করোনার ঝুঁকিঃ তিনটি প্রবেশপথে চেকপোষ্ট বসানো হবে
সিটি নিউজঃ চট্টগ্রামে করোনাভাইরাসের ঝুঁকি এড়াতে নগরীর ৩টি প্রবেশ পথে চেকপোষ্ট বসানোর কথা জানিয়ে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান বলেছেন, কোভিড ভ্যাকসিন কার্যক্রম সাফল্যেও সাথে শুরু হলেও অনেকে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণের হার আবারও বৃদ্ধি পেয়েছে। ভ্যাকসিন নেয়ার পরে মানুষের মাঝে অসচেতন হয়ে পড়েছে। সরকারের নির্দেশনা মতে করোনার ঝুঁকি মোকাবিলায় মাস্ক পরিধানসহ শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে সমুদ্র সৈকত, পার্ক, বিনোদন কেন্দ্র ও অন্যান্য দর্শনীয় স্থানে জেলা প্রশাসনের মোবাইল কোর্ট অভিযানের পাশাপাশি মানুষের মাঝে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।
গণপরিবহনে যাত্রীদের মাস্ক পরিধান ও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে নগরীর তিনটি প্রবেশপথে চেকপোস্ট বসানো হবে। যাদের মাস্ক থাকবেনা তাদের মাঝে বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ করে ভবিষ্যতের জন্য সতর্ক করা হবে। জেলা প্রশাসন ও বিআরটিএ’র এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে এ সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। যতদিন করোনা সংক্রমণ উর্ধমুখী থাকবে ততদিন জনগণের মাঝে সচেতনতা বাড়াতে মাইকিং অব্যাহত থাকবে। পাশাপাশি নগরীর স্টেডিয়াম, সিআরবি, বাদামতলী মোড়, বিনোদন কেন্দ্র, পার্ক ও সী-বীচসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে বিএনসিসি, স্কাউট, রোভার স্কাউটস, গার্লস গাইড, রেড ক্রিসেন্ট ও এনজিও প্রতিনিধিদের সম্পৃক্ত করে সকলের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে সচেতনতামূলক কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে।
আজ ২২ মার্চ সোমবার বিকেল ৪টায় জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত করোনা ভাইরাস সংক্রমণজনিত উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সার্বিক কার্যক্রম সমন্বয় ও করণীয় নির্ধারণ বিষয়ক জরুরী সভায় সভাপতির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, এখন থেকে জেলা ও নগরীর সকল কমিউনিটি সেন্টার, হোটেল-রেস্টুরেন্টগুলোতে সামাজিক-রাজনৈতিক অনুষ্ঠানসহ অন্যান্য অনুষ্ঠানে ১০০ জনের মধ্যে অধিক অতিথির সমাগম নিষিদ্ধ করে মালিকদের কাছে চিঠি দেয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি ও ৩ ফুট শারীরিক দুরত্ব বজায় রেখে অত্যন্ত সীমিত পরিসরে অনুষ্ঠান পরিচালনা না করলে প্রয়োজনীয় আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। সকল মসজিদে স্বাস্থ্যবিধি ও শারীরিক দুরত্ব মেনে নামাজ আদায়ের বিষয়টি আগামী শুক্রবার জুম্মার খুৎবার আগে প্রচার করতে ইসলামিক ফাউন্ডেশন ভূমিকা রাখবে। করোনার সংক্রমণ রোধে প্রত্যেকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে সচেতনতামূলক কার্যক্রমে এগিয়ে আসলে করোনা পরিস্থিতি পূর্বেও ন্যায় নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হবে।
চট্টগ্রাম জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি বলেন, অসচেতনতার কারণে কোভিড পরিস্থিতির কিছুটা অবনতি হয়েছে। করোনা রোগীদের সুচিকিৎসায় আন্দরকিল্লা ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, জেনারেল হাসপাতাল-২ হলি ক্রিসেন্ট হাসপাতাল, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের ২৫০টি শয্যা প্রস্তুত রয়েছে। নির্দিষ্ট বেসরকারী ক্লিনিক-হাসপাতালগুলোতে ৬০/৭০টি আইসিইউ বেড রাখা হয়েছে। মুমুর্ষ রোগীদের জন্য হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা অত্যন্ত জরুরী। চমেক হাসপাতালে ৮০টি, জেনারেল হাসপাতালে ৩০টি, বিআইটিআইডিতে ১০টি ও বেসরকারী হাসপাতালগুলোতে ১০০টি হাই ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা রয়েছে। জরুরী প্রয়োজনে এগুলো ব্যবহার করা হবে। আমরা সকলে সচেতন হলে করোনা মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।
তিনি জানান, গত ২৪ ঘন্টায় ১৭৮৪ জনের করোনার নমুনা পরীক্ষায় নগরী ও জেলায় ২০০ জন আক্রান্ত হয়েছে। সনাক্তের হার ১১ দশমিক ২১ শতাংশ। এ যাবৎ ৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯২ জনের নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। অদ্যাবধি আক্রান্ত হয়েছে মোট ৩৭ হাজার ৭৫১ জন। তন্মধ্যে মহানগরে ২৯ হাজার ৮৮১ জন ও উপজেলা পর্যায়ে ৭ হাজার ৮৭০ জন, সনাক্তের হার ১১ দশমিক ৪১ শতাংশ। করোনায় অদ্যাবধি মৃত্যু হয়েছে ৩৮৩ জনের, তন্মধ্যে মহানগওে ২৮১ জন ও উপজেলা পর্যায়ে ১০২ জন, সনাক্তের হার ১ দশমিক শূন্য ১ শতাংশ।
চট্ট্রগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মমিনুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জরুরী সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন জেলা সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি, জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মহিউদ্দিন মাহমুদ সোহেল, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম জাকারিয়া, অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোছাঃ সুমনী আক্তার, চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ (চমেক) হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মোঃ সাজ্জাদ হোসেন চৌধুরী, সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মোঃ শহীদুল ইসলাম, জেলা তথ্য অফিসের উপ-পরিচালক মোঃ সাঈদ হাসান, জেলা শিক্ষা অফিসার এস.এম জিয়াউল হায়দার হেনরী, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসার (রোগ নিয়ন্ত্রণ) ডা. মোঃ নুরুল হায়দার, সহকারী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার মোঃ কফিল উদ্দিন, সিটি কর্পোরেশনের জোনাল মেডিকেল অফিসার ডা. মোঃ হাসান মুরাদ চৌধুরী ও জেলা স্বাস্থ্য তত্ত্বাবধায়ক সুজন বড়ুয়া প্রমূখ।
সিটি নিউজ/ডিটি