সারা দেশে দুই ডোজ টিকা পেয়েছে মাত্র ৪% কিছু বেশি মানুষ

0

সিটি নিউজ ডেস্ক: সারা দেশের মানুষের ৮০ শতাংশকে করোনার টিকা দেবে সরকার। তবে এ পর্যন্ত স্বাস্থ্য বিভাগ মাত্র ৪ শতাংশের কিছু বেশি মানুষকে পূর্ণ দুই ডোজ টিকা দিয়েছে। বর্তমানে টিকাদান কর্মসূচি চলতে থাকলে বাকি ৭৬ শতাংশকে টিকা দিতে ১০ বছরের বেশি সময় লাগতে পারে।

গত বছরের ডিসেম্বরে চূড়ান্ত করা হয় করোনার টিকা প্রয়োগ পরিকল্পনায় জনসংখ্যার ৮০ শতাংশকে টিকার আওতায় আনার। আর এ বিষয়টি বিশদভাবে বর্ণনা করা আছে সেখানে। দেশের জনসংখ্যা এখন ১৬ কোটি ৯১ লাখ ১০ হাজার। এ হিসাবে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর ১৩ কোটি ৫১ লাখের বেশি মানুষকে টিকা দিতে চায়।

পূর্ণ দুই ডোজ টিকা দেওয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অবস্থান সবার নিচেই বললেই চলে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী, গতকাল শুক্রবার পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ১০টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ শুধু মিয়ানমারের ওপরে অবস্থান করছে।

এরই মধ্যে হঠাৎ গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৮ কোটি মানুষকে টিকা দেওয়া হবে। বাকি সাড়ে ৫ কোটির বেশি মানুষ কবে নাগাদ টিকা পাবেন তা নিয়ে মন্ত্রী কোনো কথা বলেননি।

আগামী বছরের ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৮ কোটি মানুষকে টিকা দিতে হলে টিকার প্রাপ্তিটা নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে। এ ছাড়া প্রতিদিন টিকা দেওয়ার সংখ্যাও বাড়াতে হবে। বর্তমান হারে টিকা দেওয়া চলতে থাকলে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ৮ কোটি মানুষকে টিকার আওতায় আনতে পারবেন না বলে অনেকে মনে করছেন।
তবে করোনার টিকা প্রয়োগ কমিটির প্রধান অধ্যাপক মীরজাদী সেব্রিনা এর আগে রাজধানীর এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, নিয়মিত করোনা টিকাকেন্দ্রের সংখ্যা বাড়ানো হচ্ছে। কেন্দ্রগুলোতে বুথের সংখ্যা বাড়াতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখন প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলে দিনে দৈনিক পাঁচ লাখের বেশি টিকা দেওয়া হচ্ছে। এই সংখ্যা আরও বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।

টিকাদানের গতি:
গত ৭ ফেব্রুয়ারি দেশে করোনার টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। ওই দিন ৩০ হাজার মানুষকে প্রথম ডোজ টিকা দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার প্রথম ও দ্বিতীয় ডোজ মিলিয়ে টিকা দেওয়া হয়েছে ৫ লাখ ১৪ হাজারের কিছু বেশি মানুষকে।
ফেব্রুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত টিকা দেওয়া হয়েছে ১৬১ দিন। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১ লাখ ৫৬ হাজার ডোজ টিকা দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৭ থেকে ১২ আগস্ট সম্প্রসারিত আকারে টিকা দেওয়া হয়েছিল। ওই ছয় দিনে টিকা দেওয়া হয়েছিল ৫৩ লাখ মানুষকে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দেওয়া লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারির মধ্যে ১৬ কোটি ডোজ টিকা দিতে হবে। ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৫৩ লাখের মতো ডোজ। আরও ১৩ কোটি ৪৭ লাখ ডোজের বেশি টিকা মানুষকে দিতে হবে। এ সময়ে স্বাস্থ্য বিভাগ সর্বোচ্চ ১৫৭ দিন টিকা দিতে পারবে। অর্থাৎ দৈনিক সাড়ে ৮ লাখের বেশি ডোজ টিকা দেওয়া দরকার হবে।
গত সাত মাসে লক্ষ্যমাত্রার মাত্র ৪ দশমিক ৩ শতাংশ জনসংখ্যাকে টিকা দিতে পেরেছে স্বাস্থ্য বিভাগ। এ হারে টিকা দিলে বাকি ৭৬ শতাংশ টিকা দিতে ১৩৩ মাস বা ১১ বছর সময় লেগে যাবে।

আর গণটিকা নয়:
গত সোমবার মন্ত্রিসভার বৈঠক শেষে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক জানান, গণটিকাদান কার্যক্রম এ মুহূর্তে আর হচ্ছে না। কারণ, সেই পরিমাণ টিকা হাতে নেই। হাতে যখন যত টিকা আসবে, সেই টিকা যত মানুষকে দেওয়া যাবে, তত মানুষের কাছে মোবাইল ফোনে এসএমএস যাবে। ‘গণ’ কথাটা ভবিষ্যতে আর ব্যবহার করা হবে না।
স্বাস্থ্য বিভাগ ৭ আগস্ট থেকে ৬ দিন সারা দেশে সম্প্রসারিত আকারে যে টিকা দিয়েছিল, তাকে গণটিকাদান নাম দিয়েছিল। নিয়মিত করোনার টিকা দেওয়ার পাশাপাশি দেশের ৪ হাজার ৬০০ ইউনিয়ন, ১ হাজার ৫৪টি পৌরসভা ও ১২টি সিটি করপোরেশনের ৪৩৩টি ওয়ার্ডে টিকা দেওয়া হয়।
তবে গণটিকাদানের ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমালোচনা ওঠে। কিছু টিকাকেন্দ্রে বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। কিছু কেন্দ্রে নিজেদের পছন্দের মানুষকে টিকা দেওয়ার অভিযোগ ওঠে। নিবন্ধন করা মানুষ দিনের পর দিন টিকার অপেক্ষায় থাকলেও ওই সময় কেন্দ্রে নিবন্ধন করেই অনেকে টিকা পান। এ নিয়ে স্বাস্থ্যবিষয়ক সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও কথা ওঠে।

এ পরিস্থিতিতে গত বুধবার অনলাইনে স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠ কর্মকর্তাদের সঙ্গে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বৈঠক করেন। তাতে যুক্ত ছিলেন বরিশাল স্বাস্থ্য বিভাগের সহকারী পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল। তিনি বলেন, কেন্দ্রগুলোতে বুথের সংখ্যা বাড়াতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া স্থানীয় প্রশাসন যদি মনে করে তা হলে কেন্দ্রের সংখ্যাও বাড়ানো হবে।
আর অধিদপ্তর বলছে, সরাসরি এনআইডি দেখিয়ে টিকা দেওয়া হলেও পরবর্তীতে তাদের আবার রেজিস্ট্রেশন আওতায় নিয়ে আসা একটি জটিল প্রক্রিয়া। আবার এই প্রক্রিয়া চালিয়ে গেলে স্বাভাবিক টিকা কার্যক্রমে প্রভাব পড়তে পারে। তাই টিকা দেওয়া হবে নিবন্ধনের মাধ্যমেই।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. নাজমুল ইসলাম বলেন, আমাদের প্রতিটি কার্ড আবার এন্টি করা লাগছে। আমাদের লোক প্রতিদিন সেই টিকার এন্ট্রি শেষ করবে নাকি দিনের টিকার এন্ট্রি দেবে? সে জন্য আমরা মনে করি রেজিস্ট্রেশনের মাধ্যমে টিকা দেওয়াটা অব্যাহত রাখা যায়, তাহলে তথ্য-উপাত্ত যথাযথ সংগ্রহ করা যাবে।
তবে যারা নিবন্ধন করেছেন তাদের সবাইকেই টিকার আওতায় আনা হবে বলেও জানিয়েছে অধিদপ্তর। সেক্ষেত্রে যারা এখনো এসএমএস পাননি তাদের ধৈর্য ধরে অপেক্ষার পরামর্শ দেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা। কিছুদিনের মধ্যেই প্রথম ডোজ হিসেবে আবারও অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা দেওয়া হবে বলেও জানান তিনি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এ কর্মকর্তা বলেন, প্রতিটি কেন্দ্রে অধিক সংখ্যক মানুষ রেজিস্ট্রেশন করেছেন কিন্তু আমরা প্রতিদিনই স্বাস্থ্যবিধি মেনে এবং ভ্যাকসিনের গুণগতমান অক্ষুণ্ণ রেখে নিদির্ষ্ট মানুষকে প্রতিদিন আমরা টিকা দিতে পারি।

অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার দ্বিতীয় ডোজের জন্য যারা অপেক্ষমাণ আছেন তাদেরটা আগে নিশ্চিত করা হবে। তার বাইরেও আমরা জাপানের কাছ থেকে অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকা পেয়েছি, সেটা এ মাসের শেষে অথবা সামনের মাসের শুরুতে মাঠপর্যায়ে দিয়ে দেওয়া হবে।

সেপ্টেম্বরে আরো বিভিন্ন উৎস থেকে আরও এক কোটি টিকা আসার কথা রয়েছে বলেও অধিদপ্তরের পক্ষে জানানো হয়।
দেশে এ পর্যন্ত বিভিন্ন উৎস থেকে টিকা এসেছে ৩ কোটি ১৭ লাখ ২৫ হাজার ডোজ। ইতিমধ্যে দেওয়া হয়েছে ২ কোটি ৫৩ লাখের মতো। বর্তমানে দেশে অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার, সিনোফার্ম ও মডার্নার টিকা দেওয়া হচ্ছে। ভারত থেকে পাওয়া উপহার ও কেনা টিকা দিয়ে দেশে টিকা কার্যক্রম শুরু হয়েছিল গত ফেব্রুয়ারিতে। কিন্তু মার্চের পর ভারত টিকা রপ্তানি স্থগিত করায় দেশে টিকা কর্মসূচি গতি হারায়। এরপর সরকার মূলত চীনের সিনোফার্মের কাছ থেকে টিকা কিনছে। এর বাইরে কোভ্যাক্সের আওতায় যুক্তরাষ্ট্র ও জাপান বাংলাদেশকে টিকা দিয়েছে। সরকার সিনোফার্মের টিকা দেশে বোতলজাত করার জন্য চুক্তিও করেছে। সুত্র:সময় সংবাদ

সিটি নিউজ / এসআরএস

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.