যেভাবে কার্যকর হয় সাকা-মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড

0

সিটিনিউজবিডি :: মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী ও জামায়াত নেতা আলী আহসান মুজাহিদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর তাদের দাফন সম্পন্ন হয়েছে। এর আগে রোববার প্রথম প্রহরে একই সময়ে একই মঞ্চে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে তাদের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার সূত্র জানায়, ফাঁসির মঞ্চে আনার আগ পর্যন্ত সকল প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে সাকা ও মুজাহিদের দণ্ড কার্যকর করা হয়। প্রথমে রাত সাড়ে ৮টার দিকে তাদের দু’জনকে গোসল করানো হয়। রাত ৯টা থেকে সাড়ে ৯টার মধ্যে দেওয়া হয় রাতের খাবার। খাবারের মেন্যু ছিলো ভাত, ডাল সবজি, মুরগি। রাতের খাবার দিলে দু’জনই খাবেন না বলে জানান। কিন্তু কারা কর্তৃপক্ষ জানিয়ে দেন, এটাই তাদের শেষ খাবার। সংবাদ মাধ্যমে উঠে আসা সংবাদে জানা গেছে, জীবনের শেষ খাবারটা অল্পই নিয়েছিলেন মানবতাবিরোধী অপরাধী সালাউদ্দিন কাদের। জীবনের শেষ খাবার হিসেবে তাকে গরুর মাংস, মুরগি, সবজি, মাছ দেওয়া হয়। ভাতের সঙ্গে ছিল ডাল।

তবে সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী খাবার বেশি নেননি। তিনি অল্প একটু নিয়ে বাকিটুকু রেখে দেন। সাকা চৌধুরী হালকাভাবে রাতের খাবার খেলেও মুজাহিদ একেবারেই স্পর্শ করেননি। সাকার পরিবারের সদস্যরা রাত ৯টা ৩৫ মিনিটে শেষবারের মতো দেখা করতে কারাগারে প্রবেশ করেন। তারা ১০টা ৪৫ মিনিট পর্যন্ত কারাগার অবস্থান করেন। এরপর মুজাহিদের পরিবারের সদস্যরা কারাগারের অভ্যন্তরে প্রবেশ করেন। তারা সোয়া ১২টা পর্যন্ত অবস্থান করেন সেখানে। পরিবারের সঙ্গে জীবনের শেষ সাক্ষাতের সময় হাউমাউ করে কেঁদে ফেলেন সালাউদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী এবং আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ। এর মধ্যে মুজাহিদ তার দুই মেয়েকে ধরেই সবচেয়ে বেশি কেঁদেছেন বলে ঘটনাস্থলে উপস্থিত কারা কর্মকর্তারা জানান।

পরিবারের সদস্যরা কারাগার থেকে বেরিয়ে আসার পর দু’জনের কাছে তাদের শেষ ইচ্ছা সম্পর্কে জানতে চাওয়া হয়। কিন্তু জবাবে তারা কিছুই জানায়নি। রাত সাড়ে ১২টায় ইমাম ডেকে দুজনকে তওবা পড়ানো হয়। তওবা পড়ান কারাগার পুকুর পাড় সংলগ্ন মসজিদের ইমাম হাফেজ মাওলানা মনির হোসেন খান। এরপর ১২টা ৩৬ মিনিটে কনডেম সেল থেকে যমটুপি পরিয়ে দু’জনকে একসঙ্গে ফাঁসির মঞ্চে নেওয়া হয়। সামনে একজন এবং পেছনে দুইজন জল্লাদ তাদেরকে পৃথকভাবে ফাঁসির মঞ্চে নিয়ে যায়। এ সময় তাদের মধ্যে কোনো রিঅ্যাকশন ছিলো না। দুজনই ছিলেন ধীরস্থির। তাদের একই মঞ্চে পাশাপাশি দাঁড় করানো হয়। মঞ্চটি বেশ পুরনো। উল্লেখ্য এ মঞ্চেই বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের ফাঁসি কার্যকর হয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম দু’জনকে একইসঙ্গে, একই সময়ে, একই মঞ্চে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার ঘটনা ঘটলো।

মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের পর মুজাহিদের মরদেহ আগে তোলা হয়। পরে তোলা হয় সাকার মরদেহ। সবশেষে কারা চিকিৎসক ডা. বিপ্লব কুমার ও আহসান হাবিব, ঢাকা জেলার সিভিল সার্জন আবদুল মালেকের তত্ত্বাবধানে ময়নাতদন্ত সম্পন্ন করা হয়। এ সময় শুধু তাদের ঘাড়ের রগ কেটে দিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করা হয় বলে কারা কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.