একুশের পথ বেয়েই আমাদের সব অর্জনঃ প্রধানমন্ত্রী

0

সিটি নিউজ ডেস্কঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের পথ বেয়েই আমাদের স্বাধীনতা অর্জন হয়েছে। বাঙালির মুক্তির সংগ্রামের ইতিহাসে একুশ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। একুশের পথ বেয়েই আমাদের রক্তস্নাত স্বাধীনতা থেকে শুরু করে সব অর্জন।

আজ শনিবার (২০ ফেব্রুয়ারী) অমর একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে দেশ বরেণ্য ব্যক্তিত্বদের মধ্যে দেশের দ্বিতীয় বৃহৎ সম্মাননা একুশে পদক বিতরণকালে প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে এসব কথা বলেন।

রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বিজয়ীদের হাতে এ পদক তুলে দেন।

ভাষা আন্দোলনে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৪৭ সালের ডিসেম্বরে করাচিতে একটি শিক্ষা সম্মেলন হয়। সেখানেই ঘোষণা হয়েছিল উর্দু হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা। এরপর ১৯৪৮ সালে ৪ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছাত্রলীগ নামের সংগঠন গড়ে তোলেন এবং তাঁরই প্রস্তাবে এই ভাষা আন্দোলনের যাত্রা শুরু হয়। জাতির পিতার এই সংগ্রামের মধ্য দিয়েই কিন্তু মূলত আমাদের স্বাধীনতা অর্জন। কারণ যারা আমাদের ভাষার ওপর আঘাত করেছে, তাদের বিরুদ্ধেই তিনি প্রতিবাদ শুরু করেন।

‘তাঁর (বঙ্গবন্ধুর) প্রস্তাবের পরে, বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালের মার্চ মাসে ছাত্রলীগ, তমুদ্দিন মজলিশ এবং আরও বেশ কয়েকটি প্রগতিশীল ছাত্র সংগঠনের সমন্বয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফজলুল হক হলে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা বাংলা সংগ্রাম পরিষদ গঠিত হয়েছিল’, জানান শেখ হাসিনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মাতৃভাষার জন্য পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে যে সংগ্রামের সূচনা হয়েছিল, তার মধ্য দিয়েই রচিত হয়েছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতার পথ।

১৯৭১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধুর দেওয়া ভাষণের বরাত দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ভাষা আন্দোলন কেবল মাতৃভাষার অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য নয়, বাঙালি জাতির রাজনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার অর্জনের আন্দোলনও ছিল।

প্রধানমন্ত্রী স্বাধীনতা অর্জনে জাতির সংগ্রামের কালানুক্রমিক ইতিহাস বিশদভাবে তুলে ধরে বলেন, তরুণ নেতা শেখ মুজিব বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পরপরই এই আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন।

এ প্রসঙ্গে রফিক, সালাম, জব্বার, বরকত ও শফিকসহ মাতৃভূমির শ্রেষ্ঠ সন্তানদের ত্যাগের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, তারা রক্ত দিয়ে মাতৃভাষার অধিকার দিয়ে গেছে। যদি কেউ ভাষা আন্দোলনের বিবরণ সম্পর্কে জানতে চান, আমি তাদের ১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে পাকিস্তান গোয়েন্দা শাখার প্রতিবেদনগুলো পড়ার অনুরোধ করব। আমরা সেগুলোকে বই আকারে প্রকাশ করছি। এর সাতটি খণ্ড ইতোমধ্যে প্রকাশিত হয়েছে এবং বাকিগুলো প্রকাশের প্রক্রিয়ায় রয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক এবং সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদের সঙ্গে একুশে পদক পাওয়া বিশিষ্টজনরা। ছবি : ফোকাস বাংলা
এর এক থেকে চার খণ্ড পড়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যে কেউ মহান ভাষা আন্দোলন সম্পর্কে বহু বর্ণনা জানতে পারবেন।

১৯৪৮ থেকে ১৯৭১ সাল পর্যন্ত জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে গোয়েন্দা শাখার প্রতিবেদনের গোপন নথিগুলো ১৪ খণ্ডে প্রকাশ করা হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা অনেক সংগ্রাম ও আন্দোলনের মধ্য দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জন করেছি এবং এই স্বাধীনতা অর্জন দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’

শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে ক্ষমতা গ্রহণ করে আওয়ামী লীগ সরকার জাতিসংঘের সামনে একটি প্রস্তাব রাখে এবং প্রয়াত রফিকুল ইসলাম ও আবদুস সালামের উদ্যোগের পাশাপাশি বেশ কিছু প্রবাসীর উদ্যোগে ২১ ফেব্রুয়ারির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পাঠায়। এর ফলশ্রুতিতে, ১৯৯৯ সালের ১৭ নভেম্বর ইউনেসকো সর্বসম্মতিক্রমে ২১ ফেব্রুয়ারিকে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, আন্দোলন ও সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দেশের প্রতিটি অর্জন অর্জিত হয়েছে। কেউ আমাদের স্বেচ্ছায় কিছু দিয়ে দেয়নি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, একটি জাতির উত্থানকে থামিয়ে দেওয়ার লক্ষ্যে ভাষা, সংস্কৃতি এবং শিল্পকে সাধারণত ধ্বংস করা হয় এবং পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকরা বাঙালিদের ওপর এই প্রচেষ্টা চালিয়েছিল।

বাংলাদেশকে বিশ্বের সামনে মর্যাদাবান ও মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে এবং যেনো অন্যের ওপর নির্ভর করতে না হয় সে জন্য প্রধানমন্ত্রী তাঁর দৃঢ় অঙ্গীকারের কথা পুনর্ব্যক্ত করেন।

করোনার পরিস্থিতি সম্পর্কে বলতে গিয়ে শেখ হাসিনা কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের পরেও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মাস্ক পরার আহ্বান জানিয়েছেন। মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম পুরস্কার বিজয়ীদের নাম ঘোষণা করেন এবং সংস্কৃতি সচিব মো. বদরুল আরেফীন অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন।

এর আগে গত ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১ সালের একুশে পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য ২১ জন বিশিষ্ট নাগরিককে আজ একুশে পদক দেওয়া হয়।

সিটি নিউজ/ডিটি

 

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.