রিয়ালকে ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে বার্সা

0

স্পোর্টস ডেস্ক :: মৌসুমের প্রথম ‘এল ক্লাসিকোতে’ বার্সেলোনার কাছে পাত্তাই পায়নি রিয়াল মাদ্রিদ। আরো স্পষ্ট করে বললে, দারুণ ফর্মে থাকা নেইমার আর লুইস সুয়ারেজের সামনেই দাঁড়াতে পারেনি ‘লসব্লাঙ্কোসরা’। সুয়ারেজের জোড়া গোল আর নেইমার ও ইনিয়েস্তার একটি করে গোলে রিয়ালকে তাদের মাঠেই ৪-০ ব্যবধানে উড়িয়ে দিয়ে লা লিগার শিরোপার লড়াইয়ে অনেকটা এগিয়ে গেছে লুইস এনরিকের দল।

শনিবার রাতে রিয়ালের মাঠ সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ম্যাচের শুরুতে রোনালদো-মেসির দ্বৈরথ দেখার সুযোগ হয়নি ফুটবলপ্রেমীদের। সদ্যই চোট কাটিয়ে ফেরা মেসিকে শুরুর একাদশে মাঠে নামাননি বার্সা কোচ এনরিক। তিনি মেসিকে মাঠে নামান দ্বিতীয়ার্ধে। তবে মেসির অনুপস্থিতিতে বার্সার দায়িত্ব কাঁধে নেওয়া নেইমার-সুয়ারেজ জুটি শুরু থেকেই ছিলেন দুর্দান্ত।

লা লিগার গত মৌসুমে রিয়ালের মাঠে ম্যাচের শুরুতেই লিড নিয়েছিল বার্সা। এবারও তা-ই হলো। ম্যাচের ১১ মিনিটেই অতিথিদের এগিয়ে দেন সুয়ারেজ। রিয়ালের দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়ে বক্সের সামনে থেকে ডান দিকে সুয়ারেজকে বল বাড়ান সার্জিও রবার্তো। আর বল পেয়েই ডান পায়ের কোনাকুনি শটে জালে জড়িয়ে দেন উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার।

দুই মিনিট আগে অবশ্য এগিয়ে যেতে পারত রিয়ালই। কিন্তু রোনালদোর একটি আক্রমণ ব্যর্থ করে দেন বার্সা গোলরক্ষক ক্লাদিও ব্রাভো। ২৪ মিনিটে রিয়ালের বক্সের সামনে নেইমারকে ফাউল করে ম্যাচের প্রথম হলুদ কার্ড দেখেন হামেস রদ্রিগেজ। ফ্রি-কিকে দারুণ শটই নিয়েছিলেন নেইমার। তবে বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে ব্রাজিলিয়ান তারকার শট ঠেকিয়ে দেন রিয়াল গোলরক্ষক কেইলর নাভাস।
দুই মিনিট পরেই চোট নিয়ে মাঠ ছাড়েন বার্সার আর্জেন্টাইন ডিফেন্ডার হাভিয়ের মাশচেরানো। তার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন জেরমি ম্যাথিউ।

২৭ মিনিটে বার্সার ডিফেন্ডারের ভুলে বক্সের সামনে বল পেয়ে যায় রিয়াল। বক্সের সামনে থেকেই শট নিয়েছিলেন রদ্রিগেজ। তবে আরেকবার বার্সাকে রক্ষা করেন ব্রাভো। বাঁ দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে রদ্রিগেজের শট ঠেকিয়ে দেন চিলির এই গোলরক্ষক।

৩৮ মিনিটে সমতায় ফেরার আরেকটি সুযোগ এসেছিল রিয়ালের সামনে। ডান দিক থেকে বক্সের ভেতর লম্বা করে বল বাড়ান রোনালদো। তবে পোস্টের খুব কাছে থেকে শট নিতে ব্যর্থ হন করিম বেনজেমা।

উল্টো পরের মিনিটে পাল্টা আক্রমণে বার্সার ব্যবধান দ্বিগুণ করেন নেইমার। আর তাকে গোলে সহায়তা করেন অধিনায়ক আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা। বক্সের সামনে ছিলেন রিয়ালের দুই ডিফেন্ডার। তাদের ফাঁকি দিয়ে নেইমারকে বল বাড়ান ইনিয়েস্তা। দারুণ ফিনিশিংয়ে স্কোরলাইন ২-০ করেন ব্রাজিল তারকা। নেইমারের শট নাভাসের দুই পায়ের ফাঁক গলে বল জড়িয়ে যায় জালে।

এরপর প্রথমার্ধের অতিরিক্ত সময়ে স্কোরলাইন ৩-০ প্রায় করেই ফেলেছিল বার্সা। মাঝ মাঠে বাঁ দিক থেকে রিয়ালের দুই খেলোয়াড়কে কাটিয়েই বল নিয়ে দৌড় দেন নেইমার। বক্সের ভেতরে গিয়ে দারুণভাবে বলও তৈরি করে দেন। নিচু হওয়া বলেই হেড নিয়েছিলেন সুয়ারেজ। কিন্তু একদম গোললাইনের ওপর থেকে হেডে দলকে নিশ্চিত গোল খাওয়া থেকে বাঁচান মার্সেলো।

বিরতির পর শুরুতেই ব্যবধান কমানোর সুবর্ণ সুযোগ হারান ওই মার্সেলোই। বক্সের সামনে বার্সার এক ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে বল নিয়ে ভেতরে ঢুকেছিলেন তিনি। বাঁ দিক থেকে তার সামনে শুধু ব্রাভো। তবে বল পোস্টের বাইরে দিয়ে মারেন মার্সেলো।

পরের মিনিটে রিয়ালের দারুণ এক আক্রমণ ব্যর্থ করে দেন ব্রাভো। রদ্রিগেজের জোরালো শট ডান দিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে দুর্দান্তভাবে ঠেকিয়ে দেন বার্সা গোলরক্ষক। ৫৩ মিনিটে রিয়াল গোলরক্ষক নাভাসও দারুণ একটি সেভ করেন। বক্সের সামনে থেকে নেইমারের ফ্রি-কিক লাফিয়ে উঠে এক হাতে পাঞ্চ করে রিয়ালকে রক্ষা করেন কোস্টারিকার এই গোলরক্ষক।

এক মিনিট পরেই স্কোরলাইন ৩-০ করে ফেলেন বার্সা অধিনায়ক ইনিয়েস্তা। তবে এই গোলে দারুণ অবদান ছিল নেইমারের। বক্সের সামনে থেকে ব্যাক হিলে ইনিয়েস্তাকে বল বাড়ান তিনি। আর বল পেয়ে সেখান থেকেই ডান পায়ের জোরালো শটে বার্সাকে ৩-০ গোলে এগিয়ে দেন ইনিয়েস্তা।

এর পরই কোটি কোটি ফুটবলপ্রেমীদের অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে মাঠে নামেন বার্সার প্রাণভোমরা লিওনেল মেসি। ৫৭ মিনিটে ইভান রাকিটিচের বদলি হিসেবে মাঠে আসেন ফুটবলের খুদে জাদুকর। গত ২৬ সেপ্টেম্বর লাস পালমাসের বিপক্ষে চোটে পড়ার পর এই প্রথম মাঠে নামলেন চারবারের ফিফা বর্ষসেরা এই খেলোয়াড়।

মাঠে নামার নয় মিনিট পরেই গোলের দারুণ একটি সুযোগ তৈরি করেন মেসি। বক্সের ভেতর লম্বা করে ক্রস দিয়ে দ্রুত বক্সে ঢুকে যান তিনি। নেইমার ব্যাক হিলে আবার বল দেন মেসিকে। মেসি শটও নিয়েছিলেন, কিন্তু রিয়ালের ডিফেন্ডারের গায়ে লেগে বলের দিক পরিবর্তন হয়ে যায়।

৬৯ মিনিটে অসাধারণ একটি সেভ করেন ব্রাভো। দ্রুত গতিতে বল টেনে নিয়ে গিয়ে রোনালদোকে বাড়ান গ্যারেথ বেল। রোনালদোর সামনে ব্রাভো শুধু একাই। ব্রাভোর মাথার ওপর দিয়ে বল জালে জড়াতে চেয়েছিলেন রোনালদো। তবে দুহাত ওপরে তুলে দুর্দান্তভাবে বলটি ঠেকিয়ে দেন ব্রাভো।

এরপর ৭৪ মিনিটে নিজের জোড়া গোলে স্কোরলাইন ৪-০ করে ফেলেন সুয়ারেজ। জরদি আলবার কাছ থেকে বল পেয়ে খানিকটা এগিয়ে গিয়ে নাভাসকে পরাস্ত করে বল জালে জড়িয়ে দেন উরুগুইয়ান তারকা।

শেষ দিকে ব্রাভো রিয়ালের আরো কয়েকটি আক্রমণ ব্যর্থ করে দেন। ফলে সান্ত্বনাসূচক একটি গোলও করতে পারেনি স্বাগতিকরা। বরং নেইমারকে পেছন থেকে লাথি মেরে লাল কার্ড দেখেন ইসকো।

এই জয়ে ১২ ম্যাচে ৩০ পয়েন্ট নিয়ে লা লিগার শীর্ষস্থান আরো মজবুত করল বার্সেলোনা। সমান ম্যাচে রিয়াল মাদ্রিদের সংগ্রহ ২৪ পয়েন্ট।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.