স্বজনের কোলে ফিরল পাচার হওয়া ভারতীয় ৫ শিশু

0

চট্রগ্রাম অফিস :: অবশেষে বাংলাদেশে পাচার হয়ে আসা পাঁচ শিশুকে নিজ দেশ ভারতে পাঠানো হয়েছে। আদালতের নির্দেশে দীর্ঘ ২২ দিন পর সোমবার রাত পৌনে ৮টার দিকে দু’দেশের মধ্যস্থতায় ওই শিশুদের নিজ নিজ অভিভাবকের কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হয়।

পাচারকৃত শিশুদের মধ্যে রয়েছে তক্কিন চৌধুরী (৬), নাছরিন বেগম (৪), শামীম চৌধুরী (১২), শাহীন চৌধুরী (৯) ও ১০ মাস বয়সী সিয়াম চৌধুরী। এদের সকলের বাড়ি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতি জেলার উদয়পুর মহকুমায়।

শিশুদের হস্তান্তরের আগ পর্যন্ত সমাজসেবা অধিদফতরের নিয়ন্ত্রণাধীন চট্টগ্রাম মহানগরীর রৌফাবাদ ছোট্টমনি নিবাস ও হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদস্থ সরকারি শিশু পরিবারে মাতৃস্নেহে লালন-পালন করা হয়।

রৌফাবাদ ছোট্টমনি নিবাসের (বেবি হোম) উপ-তত্ত্বাবধায়ক ফাহমিদা আক্তার চৌধুরী বলেন, ‘ফেনী আমলী আদালত-২ এর ম্যাজিস্ট্রেটের আদেশে কোম্পানীগঞ্জ থানার দুই সাব ইন্সপেক্টর অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তরের লক্ষ্যে সোমবার সকাল ৮টার দিকে এখান থেকে ওই শিশুদের নিয়ে গেছেন। রাতেই বিলোনীয়া সীমান্ত দিয়ে ওই শিশুদের হস্তান্তর করা হয়েছে বলে আমাদের জানানো হয়েছে।’

এ ব্যাপারে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজিদুর রহমান সাজিদ বলেন, ‘রাত পৌনে ৮টার দিকে ফেনীর পশুরাম থানার আইসিপি মজুমদার হাট ও ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের ত্রিপুরা থানার বিলোনিয়া সীমান্ত দিয়ে উভয় দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের উপস্থিতিতে অভিভাবকদের কাছে ওই শিশুদের হস্তান্তর করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, অবৈধভাবে দেশে আসা ওই পাঁচ শিশুকে গত ২৫ অক্টোবর নোয়াখালী জেলার কোম্পানিগঞ্জ থানা পুলিশ উদ্ধার করে। ২৬ অক্টোবর নোয়াখালীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে শিশুগুলোকে ওইদিন রাতে চট্টগ্রামে এনে বেবি হোমে রাখা হয়।

উদ্ধারকৃত শিশুদের মধ্যে তক্কিন চৌধুরী ও নাছরিন বেগম সম্পর্কে আপন ভাই-বোন। তারা জানায়, তাদের বাড়ি ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতি জেলার উদয়পুর মহকুমারের পূর্ব বকুলপুর গ্রামে। তাদের বাবার নাম ওবাদুল্লাহ চৌধুরী, মাতা মনজু বেগম। মা-বাবা দু’জনই পেশায় দিনমজুর। তারা নিজ গ্রামের ‘অঙ্গনা’ স্কুলে ক্লাস ওয়ানে লেখাপড়া করে। তাদের দূর সম্পর্কের ফুপু রেহেনা বেগম (৫৫) আশুরা উপলক্ষে নতুন কাপড় কিনে দেওয়া ও দুর্গাপূজার মণ্ডপ দেখানোর কথা বলে তাদেরকে ঘর থেকে বের করে নিয়ে আসে।

১০ মাসের শিশু সিয়াম হোসেন উদয়পুর মহকুমার পূর্ব বকুলপুর গ্রামে মোহাম্মদ আলীর ছেলে। তার মায়ের নাম কল্পনা। মা-বাবা দু’জনই পেশায় দিনমজুর। শিশু সিয়াম হোসেনকে ছোট্টমণি নিবাসে দীর্ঘ ২২দিন মায়ের আদরে দেখভাল করছেন প্রতিষ্ঠানের উপ-তত্ত্বাবধায়ক ফাহমিদা আক্তার চৌধুরী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।

একই ঘটনায় অপর দুই শিশু শামীম চৌধুরী (১২) ও শাহীন চৌধুরীকে (৯) রাখা হয়েছিল হাটহাজারীর ফরহাদাবাদস্থ সরকারি শিশু পরিবারে। এ দুই শিশু জানায়, ভারতের ত্রিপুরা রাজ্যের গোমতি জেলার উদয়পুর মহকুমার খিলপাড়া গ্রামে তাদের বাড়ি। শিশু শামীম চৌধুরীর বাবার নাম আবুল বাশার চৌধুরী, মায়ের নাম মনি বিবি। মা-বাবা দু’জনই দিনমজুর। তিন ভাইয়ের মধ্যে শামীম সবার বড়। সে স্থানীয় রমেশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্র। উদ্ধারকৃত অপর শিশু শাহীন চৌধুরীর বাড়ি একই মহকুমার গকুলপুর গ্রামে। তার বাবার নাম এমায়েত উল্লাহ চৌধুরী, মায়ের নাম কুট্টি বানু। তারা দু’জনও পেশায় দিনমজুর। দুই ভাই-এক বোনের মধ্যে শাহীন চৌধুরী সবার বড়। সে স্থানীয় পূর্ব গকুলপুর হাইস্কুলের তৃতীয় শ্রেণীর ছাত্র। পাচারকারী রেহেনা বেগম তাদেরকে একই কায়দায় বাড়ি থেকে নিয়ে আসে। পরবর্তী সময়ে ওই শিশুদের সীমান্ত পার করে বাংলাদেশের নিয়ে আসে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.