ডুবে যাওয়া কয়লার কার্গোর উদ্ধারকাজ শুরু হয়নি

0

সিটিনিউজবিডি : মংলা সমুদ্রবন্দরের জয়মনি এলাকায় পশুর চ্যানেলে মঙ্গলবার রাতে ডুবে যাওয়া কয়লাবোঝাই এমভি জি আর রাজ নামে কার্গোটির উদ্ধার তৎপরতা এখনো শুরু হয়নি। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে উদ্ধারকাজ শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে। এতে সুন্দরবনে পরিবেশ বিপর্যয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
এ ঘটনায় কার্গোর মাস্টার বুলু কাজীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এ ছাড়া গঠন করা হয়েছে একটি তদন্ত কমিটি।

ইন্দোনেশিয়া থেকে আমদানিকৃত কয়লাবোঝাই জাহাজ এমভি গ্লোবস্টোন থেকে প্রায় ৫১০ মেট্রিকটন কয়লা নিয়ে কার্গোটি যশোরের নওয়াপাড়ায় যাওয়ার পথে মঙ্গলবার রাতে ডুবে যায়।

এ ঘটনায় সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ মংলা থানায় কার্গো মালিকের বিরুদ্ধে প্রায় এক কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় সুন্দরবনের প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে সুন্দরবন পূর্ববিভাগ তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি গঠন করেছে। পুলিশ দুর্ঘটনাকবলিত কার্গোর মাস্টার বুলু কাজীকে গ্রেফতার করেছে।
জানা গেছে, কয়লাবোঝাই করে মঙ্গলবার বিকেলে ভাটির সময় কার্গোটি রওনা হওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যে জয়মনি এলাকায় ডুবোচরে আটকে পড়ে। রাত সাড়ে আটটার দিকে জোয়ারের সময় ডুবোচর থেকে কার্গোটি ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করতে গেলে তলা ফেটে কার্গোটি নিমজ্জিত হয়। বৃহস্পতিবার সকাল নাগাদ কার্গোটির উদ্ধারকাজ শুরু হতে পারে বলে জানা গেছে।
সুন্দরবন পূর্ববিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) মো. সাঈদুল ইসলাম জানান, কার্গোডুবির ঘটনায় চাঁদপাই স্টেশনের বনকর্মী মিজানুর রহমান বাদী হয়ে কার্গো মালিক ও মাস্টারের বিরুদ্ধে কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ মামলা করেছে।

এ ঘটনায় চাঁদপাই রেঞ্জের সহকারী বন সংরক্ষক বেলায়েত হোসেনকে প্রধান করে তিন সদস্যবিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। বনের উপর এই ঘটনার প্রভাব ও প্রাথমিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণ করে তাদের দুই কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। কমিটির অপর দুই সদস্য হলেন— চাঁদপাই রেঞ্জের চাঁদপাই স্টেশন কর্মকর্তা গাজী মতিয়ার রহমান ও ঢাংমারী স্টেশন কর্মকর্তা আব্দুল মান্নান।
তবে কার্গোডুবির ঘটনায় মংলা বন্দরের জাহাজ চলাচল ব্যাহত হবে না বলে বন্দর কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে।

মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের হারবার মাস্টার কমান্ডার হাসান জানান, কয়লাবোঝাই কার্গোটি পশুর চ্যানেলে জাহাজ চলাচল এলাকার বাইরে নিমজ্জিত হওয়ায় বন্দরে জাহাজ আসা-যাওয়ায় কোনো সমস্যা হচ্ছে না। তবে কার্গোটি দ্রুত অপসারণের জন্য কার্গো মালিক ও স্টিভেটরকে বলা হয়েছে।
মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান রিয়ার এ্যাডমিরাল রিয়াজ উদ্দিন আহমেদ, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর আলম, সুন্দরবন পূর্ববিভাগের ডিএফও মো. সাঈদুল ইসলাম ও মংলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহম্মদ আলী প্রিন্স বুধবার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।

পশুর নদীর পশ্চিমপাড়ে বাগেরহাটের রামপাল উপজেলার সাপমারি-কাটাখালী এলাকায় কয়লাভিত্তিক তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে পরিবেশগত বিপর্যয়ের আশঙ্কায় দেশ-বিদেশে যখন বিতর্ক চলছে, ঠিক এমন সময়ে পশুর নদীতে কয়লাবোঝাই এই কার্গোডুবির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট মহলে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে।

বাংলাদেশ পরিবেশ আইনজীবী সমিতির (বেলা) খুলনা বিভাগীয় সমন্বয়কারী মাহফুজুর রহমান মুকুল বলেন, কয়লাবোঝাই কার্গোডুবির এই ঘটনাকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। এ জন্য আমরা উদ্বেগ প্রকাশ করছি। সুন্দরবনের প্রাণবৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব পড়বেই। আগামীতে রামপালে তাপবিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে এই নৌপথে কয়লা পরিবহন বহুগুণ বাড়বে। তখন এ ধরনের দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও অনেক বাড়বে। আমরা এই কার্গো উদ্ধারসহ ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করব।
ডুবে যাওয়া এমভি জি আর রাজের স্বত্বাধিকারী দিল খান দুপুরে মুঠোফোনে এই প্রতিবেদককে বলেন, বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক, মংলা বন্দর কর্তৃপক্ষ ও মংলা থানা থেকে আমার সাথে কার্গো উদ্ধারের বিষয়ে কথা বলেছেন। নিমজ্জিত কার্গো থেকে কয়লা সরিয়ে নিয়ে কার্গোটি উদ্ধারের জন্য একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সাথে কথা হয়েছে। তারা বৃহস্পতিবার সকাল থেকে কাজ শুরু করবে।

এই কয়লা আমদানিকারকের স্টিভেটর প্রতিষ্ঠান নূর এ সন্স কোম্পানির স্বত্বাধিকারী এমডি দুলাল জানান, ডুবে যাওয়া ট্রলারটি প্রায় ২৩০ টন কয়লা নিয়ে যশোরের নওয়াপাড়ায় শেখ ব্রাদার্সের ঘাটের উদ্দেশে যাচ্ছিল। ডুবে যাওয়া কয়লার আনুমানিক মূল্য প্রায় ২০ লাখ টাকা।

মংলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ লুৎফুর রহমান সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের পক্ষ থেকে ক্ষতিপূরণ মামলা দায়েরের তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, পুলিশ এই ঘটনায় একটি সাধারণ ডায়েরি এবং কার্গো মাস্টার বুলু কাজীকে গ্রেফতার করেছে। ডুবে যাওয়া কার্গোর অপর নৌ-শ্রমিকদের জয়মনির ঘোল নৌ-টহল ফাঁড়িতে রাখা হয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.