‘এখন আর নিজেদেরকে ছিটের বাসিন্দা মনে করবেন না, বলবেন না’

0

সিটিনিউজবিডি : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহলবাসীর দুঃখের দিন-রাত শেষ; আলোর পথে তাদের যাত্রা শুরু হয়েছে। বিলুপ্ত ছিটমহলবাসী এখন রাষ্ট্রের নাগরিক। দাসিয়ারছড়া এখন ছিটমহল নয়; এটি বাংলাদেশের অন্তর্গত ফুলবাড়ীর এলাকা। আপনারা এখন আমাদের ফুলবাড়ী উপজেলার এক্গুচ্ছ ফুল।

আজ বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে কুড়িগ্রামের বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার কালিরহাট বাজার সংলগ্ন প্রস্তাবিত গার্লস হাইস্কুল মাঠে এক সুধী সমাবেশে একথা বলেন তিনি।

দেশের নতুন নাগরিকদের উদ্দেশ্যে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারা ভুলেও এখন আর নিজেদেরকে ছিটের বাসিন্দা বা ছিটি মনে করবেন না এবং ভুলেও বলবেন না।

এর আগে দাসিয়ারছড়ার ১৯০৬টি পরিবারের জন্য বিদ্যুৎ সংযোগ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। ওই এলাকার ৬৪৩টি ঘরে আজই প্রথম বৈদ্যুতিক আলো জ্বলবে। এছাড়া চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই সব ঘরেই বিদ্যুৎ সংযোগ দেওয়া হবে।

সকালে ঢাকা থেকে হেলিকপ্টারে কুড়িগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তাকে বহনকারী হেলিকপ্টারটি সকাল সাড়ে ১০টার দিকে ফুলবাড়ী উপজেলায় নির্মিত হেলিপ্যাডে অবতরণ করে। পরে সেখান থেকে সড়ক পথে ১৯ কিলোমিটার পাড়ি দিয়ে সকাল ১১টার দিকে প্রস্তাবিত মুজিব-ইন্দিরা ইউনিয়নে (সদ্য বিলুপ্ত ছিটমহল দাসিয়ারছড়া) প্রবেশ করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধানমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে দীর্ঘ সময় নাগরিক সুবিধাবঞ্চিত দাসিয়ারছড়ার হাজারো মানুষের মাঝে বাঁধভাঙ্গা উচ্ছ্বাস আর আনন্দের হিল্লোল দেখা গেছে। ১৯৬৯ সালে ও ১৯৭৪ সালে বঙ্গবন্ধু কুড়িগ্রাম জেলা সফর করলেও মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ায় ছিটমহলে যেতে পারেননি। এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তিনবার কুড়িগ্রাম সফর করেছিলেন। কিন্তু ৬৮ বছরে আজই প্রথম কোনো সরকারপ্রধান হিসেবে তিনি পা রাখলেন বিলুপ্ত দাসিয়ারছড়া ছিটমহল এলাকায়।

এরপর সকাল ১১টা ৬টা মিনিটে সুধী সমাবেশের মঞ্চে উপস্থিত হন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বক্তব্য শুরুর আগে স্থানীয় ৫ জনের হাতে সোলার হোম সিস্টেম তুলে দেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনাদের ৬৮ বছরের দুঃখ-বঞ্চনা কীভাবে লাঘব করা যায়- তার জন্যই আমি আজ এখানে এসেছি। আপনারা যেন অন্ধকারে না থাকেন সেজন্য ব্যবস্থা নিয়েছি। আড়াই হাজার পরিবারকে পল্লী বিদ্যুতের মাধ্যমে বিদ্যুৎ দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি।

তিনি বলেন, আপনাদের এলাকায় তিনটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নির্মাণ কাজ শুরু হয়েছে। হাইস্কুল, মসজিদভিত্তিক শিক্ষা ব্যবস্থার উদ্যোগ নিয়েছি। চিকিৎসা ব্যবস্থার জন্য উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। পঞ্চগড়, নীলফামারী, কুড়িগ্রামে কমিউনিটি ক্লিনিকের ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া কাঁচা রাস্তা পাকা করার ব্যবস্থা করা হয়েছে।

দাসিয়ারছড়া থেকে সড়ক পথে ফুলবাড়ী উপজেলা সদরে এবং সেখান থকে হেলিকপ্টারে কুড়িগ্রাম জেলা সদরে যাবেন প্রধানমন্ত্রী। আজ বিকেলে কুড়িগ্রাম সরকারি কলেজ মাঠে আওয়ামী লীগ আয়োজিত জনসভায় যোগ দিয়ে ১৫টি উন্নয়ন কাজের উদ্বোধন ও ১৬টি কর্মকাণ্ডের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করবেন তিনি। জনসভা শেষে বিকেলে ঢাকায় ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ১ আগস্ট কুড়িগ্রাম জেলায় অন্তর্ভুক্ত হয়েছে ১২টি ছিটমহল। এর মধ্যে ফুলবাড়ী উপজেলায় অবস্থিত দাসিয়ারছড়া সবচেয়ে বড়। এক হাজার ৬৪৩ দশমিক ৪৪ একর আয়তনের এই জনপদে ১ হাজার ৩৬৪টি পরিবারে জনসংখ্যা ৬ হাজার ৬০৮ জন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.