তৃতীয় লিঙ্গ ও সমকামীসহ সকলের জন্য মানবাধিকার সুরক্ষার আহ্বান আর্টিকেল নাইনটিনের

0

সিটি নিউজ ডেস্ক: ১৯৯০ সালের ১৭ মে, বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থা সমকামিতা কে মানসিক ব্যাধির তালিকা থেকে বাদ দেয়। এই দিনটি এখন বিশ্বব্যাপী হোমোফোবিয়া, ট্রান্সফোবিয়া এবং বাইফোবিয়ার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালিত হয়। অর্থাৎ বিভিন্ন লিঙ্গ পরিচয় ও অভিব্যাক্তি এবং যৌন বৈবিত্র্যপূর্ণ বৈশিষ্টের জনগোষ্ঠী দৈনন্দিন জীবনে যে উদ্বেগজনক পরিস্থিতির মুখোমুখি হন তার প্রতি সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী কর্তৃপক্ষ, মিডিয়া, জনসাধারণ, কর্পোরেশন, মত প্রদানকারী নেতৃবৃন্দ, স্থানীয় কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য দিনটি সমকামিতা, হিজড়া ও উভকামিতা বিদ্বেষের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক দিবস হিসাবে পালিত হয়ে আসছে।

আর্টিকেল নাইনটিন দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক পরিচালক ফারুখ ফয়সল, আজ একটি সংবাদ বিবৃতিতে বলেন, “বাংলাদেশে আমাদের প্রতিবেশী দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের মতই সমকামী গোষ্ঠী, হিজড়া ও বাইনারি লিঙ্গের লোকেরা সাংস্কৃতিক পক্ষপাতের কারণে ও আইনী সুরক্ষার অভাবে বিভিন্ন বৈষম্য ও সমসার মুখোমুখি হয়ে আসছেন এবং ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। মানবাধিকারের সর্বজনীন ঘোষণাপত্র অনুসারে, মানব পরিবারের সকলের মর্যাদা ও সমান সুযোগ পাওয়ার জন্মগত অধিকার রয়েছে। সুতরাং, বাইনারি লিঙ্গের উপর আক্রমণ, নাগরিক হিসাবে তাদের সুরক্ষা ও অধিকারের অভাব এবং তাদের বিরুদ্ধে ঘৃণাত্মক মন্তব্য মৌলিক মানবাধিকার এর মারাত্মক লঙ্ঘন। যৌন ও লিঙ্গিক দৃষ্টিভঙ্গি নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিক এর সম্মানজনক জীবনযাপনের ও সুরক্ষিত থাকার অধিকার রয়েছে।“

আর্টিকেল নাইনটিন গোষ্ঠীগুলোর বিরুদ্ধে এই ধরণের সমস্ত আক্রমণ, ঘৃণ্য বক্তব্য ও বৈষম্যের বিরোধিতা করে। কেননা, অসহিষ্ণুতা ও সাংস্কৃতিক ধারাবাহিকতা বিদ্যমান থাকাকালীন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, লিঙ্গ পরিচয় এবং যৌন দৃষ্টিভঙ্গির জন্য কাউকে হত্যা করা বা কোনো ব্যক্তির প্রাণ হারানো গ্রহনযোগ্য নয়। মানবাধিকারের সর্বজনীনতা এবং অবিচ্ছিন্নতার বৈশিষ্ট্য অনুসারে এটি সকলের জন্য সমান হওয়া উচিত, অর্থাৎ কোনো জাতীয়তা, লিঙ্গ, জাতীয় বা জাতিগত উৎস, বর্ণ, ধর্ম, ভাষা বা অন্য যে কোনও সামাজিক অবস্থান নির্বিশেষে আমাদের সকলের সহজাত অধিকার যা অস্বীকার করা বা কেড়ে নেওয়া যায় না। সকল মানুষ, লিঙ্গ বৈচিত্রের জনগোষ্ঠী এবং সংখ্যালঘুদের জন্য সমান অধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলির এখনো অনেক পথ বাকি।

ফারুখ ফয়সল আরো বলেন, “আমরা যেন কাউকে পেছনে ফেলে না রাখি ও সকল নাগরিকের স্বাধীনভাবে মতপ্রকাশে অবদান রাখতে পারি। পাশাপাশি অন্যরা যেন পরিচয়ের ভিন্নতা থাকা সত্বেও কোনো বাধা ছাড়া নিজেদের অধিকার পুরোপুরি ভোগ করতে পারে তা নিশ্চিত করতে বিভিন্ন পরিবর্তন ও পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।“

জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচী অনুসারে, সমকামী ব্যক্তিরা এখনও তাদের দৈনন্দিন জীবনে গুরুতর চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়। এখনো ৬৯ টি দেশে সমকামিতা অপরাধ হওয়ায় লক্ষ লক্ষ সমকামী নারী, পুরুষ ও উভকামী মানুষ তাদের নিজস্ব পরিচয়কে ধারণ করার ও নিজের ভালবাসাকে প্রকাশ করার ভয় নিয়ে জীবনযাপন করে। ভিন্ন লৈঙ্গিক সমাজকে কমপক্ষে ২৭ টি দেশে দন্ড দেয়া হয় পাশাপাশি তারা বিশ্বজুড়ে অসহনীয় সহিংসতার ও অপমানের স্বীকার হন।

সর্বোপরি, কোভিড-১৯ প্রতিক্রিয়া ও প্রতিরোধের ক্ষেত্রে জনগণ ও তাদের অধিকারকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিতে হবে। সমকামী মানুষের পক্ষে সহনশীলতা বৃদ্ধি ও বৈষম্যের প্রতিবাদে আমাদের নিরবতা ভেঙ্গে উঠে সোচ্চার হতে হবে। এই দিনে আমাদের মানুষের জন্য মানবিক মর্যাদার প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং একটি ন্যায্য ও সকলের প্রতি সহনশীল সমাজ নিশ্চিত করার প্রতিজ্ঞা নেওয়া উচিত, এটিই আর্টিকেল নাইনটিনের অনুরোধ।

সম্পাদকের মন্তব্য:

আর্টিকেল নাইনটিন ​​যুক্তরাজ্য ভিত্তিক একটি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা যা বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশে কাজ করছে।  যুক্তরাজ্যে ১৯৮৭ সালে প্রতিষ্ঠিত সংস্থাটি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা এবং মুক্তচিন্তা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে। সংস্থাটি ২০০৮ সালে দক্ষিণ এশিয়ায় প্রথম কার্যক্রম শুরু করে।

সিটি নিউজ / এসআরএস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.