স্পোর্টস ডেস্ক : জিম্বাবুয়েতে ‘এ’ দলের সঙ্গে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় ঢাকা ছাড়ছেন ৫ ক্রিকেটার। অন্যদিকে, জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে হোম সিরিজের ক্যাম্পে যোগ দিতে ঢাকায় ফিরে আসছেন দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে থাকা ‘এ’ দলের ৬ ক্রিকেটার।
জিম্বাবুয়ে সফরে যাওয়া ৫ ক্রিকেটারের মধ্যে রয়েছেন সর্বশেষ ২০১৪ সালে ওয়ানডে (এশিয়া কাপে) খেলা নাঈম ইসলাম। এক সময় জাতীয় দলের নিয়মিত সদস্য নাঈম এখন প্রায় আলোচনার বাইরে। তার সঙ্গে যাচ্ছেন দুই তরুণ ব্যাটসম্যান তাসামুল হক ও নুরুল হাসান সোহান, পেসার দেওয়ান সাব্বির এবং অলরাউন্ডার মুক্তার আলি।
বুধবার সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছেন নাঈম ইসলাম। জাতীয় লিগের পঞ্চম রাউন্ডে দারুণ সেঞ্চুরিতে ম্যাচসেরার পুরস্কার পাওয়া এই ব্যাটিং অলরাউন্ডার মনে করছেন, ‘এ’ দলে ডাক পাওয়াটা তার কাছে জাতীয় দলে ফেরার সুযোগ। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘জাতীয় দল থেকে বাইরে আছি অনেকটা সময় হয়ে গেল। এখন এ-দলে পারফর্ম করতে হবে। এই সফরে আমার একটাই চিন্তা, যতটা বেশি সম্ভব রান করা। আমি বিশ্বাস করি, পারফর্ম করতে পারলে সুযোগ আসবে।’
জিম্বাবুয়ের বিমানে নাঈমের অপর চার সঙ্গীর জন্যও ‘এ’ দলে ডাক পাওয়া বাড়তি গুরুত্ব বহন করছে। তাসামুল হক ও নুরুল হাসান সোহান ঘরোয়া ক্রিকেটে দীর্ঘদিন ধরেই ভাল খেলছেন। চলতি জাতীয় লিগের পঞ্চম রাউন্ডের ম্যাচে ২ ইনিংসেই হাফ সেঞ্চুরি করেছেন তাসামুল। চতুর্থ রাউন্ডে রাজশাহীর বিপক্ষে খেলেছেন ১৩৪ রানের দারুণ একটি ইনিংস। তার ব্যাট থেকে সেঞ্চুরি এসেছে তৃতীয় রাউন্ডেও। সব মিলিয়ে দারুণ ফর্মে থাকা এই ব্যাটসম্যান যোগ্যতার প্রমাণ দিয়েই সুযোগ পেয়েছেন জিম্বাবুয়ে সফরে।
৩৫টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে ৪৩.৮৬ গড়ে ২,২৮১ রান করেছেন তাসামুল হক। অন্যদিকে, তাসামুল ২৮টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৩০.৩৫ গড়ে করেছেন ৫১৬ রান।
‘এ’ দলের হয়ে জিম্বাবুয়ে সফরে যাওয়ার আগের দিন বুধবার তাসামুল হক নিজের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়ে বলেছেন, ‘আমি খুবই আনন্দিত। কয়েক বছর ধরে ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারছি। এখানে যেভাবে খেলছি, এই ধারাবাহিকতা ধরে রাখার চেষ্টা করব জিম্বাবুয়ে সফরেও।’
নিজের লক্ষ্যের কথা জানতে চাইলে ২৪ বছর বয়সী তাসামুল বলেছেন, ‘নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলার চেষ্টা করব। কন্ডিশন নিয়ে ভাবছি না। কন্ডিশন তো সব সময় চ্যালেঞ্জের বিষয়। কিন্তু এটাকে অজুহাত দেওয়া যাবে না। এই চ্যালেঞ্জ নিয়েই প্রত্যেক ক্রিকেটারদের খেলতে হবে। এবং এগুলো ইতিবাচকভাবে নিতে হবে। পেশাদার ক্রিকেটাররা সব জায়গাতেই সব সময়ই মানিয়ে নিতে পারে। আমারও সেই চেষ্টাই থাকবে।’
উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান নুরুল হাসান সোহান। জাতীয় লিগের চতুর্থ রাউন্ডে মাত্র ১৮ রানের জন্য মিস করেছেন ডাবল সেঞ্চুরি। ঢাকার বিপক্ষে ওই ম্যাচে ১৮২ রানে অপরাজিত ছিলেন ২২ বছর বয়সী সোহান। তার ব্যাটও ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে স্বপ্ন দেখাতে প্রস্তুত হচ্ছে! তাসামুলের মতো সোহানও চলতি জাতীয় লিগে ২টি হাফসেঞ্চুরির পাশাপাশি একটি সেঞ্চুরি পেয়েছেন।
৪৫টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ ও ৩২টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা নিয়ে বৃহস্পতিবার রাতে জিম্বাবুয়ের উদ্দেশে দেশ ছাড়বেন তিনি। যাওয়ার আগে বুধবার সকালে তিনি তার লক্ষ্যের কথা জানিয়েছেন।
সোহান বলেছেন, ‘এটা অবশ্যই আমার জন্য বড় সুযোগ। লিগে আমার মোটামুটি ভাল সময় কেটেছে। চেষ্টা করব, এই পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখার। সুযোগটা কাজে লাগানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করব।’
তিনি আরও যোগ করেছেন, ‘আমার মূল চেষ্টা থাকবে, লম্বা ইনিংস খেলার। সব মিলিয়ে এটা আমার জন্য বেশ ভাল একটি সুযোগ। আমি এই চ্যালেঞ্জ নিতে প্রস্তুত।’
পেসার সাব্বির ও অলরাউন্ডার মুক্তার আলির পারফরম্যান্স তুলনামূলক কিছুটা অনুজ্জ্বল হলেও তাদের মধ্যে সম্ভাবনার কমতি নেই। ৩১টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে মুক্তার আলী ১,৩৬৩ রানের পাশাপাশি নিয়েছেন ৮৮ উইকেট। অন্যদিকে, ৩৭টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচে ৪২৪ রানের পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ৪১টি। গত বছর জাতীয় লিগে বিকেএসপিতে চট্টগ্রাম বিভাগের বিপক্ষে এক ইনিংসে ১৬ ছক্কা মেরে বিশ্বরেকর্ড গড়েছিলেন তিনি; করেছিলেন ১৬৮ রান। যদিও পরবর্তীতে চলতি বছর ২৫ মার্চ নিউজিল্যান্ডের কলিন মুনরো ২৩ ছক্কায় এই রেকর্ড ভেঙেছেন।
মুক্তার আলী বলেছেন, ‘চ্যালেঞ্জ তো অনেক। যে ৬ জন ফিরছে তাদের মধ্যে ৫ জনই জাতীয় দলের। আমরা যারা যাচ্ছি চেষ্টা করব তাদের অভাবটা পূরণ করার। নাঈম ভাই ছাড়া আমাদের কারোরই জাতীয় দলের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা নেই। এটা আমাদের সবার জন্য তাই দারুণ একটি সুযোগ। চেষ্টা করব নিজের সেরা খেলাটাই খেলার। জাতীয় দলে ঢোকার জন্য সুযোগ কীনা, এটা বলতে পারব না। তবে আমি চেষ্টা করব, আমার সেরা পারফরম্যান্স করার।’
ইনজুরি সমস্যার কারণে জাতীয় লিগের প্রথম ৩ রাউন্ড খেলা হয়নি দেওয়ান সাব্বিরের। শেষ দুই রাউন্ডে ৫ উইকেট নিয়েছেন তিনি। জিম্বাবুয়ের কন্ডিশনে বোলিং ঝড় তুলতে চান এই পেসার।
দেওয়ান সাব্বির ১০টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলে ২০ উইকেট এবং ১৩টি লিস্ট ‘এ’ ম্যাচ খেলে নিয়েছেন ১৪টি উইকেট। বুধবার সন্ধ্যায় নিজের লক্ষ্যের কথা জানাতে গিয়ে তিনি বলেছেন, ‘নিজেকে প্রমাণ করার চেষ্টা থাকবে।’
কন্ডিশন নিয়ে ভাবছেন না দেওয়ান সাব্বির। বড় ভাইদের সঙ্গে যোগাযোগ করে এক রকম ধারনা ইতোমধ্যেই নিয়েছেন তিনি। সেভাবেই নিজেকে প্রস্তুত করছেন বলে জানিয়েছেন সাব্বির।