টাইগারদের কোচ নিয়োগ নিয়ে মাশরাফীর প্রশ্ন

0

স্পোর্টস ডেস্ক : আসন্ন টি-২০ বিশ্বকাপ থেকে নিজেকে সরিয়ে নিয়েছেন দেশসেরা ওপেনার তামিম ইকবাল। অন্যদিকে, সংক্ষিপ্ত সংস্করণে উইকেটরক্ষক হিসেবে থাকতে চান না মুশফিকুর রহিমও। অভিজ্ঞ দুই ক্রিকেটারের এমন বিস্ফোরক সিদ্ধান্তের পর এখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছেন টাইগার কোচ রাসেল ডমিঙ্গো।

এমন পরিস্থিতিতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে এই প্রসঙ্গে সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন সাবেক অধিনায়ক মাশরাফী বিন মোর্ত্তজা। যেখানে টাইগারদের কোচ নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন বর্তমান এই সাংসদ।

মাশরাফীর স্ট্যাটাসটি পাঠকদের জন্য হুবহু তুলে দেওয়া হলো-

‘একজন কোচ যখন নিয়োগ দেওয়া হয়, তার প্রক্রিয়া (প্রসেস) আসলে কি থাকে সেটা জানার খুব ইচ্ছা আমার।

এ যাবতকালে প্রায় ৯/১০ জন কোচের সঙ্গে কাজ করেছি আমি। যতটুকু দেখেছি প্রত্যেক কোচ তার নিজের মতো করে কাজ শুরু করে, যেটা করাটাও স্বাভাবিক। কারণ একেকজনের কাজের ধরন একেকরকম। কিন্তু সব সময় দেখেছি প্রত্যেক কোচ তার নিজস্ব একজন বা দুইজন প্রিয় খেলোয়াড় বানিয়ে নেয়, যা পরে সিলেক্টর, ক্যাপ্টেন বা অন্য কেউ তাকে আর কিছুই বুঝাতে পারে না বরং সম্পর্কগুলো জটিল হতে থাকে আর ঐ পছন্দের জন্য সে আবার দুইজনকে এমন অপছন্দ করা শুরু করে যে, তাদের আর দেখতেই পারে না।

এক পর্যায়ে এমন জিদ শুরু করে যে প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দিব, এমন কথা প্রকাশ্যেও শুনেছি কয়েকবার। আমার পয়েন্টটা হলো যে, কোচের পছন্দ নির্দিষ্ট কিছু খেলোয়াড় হতেই পারে সেটা সব কোচেরই হয়, অন্যান্য দেশেও হয় এটাই স্বাভাবিক। তবে কখনো সেটা প্রকাশ্যে বুঝতে দেয় না, অনুমান করতে হয়। কারণ দলের সেরা ৩/৪ জন খেলোয়াড়ই শুধু ম্যাচ জেতায় না। আর জেতালেও আপনি একজনের জন্য আরেকজনকে ছোট করতে পারেন না। দর্শক বা সাংবাদিক অনেক কিছু লিখতেও পারে বলতেও পারে যেটা একদম স্বাভাবিক ব্যাপার।

কোচকে বলা হয় (ফাদার অফ দ্যা সাইড) সে সবাইকে দেখে রাখবে, প্রয়োজনে কঠোর হবে আবার দলের স্বার্থে যাকে প্রয়োজন তাকে ব্যবহার করবে। তার সব কিছুই হতে হবে পজিটিভ কারও প্রতি কঠোর কারও প্রতি নমনীয় এটা এক রকমের বৈষম্যতে রূপ নেয় আমাদের দেশে। যা গোছানো দলকে অগোছালো করে ফেলে। এক পর্যায়ে তারা আবার নিজেদের দেশে, না হলে আইপিএল বা আরও ভালো কোনো অফার পেয়ে চলে যাবে কারণ এতদিনে সে আমাদের দেশের ক্রিকেটকে নিয়ে অনেক এক্সপেরিমেন্ট করে নিজের অভিজ্ঞতা বাড়িয়েছে নিজের প্রোফাইলও ভারি করেছে মাঝখান দিয়ে। আর বেতন তো নিয়েছে মাসে ১২/১৫ লাখ টাকা আর আমাদের দেশীয় কোচগুলো না খেয়ে মরে।

গালিও দেখি আমাদের কোচরাই হজম করে। আর পরে ওনারা চলে গেলে আমরা পড়ি বিপদে আবার নতুন কোচ নতুন পরীক্ষা নতুন দাবি মেটানো। এভাবেই চলছে বাংলাদেশে কোচদের যাওয়া আসা।

এবার আবার আসি আমার প্রথম লাইনটায়, কোচ নিয়োগের সময় যে নতুন কোচের ইন্টারভিউ নেওয়া হয় সেখানে আসলে তাকে কি প্রশ্ন করা হয়? বা আদৌ কি করা হয় কোনো প্রশ্ন? নাকি শুধু জানতে চাওয়া হয় তোমার কি করার ইচ্ছা। হয়তো তখন সে কিছু পয়েন্ট তুলে ধরে সেখান থেকে নতুনত্ব কিছু পেলে চিন্তা করে দারুণ কোচ! কি সুন্দর প্লান, তার মতো কোচই হয় না।

আমার তো মনে হয় ভুল ওখানেই হয়ে যায় কারণ আমরা মানুষকে বোঝাতে সব সময় হাইপ্রোফাইল কোচ খুঁজি যা পরে আর কোনো কাজে আসে না। আমাদের প্রয়োজন আমাদের ক্রিকেট যে ফলো করে বা আমাদের ম্যাক্সিমাম খেলোয়াড়দেরকে নিয়ে স্টাডি করে এসে ইন্টারভিউ দিচ্ছে, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে নূন্যতম ধারণা নিয়ে আসা। তা না হলে -ও তো বুঝবেই না একজন সাকিব, তামিম, মুশফিক, রিয়াদ তৈরি করতে কত দিন লেগেছে। বা অতীতে তাদের অবদান কী। একজন মুস্তাফিজ কিভাবে উঠে এসেছে। বার বার বলেছি আবারো বলছি দলের আগে কখনোই কোনো খেলোয়াড় হতে পারে না। ভালো না করলে বাদ পড়তেই হবে।

অফ ফর্ম সব খেলোয়াড়ের জীবনেই যায়। বাদ ও পড়ে কিন্তু ম্যানেজমেন্ট থেকে অপমানিত শুধু আমাদের দেশেই বেশি হয়। পারফর্ম না করলে বাদ দিবেন স্বাভাবিক, আবার তাকে তো সহযোগিতা করতে হবে কিভাবে তাকে ফর্মে আনা যায় বা তাকে মেন্টালি কিভাবে সাপোর্ট করা যায় কোনোভাবেই আপনি বুঝতে দিতে পারেন না যে আপনি তাকে আর আপনার সময়কালে দেখতে চান না।

এটার কারণ একটাই কোনো কোচই আমাদের দেশে কাজ করার আগে আমাদের দেশের ক্রিকেট ফলোয়ার না। চাকরির জন্য আসে শেষ হলে চলে যায়। তাই আমার মনে হয়, হাই প্রোফাইল নয়, আমাদের প্রয়োজন আমাদের কোচ, বাংলাদেশের কোচ। একদম নিজস্ব মতামত আপনাকে মানতে হবে তা বলিনি।’

সিটি নিউজ

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.