চারদিকে হাহাকারঃ অন্যদিকে করোনার ম্যাচাকার

0

জুবায়ের সিদ্দিকী: সারাদেশের মতো চট্টগ্রামেও বিশ্বমহামারী করোনার দ্বিতীয় ঢেউ চলছে। চারদিকে এক আতংকের নাম করোনা। চলছে মৃত্যু আর মৃত্যুর হাতছানি। করোনায় স্বজন হারানো শোকাহত মানুষের আর্তনাদে দিন দিন ভারী হচ্ছে বাতাস। হাসপাতালে চিকিৎসক তথা স্বাস্থ্যকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন রোগী সামলাতে। এরপরও সম্মুখ সমরের যোদ্ধা হিসেবে তাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন। হাসপাতাল ক্লিনিকে জায়গা নেই তারপরও চিকিৎসার কমতি নেই।

পরিস্থিতি মোকাবিলায় সারা দেশে সর্বাত্মক লকডাউন চলছে। এরই মধ্যে অনেকেই কাজ হারিয়েছেন। কাজ না থাকায় বিপাকে পড়েছেন দিনমজুর ও নিম্ন আয়ের মানুষ। চরম অসহায়ত্বের মধ্যে রয়েছেন ভাসমান ও মধ্যবিত্ত জনগোষ্ঠী। খাবার ও আর্থিক সহায়তার আশায় সড়কের মোড়ে মোড়ে ভিড় করছেন তারা। এমন পরিস্থিতিতে যাদের মানুষের পাশে দাঁড়ানোর কথা, তারা যেন হাত গুটিয়ে বসে আছেন। কোনো দল বা গোষ্ঠীর চোখে পড়ার মতো তৎপরতা লক্ষ করা যাচ্ছে না। সামাজিক সংগঠন এমনকি বিত্তশালীরাও হাত গুটিয়ে বসে আছেন।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে নিজেরা নিজেদের রক্ষা করতে মরিয়া। শুধু রাজনৈতিক দল ও বিত্তশালীরাই নয়, এনজিওগুলোকেও অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে দেখা যাচ্ছে না। এমন পরিস্থিতিতে অসহায়, খেটে খাওয়া, কৃষক, শ্রমিক, দিনমজুর, নিরন্ন ও অভাবী মানুষের ভরসার জায়গা এবং শেষ আশ্রয়স্থল প্রধানমন্ত্রী ও সরকারপ্রধান শেখ হাসিনা। দীর্ঘ এক বছরেরও বেশি সময় ধরে তার সরকার সামর্থ্য অনুযায়ী সবটুকু করে যাচ্ছে।

তার দল আওয়ামী লীগও মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে দেওয়া হচ্ছে প্রণোদনা। তাও বেহাত হচ্ছে অনেক জায়গায়। সমাজের নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তরা এই প্রণোদনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। এলাকার চেয়ারম্যান মেম্বারদের পছন্দের লোকদের দেওয়া হচ্ছে এ প্রণোদনার এ অর্থ। দেখার যেন কেউ নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন পরিস্থিতি মোকাবিলায় সেখানকার সরকার সবরকম চেষ্টা করে যাচ্ছে। পাশাপশি দেশটির ব্যবসায়ী ও সামর্থ্যবানরা মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছেন। অথচ আমাদের চিত্র ঠিক এর বিপরীত। আমাদের দেশেও একটি বড় ধনিক শ্রেণি আছে। গত ২০ থেকে ২৫ বছরে এই শ্রেণির অর্থ, বিত্ত-বৈভব বহুগুণ বেড়েছে।

অথচ করোনার এই মহামারিতে অসহায় সাধারণ মানুষের পাশে তাদের একেবারেই দেখা যাচ্ছে না। তাদের নীরবতা সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। নির্বাচন কমিশনের নিবন্ধন আছে এমন রাজনৈতিক দলের সংখ্যা ৪১টি। এর বাইরে নিবন্ধন নেই এমন রাজনৈতিক দলের সংখ্যা শতাধিক।

দলগুলোর বাইরের নানান নামে হাছে হাজারো সংগঠন। কিন্তু মানুষের পাশে কেউ নেই। বরং সাহেদ-সাবরিনা-আরিফের মতো কেউ কেউ এই মহামারিকে পুঁজি করে উল্টো আরও ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করেছে। এখনো অনেকে এই চেষ্টা করে যাচ্ছে।

এর বাইরেও রয়েছে ‘এই সময়ে বাজার সিন্ডিকেটও বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মানুষের দুঃসময়কে পাশে থাকার পরিবর্তে চাল-ডাল-তেল-আটা-লবণ-চিনিসহ খাদ্যপণ্যের দাম বাড়িয়ে জনজীবনকে আরও দুঃসহ করে দেওয়া হয়েছে।’

ঈদ উপলক্ষ্যে শহরের মানুষ যেভাবে গ্রামমুখী হয়েছে, তাতে এই ভাইরাস আরও ছড়াবে এবং তৃতীয় ধাপে এসে করোনা পরিস্থিতির অবনতি ঘটবে। প্রাণহানিও বাড়বে।

সংশ্লিষ্টদের মতে, করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব দেখা দেওয়ার পর থেকেই এই মহামারি মোকাবিলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একক নেতৃত্বে সরকার নানামুখী উদ্যোগ নেয়। এই উদ্যোগ এখনো অব্যাহত রয়েছে। পাশাপাশি শাসকদল হিসেবে আওয়ামী লীগও সাধ্য অনুযায়ী মানুষের পাশে আছে। দুই বড় দল বিএনপি এবং জাতীয় পার্টিকে প্রথম দিকে ত্রাণসহায়তা নিয়ে মাঠে সক্রিয় থাকতে দেখা গেলেও পরে তাদের যাবতীয় কর্মকাণ্ড ঝিমিয়ে পড়ে।

সিটি নিউজ/জস/এসআরএস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.