের ছােটভাইকেও মামলা দিয়েছে কেন? কোম্পানির সাথে তাে এদের কোন সম্পর্ক নাই৷ কেডিএস যদি অভিযােগ করার সৎ সাহস সাথে তাহলে ১০ দিন পর পর একটা নতুন মামলা করে ২৬ টি মামলা দেওয়ার কী দরকার? মুনির একটাতে জামিন পেলে পরের দিন নতুন একটি মামলা দেয়, সব মামলাগুলাে একই ধরণের, সব মিলিয়ে একবারই মামলা কেন দেয় না? মুনির আইনগতভাবে আদালতে মামলা লড়তে প্রস্তুত?’

তিনি বলেন, মুনিরকে আজ পর্যন্ত ১১ মাসে ১০-১৫ দিন পর পর করে ২৬টি মামলা দিয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,‘ মুনির একটা জামিন নিলে নূতন ২টা মামলা দেয়, যেন কোনােভাবেই মুনির জেল থেকে বের হতে না পারে। মুনিরকে জেলে ঢুকিয়ে রাখতে চায় কেডিএস? মুনির-কে এত কী ভয়?

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.