পিপিআরসির সংলাপ’অর্থনীতিতে টার্নিং পয়েন্ট’

বেসরকারি খাতের বিকাশমুখী নীতিতে এগিয়েছে অর্থনীতি

0

সি টি নিউজ ডেস্ক : বাংলাদেশের আজকের অবস্থানের পেছনে সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছে এ দেশের মানুষের দুর্যোগ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষমতা। পাশাপাশি সরকারের বেসরকারি খাত বিকাশমুখী নীতিও দেশের অর্থনীতিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে। এ দুটির সমন্বয়ে স্বাধীনতার পরে যখন যে সুযোগ এসেছে, সেগুলো বাংলাদেশ কাজে লাগাতে পেরেছে। যদিও বিভিন্ন সন্ধিক্ষণে সব সুযোগ ঠিকমতো কাজে লাগানো যায়নি। তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অর্জন প্রশংসনীয়।

বেসরকারি গবেষণা সংস্থা পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ‘আজকের এজেন্ডা’ শিরোনামে একটি ধারাবাহিক সংলাপ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে আসছে। এর চতুর্থ পর্ব অনুষ্ঠিত হয় গত শনিবার রাতে। দেশের স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে এবারের আলোচনার বিষয় ‘অর্থনীতিতে টার্নিং পয়েন্ট’। অনুষ্ঠানের আলোচকরা গত ৫০ বছরে দেশের আর্থসামাজিক অগ্রগতি কীভাবে কতটুকু হয়েছে, আরও কী কী সুযোগ ছিল, আগামীতে সম্ভাবনা কেমন এবং সম্ভাবনা কাজে লাগাতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা করেন।

বক্তারা বলেন, কৃষি ও কৃষিকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা ব্যবসা-বাণিজ্য, তৈরি পোশাক শিল্প, ক্ষুদ্রঋণ, এসএমই খাত, অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড ও শ্রম বাজারে নারীর অংশগ্রহণ ও প্রবাসী কর্মীদের পাঠানো রেমিট্যান্স বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করেছে। অন্যদিকে স্বাস্থ্য ও শিক্ষায় নেওয়া নানা উদ্যোগের সঙ্গে সাধারণ মানুষের সহজে খাপ খাওয়ানোর ফলও পেয়েছে অর্থনীতি।

সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক রেহমান সোবহান বলেন, স্বাধীনতার পর যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ ঘুরে দাঁড়ানোর আগেই ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট নতুন সংকটে পড়ে। বঙ্গবন্ধু হত্যার পর অনেক দিন গতানুগতিকভাবে চলেছে দেশ। ৮০’র দশকে তৈরি পোশাক খাতে যুক্ত হয় বাংলাদেশ। ওই সময় রপ্তানি বিকাশে সরকার বিভিন্ন সুবিধা দিয়েছে। ৭৫-এর আগে পুঁজিবাদ বিকাশে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা ছিল না। তবে তার পরে ৯০ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাদ বিকাশে রাষ্ট্র সহায়তা করেছে। প্রথম পর্যায়ের ব্যবসায়ীরা সুবিধা পেয়েছেন। বড়রা বড় হয়েছেন। একই সময়ে ক্ষুদ্রঋণও চালু হয়। ক্ষুদ্রঋণের গ্রহীতারা দেশের উন্নয়নে অবদান রেখেছেন। ১৯৯১ সালে গণতান্ত্রিক সরকার ফিরে আসে। এই সময়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের বিনিয়োগ বাড়তে থাকে। বেসরকারি ব্যাংকিং খাতের বিকাশ হয়। তবে খেলাপি ঋণ বেড়েছে, যা অর্থনীতির জন্য বোঝা। এদিকে কৃষি খাতে ব্যাপক উন্নতি হয়েছে। চাষাবাদের ধরন পাল্টেছে। কৃষিকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য হচ্ছে। সরকারের বেসরকারীকরণ নীতি অর্থনীতির বিকাশে সহায়তা করেছে। এতে শিল্প-কারখানা হয়েছে। কর্মসংস্থান হয়েছে।

বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য এম এ সাত্তার মণ্ডল বলেন, অর্থনীতিতে কাঠামোগত পরিবর্তন হয়েছে। এর বড় অংশ হচ্ছে কৃষি ও গ্রামীণ অর্থনীতিতে। ১৯৮০ সালে বড় আকারে কৃষিতে পরিবর্তন শুরু হয়। প্রান্তিক ও ভূমিহীন চাষিদের জন্য রাষ্ট্রীয় উদ্যোগ গ্রামীণ অর্থনীতি শক্তিশালী করেছে। এ ছাড়া গ্রামীণ অকৃষি এবং পরিবহন খাতে ব্যাপক কর্মসংস্থান হয়েছে। অন্যদিকে কৃষি যান্ত্রিকীকরণ ও কৃষিকে কেন্দ্র করে বাণিজ্য অর্থনীতি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিকস অ্যান্ড পলিটিক্যাল সায়েন্সের লিঙ্গ ও উন্নয়ন অধ্যাপক নায়লা কবির বলেন, নারীর ক্ষমতায়ন হয়েছে, যা পেছনে পোশাক শিল্পের অবদান সবচেয়ে বেশি। মাতৃমৃত্যু কমেছে। কমেছে শিশুমৃত্যু হার। এটা সমাজ পরিবর্তনে ভূমিকা রেখেছে। এক সময় সরবরাহ ব্যবস্থা তেমন ছিল না, যা এখন তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্র ও এনজিও যৌথভাবে কাজ করেছে। বাজার তৈরি হয়েছে। পরিবার পরিকল্পনা পদ্ধতি, বিভিন্ন টিকা এবং অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে নারীর অংশগ্রহণ সমাজ বদলে সহায়তা করেছে।

বিআইডিএসের গবেষণা পরিচালক বিনায়ক সেন বলেন, বাংলাদেশ প্রবৃদ্ধির ধারা ঠিক রাখতে পারলেও শুরুর সমস্যা ও বৈষম্য এখনও আছে। কৃষি, ক্ষুদ্রঋণ, তৈরি পোশাক ও রেমিট্যান্স দেশকে শক্তিশালী করেছে। এখন বৈষম্য দূর করার দিকে বিশেষ মনোযোগ দিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক সায়মা হক বিদিশা বলেন, নারী শ্রম বাজারে অংশগ্রহণ, আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ অভিবাসন, শিশু ও মাতৃ মৃত্যুহার নিয়ন্ত্রণ, শিশু পুষ্টির উন্নতি এবং যমুনা নদীতে বঙ্গবন্ধু সেতু দেশকে এগোতে সহায়তা করেছে।

পিপিআরসির চেয়ারম্যান হোসেন জিল্লুর রহমান অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পরে মাত্র একটি বছর ছাড়া সবসময় প্রবৃদ্ধি হয়েছে। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে কিছু নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে দুর্যোগ মোকাবিলা করে ঘুরে দাঁড়ানো। তবে অনেক সম্ভাবনা কাজে লাগানো যায়নি।

বক্তারা আরও বলেন, এখনও প্রাতিষ্ঠানিক দুর্বলতা রয়েছে। সামাজিক কাঠামো পরিবর্তনে কম খরচের সংস্কার উদ্যোগ যত সহজে বাস্তবায়ন করা গেছে, বেশি খরচের উদ্যোগ তত সাফল্য পাচ্ছে না। এ জন্য প্রাতিষ্ঠানিক ও কাঠামোগত পরিবর্তন দরকার। একুশ শতকের অঙ্গীকার হতে হবে সমতাভিত্তিক উন্নয়ন।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.