কেন্দ্রের বাইরে কড়াকড়িঃ ভেতরে ক্যাডারদের দখল

0

সিটি নিউজঃ আজ হয়ে গেল চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। আগের দিন রাত পর্যন্ত নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বেশ উৎসবমুখর পরিবেশ ছিল লক্ষ্যনীয়। ভোট গ্রহনের এক ঘন্টার মধ্যে আমবাগান কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে সংঘর্ষে আলাউদ্দিন আলো (২৮) নামে এক পথচারী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।

সকাল ১০ টায় ২৭নং ওয়ার্ডের আগ্রাবাদ সিটি শপিং মহিলা কেন্দ্রে কোন ভোটারকে পাওয়া যায়নি। বাইরে কেন্দ্রের চারপাশে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর অনুসারীদের সরব অবস্থান দেখা যায়। একই অবস্থা ছিল আগ্রাবাদ তালেবিয়া স্কুল’এর পুরুষ কেন্দ্রটিতে। এ ওয়ার্ডের সদ্য সাবেক কাউন্সিলর ও স্বতন্ত্র কাউন্সিলর প্রার্থী এইচ এম সোহেলের সমর্থক ও স্থানীয় ভোটারদের ভোটদান থেকে বিরত রাখার অভিযোগ পাওয়া যায়।

তার এক এজেন্ট বলেছেন, তিনি সকাল ১০টায় কেন্দ্র থেকে বের হয়ে গেছেন। তার অভিযোগ, প্রত্যেকটি কেন্দ্রের ভোটদানের গোপন কক্ষে বহিরাগত লোকজন অবস্থান নিয়েছে। ইভিএমে ভোটার তার ফিঙ্গার দেয়ার পরই জোরপুর্বক প্রতীক পছন্দ করছে তারা। সকাল ১০ টা ৩০ মিনিটে ২৪নং ওয়ার্ডের টিএন্ডটি স্কুলের কেন্দ্রেও শোনা গেছে একই অভিযোগ। এসব কেন্দ্র থেকে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীর সমর্থক ও ক্যাডাররা প্রতিপক্ষের এজেন্টদের বের করে দেয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়।

সকাল ১০টা ৪০ মিনিটে আগ্রাবাদ সিজিএস কলোনী কেন্দ্রে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ছাড়া অন্য কোন প্রার্থীর এজেন্টকে পাওয়া যায়নি। বাইরে কোন ভোটারকে দেখা যায়নি। যারা ভোট দিতে গিয়েছেন, কেউ নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি বলে অভিযোগ অনেক ভোটারদের। তাদের অভিযোগ,’ বাইরে র‌্যাব-পুলিশ ও বিজিবির কড়াকড়ি থাকলেও ভেতরে বহিরাগত ক্যাডাররা কেন্দ্র দখল করে রেখেছে’। সকাল ১০ টা ৫০ মিনিটে ২৮নং ওয়ার্ডের কমার্স কলেজ কেন্দ্রে স্থানীয়দের অভিযোগ,’ ভোট দিতে পারছি না। পুলিশকে বলেও কোন সহযোগিতা পাওয়া যাচ্ছে না। যারা ভোট দিতে গেছে, তাদেরকেও পছন্দমত প্রার্থীকে ভোট দিতে পারেননি। সব কেন্দ্রে বহিরাগত লোকজন নিয়ন্ত্রনে নিয়েছে। অথচ বাইরে ব্যাপক সংখ্যক পুলিশ ও বিজিবির উপস্থিতি ছিল দেখার মত।

সকাল ১১টায় আগ্রাবাদ ঢেবারপাড় কেন্দ্রের বাইরে সরকার দলীয় কাউন্সিলর প্রার্থীর পক্ষে ক্যাডারদের মহড়া লক্ষ্য করা গেছে। এ কেন্দ্রেও কোন ভোটার নেই। সকাল ১১টা ১৫ মিনিটে সিটি ব্যাংক আগ্রাবাদ শাখায় এক কর্মকর্তার সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন,’ ভোটের দিন অফিস খোলা রাখার সিদ্ধান্তটি মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলেছে। আমি কাপ্তাই রাস্তার মাথা থেকে ব্যাংকে এসেছি। খরচ হয়েছে পাঁচ শ টাকারও বেশি। নির্বাচন কমিশন বলেছিল রাস্তায় যানবাহন চলবে, কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। রাস্তায় গনপরিবহন নেই। দেখেন ব্যাংকের মধ্যে কোন গ্রাহক নেই, লেনদেন শূণ্য। মানুষকে কষ্ট দেওয়ার মানে হয় না’। সকাল ১১টা ২০ মিনিটের সময়’ আগ্রাবাদ তালেবিয়া স্কুল কেন্দ্রের পাশে এসে থামে সাবেক মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন এমপি’র গাড়ি। স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে তিনি কথা বলে ভোটের খবরাখবর জানতে চান’’। এর পর তিনি এক্সেস রোড়, বড়পোল হয়ে পোর্ট কানেক্টিং রোড় ধরে নীমতলার দিকে যান।

ভোটার ও স্থানীয় লোকজনের প্রশ্ন ’কি দরকার ছিল এই তামাশার নির্বাচনের। এর পর বড়পোল থেকে হালিশহর রোড় হয়ে বেপারীপাড়ার দিকে আসতে কথা হয় একজন ব্যবসায়ীর সঙ্গে। তিনি সকাল ৯টায় ভোট দিয়েছেন বলে জানান। তবে ভেতরে জোরপুর্বক ভোট গ্রহনের কথা স্বীকার করেন। একজন ভোটার অভিযোগ করেন,’ তালেবিয়া স্কুল কেন্দ্রে আঙ্গুলের ছাপ দিয়েছি। কিন্তু ভোট দিয়েছে অন্য কেউ। এ রকম নির্বাচন কি চট্টগ্রামবাসী চেয়েছিল? সারাজীবন আওয়ামী লীগ করলাম। এখন আমার ভোটটি আমি দিতে পারলাম না’।

বিকালে আগ্রাবাদ পান্না পাড়া হয়ে মিস্ত্রি পাড়া বেশ কয়েকটি সেন্টারের সামনে সমর্থকদের জটলা। রাস্তায় তখনও গনপরিবহন দেখা মেলেনি। কথা হয় বিভিন্ন পথচারী ও স্থানীয়য় লোকজনের সঙ্গে। প্রত্যেকের এক বাক্যে অভিযোগ, নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী ও তাদের সমর্থকদের বেপরোয়া মারমুখী আচরণ ওই প্রার্থীর জন্য সুখবর বয়ে আনলেও আওয়ামী লীগের অনেক একনিষ্ট সমর্থকদের মনে কষ্ট দিয়েছে।

সিটি নিউজ/জিএসটি

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.