বিহিত চায় প্যারিসবাসী

0

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :: প্যারিস হামলার ভয়াবহতা দেখল পুরো বিশ্ব। আজ প্যারিসের বুকে শুধু শোকের চিহ্ন। শোকার্ত প্যারিসবাসী, হয়ত সারা বিশ্বই, এই মুহূর্তে উন্মুখ হয়ে আছে প্রশ্নে, এর কি কোনও বিহিত হবে? কত দূর এগোতে পারল তদন্তকারীরা? হ্যাঁ, কিছুটা এগোনো গেছে। একজন মৃত জঙ্গিকে নির্দিষ্টভাবেই শনাক্ত করা গেছে। সে ঘরের ছেলে। ফ্রান্সেরই লোক। পাওয়া গেছে কিছু সূত্রও।

মৃতদেহের সঙ্গে পাওয়া পাসপোর্ট দেখে মনে হচ্ছে, অন্তত দু’জন আই এস জঙ্গি সিরিয়া থেকে তুরস্ক হয়ে গ্রিসে ঢুকেছিল শরণার্থীদের সঙ্গে মিশে গিয়ে। মিশরের একটি পাসপোর্টও একজনের কাছে পাওয়া গেছে বলে একটি সূত্রের খবর। তদন্ত শাখা–প্রশাখা মেলছে গ্রিস, বেলজিয়াম, জার্মানিতে। অন্তত তিনজনকে ধরা হয়েছে বেলজিয়ামে। দুয়েক জন বেলজিয়ান নাগরিকও থাকতে পারে জঙ্গিদের মধে্য। জঙ্গিদের মধে্য একজন মহিলাও ছিল, এমন দাবি করছেন হামলায় বেঁচে যাওয়া কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী। পাওয়া গেছে জঙ্গিদের ব্যবহার করা পরিত্যক্ত লিয়ঁ গাড়ি, তাতে রয়েছে অস্ত্রশস্ত্র। খোঁজা হচ্ছে এর চালককে। প্যারিসের প্রোসিকিউটর ফ্রাসেঁায়া মলিনস জানিয়েছেন, শুক্রবার রাতে ৩টি দলে ভাগ হয়েছে জঙ্গিরা হামলা চালিয়েছে। উদ্দেশ্য ছিল, যত বেশি সম্ভব প্রাণহানি ঘটানো।

সরকারি হিসেবে ১২৯ জনকে হত্যা করেছে জঙ্গিরা। আহত ৩৫০–র বেশি। ৯৯ জনের অবস্থা গুরুতর। জঙ্গিরা প্রতে্যকেই টি এ টি পি বিস্ফোরক লাগানো ভেস্ট পরে এসেছিল। ৭ জন জঙ্গি আত্মঘাতী হয়েছে। তাদের শনাক্ত করা এবং সঙ্গীসাথিদের খোঁজখবর বের করার কাজটাই চলছে এখন। শনাক্ত করা গেছে একজনকে। তার কাটা আঙুলের ডগা দেখে। নাম ওমর ইসমাইল মোস্তেফা। ২৯ বছরের এই ফরাসি যুবকের নাম, পরিচয় পুলিসের খাতায় ছিল। ছোটখাটো অপরাধের জন্য। কিন্তু আই এসের খাতায় নাম লেখানো, আত্মঘাতী জঙ্গি হয়ে ওঠা- এই সর্বনাশা তথ্যটি এল শুক্রবারের কাণ্ডের পর। বাতাক্লঁা কনসার্ট হলে পাওয়া যায় তার মৃতদেহ। ঘটনার পর তার দাদা নিজে থেকেই পুলিসের কাছে গেছে। তাকে এবং তার বাবাকেও হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিস।

স্তাদ দ্য ফ্রাঁস স্টেডিয়ামে হামলা চালানো আরেক জঙ্গির মৃতদেহের পাশে পাওয়া গেছে সিরিয়ার পাসপোর্ট। নাম আহমেদ আল মুহম্মদ। বয়স ২৫। গ্রিস জানিয়েছে, শরণার্থী হিসেবে সেদেশে নাম লিখিয়েছিল আহমেদ। গ্রিসে ঢুকেছিল ৩ অক্টোবর। সার্বিয়ার সংবাদমাধ্যম জানাচ্ছে, ৭ অক্টোবর ম্যাসিডোনিয়া থেকে সার্বিয়ায় ঢুকেছিল আহমেদ। খুবই তাৎপর্যপূর্ণ এই তথ্য। শরণার্থীদের দরজা বন্ধ করে দেবে এবার ইউরোপ? আরোপ করা হবে কড়া নজরদারি? যুদ্ধবিধ্বস্ত ইরাক–সিরিয়ার ঘরছাড়া মানুষদের আরও বিপন্ন করে দিল বোধহয় জঙ্গিদের এই কায়দা। স্তাদ দ্য ফ্রাসে ৩ জন জঙ্গির মৃতদেহ ছিল। ২৫ বছরের ওই যুবকের পাশেই ছিল আরেক জঙ্গির মৃতদেহ। সে নাকি বছর পনেরোর এক বালক! স্টেডিয়ামের বাইরেই ওরা নিজেদের শরীরে বিস্ফোরণ ঘটায়। স্টেডিয়ামে তখন চলছে ফ্রান্স ও জার্মানির খেলা। খেলা শুরু হওয়ার মিনিট পনেরো পরে জঙ্গিরা এসেছিল। একজনের হাতে টিকিটও নাকি ছিল। কিন্তু ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাদের। পরে বাইরেই ঘটায় বিস্ফোরণ। ভেতরে তখন ৮০ হাজার মানুষের ভিড়। হাজির সেখানে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাসেঁায়া ওলঁাদও। শুক্রবার জঙ্গি–হামলায় যারা প্রাণ দিয়েছেন, তাঁদের মধে্য ছিলেন ফরাসি ফুটবল দলের সদস্য লাসানা দায়ারার এক আত্মীয়। খবর যা মিলছে তাতে স্টেডিয়ামে বেশ বড় তাণ্ডব ঘটানোর পরিকল্পনা ছিল জঙ্গিদের। কিন্তু সফল হয়নি। স্টেডিয়ামে ঢুকতে বাধা পেয়ে ৩ জঙ্গির মধ্যে ২ জন পাশে অ্যাভিনিউ জুলে রিমে দিয়ে হঁাটা শুরু করে। একজন ইভেন্টস কাফের পাশে গিয়ে নিজেকে উড়িয়ে দেয়। মারা যান এক মহিলা, আহত বহু। এই বিস্ফোরণের আওয়াজটাই পৌঁছেছিল স্টেডিয়ামে। দর্শকেরা ভেবেছিলেন কেউ বাজি ফাটিয়েছে বুঝি। এর দু’মিনিট পরে ওই রাস্তা ধরেই কিছুটা এগিয়ে দ্বিতীয় জিহাদি আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটায়। তবে এতে শুধুমাত্র সে–ই মারা পড়ে। তৃতীয় জঙ্গি ওত পেতে বসেছিল স্টেডিয়ামের পাশে এক জায়গায়। তার পরিকল্পনা ছিল, প্রথম দুই বিস্ফোরণ থেকে বেচে পালাতে চেষ্টা করবেন যারা তাদের ওপর হামলা চালানো। আত্মঘাতী জঙ্গিদের এটা একটি বিেশষ কৌশল। কিন্তু এখানেও সে ব্যর্থ। নিরাপত্তা কর্মীরা চ্যালেঞ্জ করে তাকে। তখন ম্যাকডোনাল্ড–এর পাশে নিজেকে উড়িয়ে দেয় সে। এ যাত্রায়ও জঙ্গি ছাড়া আর কেউ নিহত হয়নি।

এদিকে, প্যারিসের মঁত্রোইল এলাকায় পাওয়া গেছে কালো আসনের লিয়ঁ গাড়িটি, জঙ্গিরা যেটি ব্যবহার করেছে বলে মনে করা হচ্ছে। কিন্তু এছাড়াও ব্যবহার করে থাকতে পারে অন্য গাড়ি। জানা যায় বাতাক্লঁা হলের বাইরে ছাইরঙা একটি সন্দেহজনক ফোক্সভাগেন গাড়ির কথা। বেলজিয়ামের নম্বর তাতে। প্যারিসের পুলিসের কাছে খবর পেয়ে তক্কে তক্কে ছিল বেলজিয়ামের পুলিস। গতকাল গাড়িটি বেলজিয়ামে ঢোকার পরই পুলিস সেটি ধরে ফেলে। গাড়ির ভেতর পাওয়া যায় পার্কিংয়ের কাগজ। নিশ্চিত হওয়া যায়, ওই সময় প্যারিসে ছিল গাড়িটি। এর সূত্র ধরে ব্রাসেলস জুড়ে চালানো হয়ে তল্লাশি। অন্তত তিনজনকে ধরা হয়েছে বলে খবর। আই এসে যোগ দিতে যাওয়ার হিড়িক দেখা গেছে বেলজিয়াম থেকে। ফলে প্যারিসের হামলার সঙ্গে বেলজিয়ামের যোগ তদন্তের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক হয়ে উঠেছে। ওদিকে, ৫ নভেম্বর জার্মানিতে মেশিনগান, গ্রেনেড ইত্যাদি–সহ একটি লোক ধরা পড়েছিল। জার্মানির বাভারিয়া প্রদেশের সরকার মনে করছে, এর সঙ্গে প্যারিসে হামলার যোগ রয়েছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.