বাঁশখালী পৌর-নির্বাচন: উন্নয়নহীন পৌরসভায় প্রার্থীদের নানা প্রতিশ্রুতি

0

কল্যাণ বড়ুয়া মুক্তা, বাঁশখালী :: বাঁশখালী পৌরসভার বয়স দেখতে দেখতে পেরিয়ে গেল ১৩টি বছর। তারপরেও পৌরবাসী তাদের আশ্বান্বিত উন্নয়নের ছোঁয়া পায়নি। নির্বাচন এলে প্রার্থীদের নানা ধরনের উন্নয়নের প্রতিশ্র“তি জনগণের মন ভুলালেও নির্বাচন পরবর্তী সেসব কথা মনে থাকে না বিজয়ী প্রার্থীদের। সাধারণ জনগণের সুযোগ সুবিধার কথা বিবেচনা করে কাজ করার চেয়ে ব্যক্তি স্বার্থ সিদ্ধির জন্য কাজ করে যান দায়িত্বরতরা। নাম প্রকাশ না করা স্বত্বে এভাবে ক্ষোভ ঝাড়লেন কয়েকজন পৌরসভার এলাকার ভোটার এই প্রতিনিধির কাছে। তাদের মতে পৌরসভায় ময়লা আবর্জনা ফেরার জন্য সুনির্দিষ্ট নেই কোন স্থাপনা। সকল নালা নর্দ্দমা সংস্কারহীন ও ভরাট হয়ে যাওয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই পানিবন্দী পৌরসভার অধিকাংশ স্থান। কর নির্ধারণে নেই কোন সুনির্দিষ্ট নীতিমালা।

জনসম্মুখে দায়িত্বরতরা কোন বাজেট পেশ করেন না-আরো কত কি। তারপরেও ভোট যখন এসেছে অবশ্যই কাউকে না কাউকে দেব। তবে যিনি ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে সার্বজনীন স্বার্থ বিবেচনা করবে এবং সকল শ্রেনীর মানুষের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করবে ওই ধরনের মানুষকেই পৌরসভার মেয়র হিসেবে দেখতে চাই অধিকাংশ জনগণ। বাঁশখালীর প্রাণকেন্দ্র সাবেক জলদী ইউনিয়নকে ২০০২ সালের ডিসেম্বরে পৌরসভা এলাকায় হিসেবে ঘোষনা করা হয়। একদিকে বাঁশখালীর প্রাণ কেন্দ্র, অপরদিকে পৌরসভা সব মিলিয়ে বাঁশখালীবাসীর মূল সংযোগস্থলে পরিণত পৌর এলাকাটি।

পৌরসভার বয়স এক যুগ পেরিয়ে গেলেও আশানুরূপ উন্নয়ন ছোঁয়া বঞ্চিত পৌরবাসী নতুন করে স্বপ্ন দেখছে আগামীতে যে পৌর পিতা হিসাবে আসবে তারই হাতে উন্নয়নের ছোঁয়া লেগে আধুনিক পৌরসভায় পরিণত হবে বাঁশখালীটি। বর্তমান পৌরসভা নির্বাচনে দলীয় ভাবে হওয়ায় লড়াই হবে আওয়ামীলীগের প্রার্থী সেলিমুল হক চৌধুরী ও বিএনপি’র প্রার্থী কামরুল ইসলাম হোছাইনীর মধ্যে। অনেকে নির্বাচন নিয়ে নানা ধরনের শংকার কথা জানালেও প্রশাসনিক কর্মকর্তারা কোন ধরনের আশংকা না করার জন্য সকল শ্রেণির জনগণের প্রতি আহবান জানাচ্ছে। নির্বাচনের দিনক্ষণ যতই ঘনিয়ে আসছে জেলা উপজেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা এসে বাঁশখালীর দুই প্রার্থীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রচার-প্রচারণাকালে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী সেলিমুল হক চৌধুরী পৌর মেয়র হলে পৌর এলাকার রাস্তাঘাট, কালভার্ট, নালা নর্দ্দমা নির্মাণ ও সংস্কারের প্রতিশ্রুতি পৌর এলাকার সর্বত্র সড়ক বাতির আওতায় নিয়ে আসে। শিক্ষার মান উন্নয়নে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ।

প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, গভীর নলকূপ স্থাপন, মাদকামুক্ত সমাজ গঠন, সা¤প্রদায়িক স¤প্রীতি রক্ষা এবং এলাকার শান্তিশৃংখলা রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা পালনের অঙ্গিকার করছেন। অপরদিকে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী কামরুল ইসলাম হোছাইনী উন্নয়নের ছোয়া বঞ্চিত বাঁশখালী পৌরসভার রাস্তাঘাট পুনঃ নির্মাণ, শিক্ষা ও বিদ্যুৎ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মাদকমুক্ত সমাজ গঠন, যুব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন, আধুনিক চিকিৎসা সেবা ও এলাকার আইনশৃংখলা উন্নয়নে কার্যকর ভূমিকা গ্রহণ করবে বলে প্রতিশ্র“তি প্রদান করছেন। তবে সাধারণ ভোটাররা বিগত এক যুগ আগে বাঁশখালী পৌরসভা প্রতিষ্ঠার পর থেকে পৌরবাসী নানা উন্নয়নের আশায় আশ্বানিত হলেও পৌর এলাকায় শুধু জায়গা জমির দাম বৃদ্ধি ছাড়া তেমন কিছু হয়নি। অপরদিকে জায়গা জমির দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় সাধারণ জনগণ তাদের নালা নর্দ্দমা থেকে শুরু করে পুকুরটি পর্যন্ত ভরাট এমনকি বেচাবিক্রি করেছে। ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পৌর এলাকায় জলমগ্নসহ অফিস আদালত ভবনে পানি উঠে। সেই হিসাব করছে এখন সাধারণ ভোটাররা।

এদিকে বাঁশখালী পৌরসভায় নির্বাচনে এবার ১১টি ভোট কেন্দ্রে ১২ হাজার ১শ ৪৭ জন পুরুষ ভোটার এবং ১১ হাজার ৬শ ৪৬ জন মহিলা ভোটার ভোট প্রদান করছেন। বাঁশখালী পৌরসভার ১১টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে জলদী ভাদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৭টি বুথে ২ হাজার ৭শ ২০ জন, জলদী কেয়াং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৪টি বুথে ১ হাজার ২শ ৬৯ জন , উত্তর জলদী হলস্যা পাড়া রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৩টি বুথে ১ হাজার ৩৪ জন, বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৭টি বুথে ২ হাজার ৭শ ৩৬ জন, পূর্ব জলদী বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৬টি বুথে ২ হাজার ৩শ ২৯ জন, রুহুল¬াপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭টি বুথে ২ হাজার ৬শ ৫৮ জন, উত্তর জলদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৭টি বুথে ২ হাজার ৪শ ৭৮ জন, দক্ষিণ জলদী আস্করিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ৮টি বুথে ২ হাজার ৯শ ৪৯ জন, দক্ষিণ জলদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৮টি বুথে ৩ হাজার ৪৪ জন, রংগিয়াঘোনা মনছুরিয়া সিনিয়র মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৪টি বুথে ১ হাজার ২শ ২০ জন, দোসারী পাড়া ইবতেদায়ী মাদ্রাসা কেন্দ্রে ৪টি বুথে ১ হাজার ৩শ ৫৬ জন ভোটার ভোটাধিকার প্রয়োগ করবেন। মেয়রদের পাশাপাশি কাউন্সিলর প্রার্থীরা থেমে নেই প্রচার-প্রচারণা থেকে।

সারা বাঁশখালীর উৎসুক জনগণ এখন পৌরসভা এসে সময় কাটাচ্ছে নির্বাচনীক আলাপ আলোচনায়। তবে পৌরনির্বাচনে রাজনৈতিক দলের ব্যানারের পাশাপাশি ব্যক্তিত্বকে প্রধান দেবে সাধারণ ভোটাররা। এদিকে আওয়ামীলীগ প্রার্থীর পক্ষে কেন্দ্রীয় যুবলীগের একটি বিশেষ দল চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মিজানুর রহমানের নেতৃত্বে দক্ষিণ জেলা যুবলীগের সভাপতি আ.ম.ম টিপু সুলতান, সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক পার্থ সারথী চৌধুরী, বাঁশখালী উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক সিকদার, যুগ্ম আহবায়ক অধ্যাপক তাজুল ইসলামের নেতৃত্বে একটি বিশেষ কর্মী সমাবেশের মাধ্যমে আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করার জন্য প্রচার প্রচারণায় অংশ নেয়।

এছাড়া দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি মোছলেম উদ্দিন আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক মুফিজুর রহমানসহ দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগের নেতৃবৃন্দ ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক আবদুল গফুর, সাংগঠনিক সম্পাদক মহিউদ্দিন চৌধুরী খোকা, দপ্তর সম্পাদক শ্যামল দাশ সহ বিশেষ প্রতিনিধি দল বাঁশখালী পৌর এলাকার বিভিন্ন স্থানে গণ সংযোগ, পথসভার মাধ্যমে আওয়ামীলীগ প্রার্থীকে বিজয়ী করে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখার আহবান জানান।

অপরদিকে বিএনপি’র প্রার্থী কামরুল ইসলাম হোছাইনীর পক্ষে দক্ষিণ জেলা বিএনপি’র সভাপতি ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও সাংসদ জাফরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বে যুবদল ও ছাত্রদলের সমন্বয়ে একটি দল বাঁশখালীর পৌরএলাকার বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে। আজ সোমবার বিএনপি’র নির্বাচনী মনিটরিং দলের অন্যতম নেতা মোঃ নাছির উদ্দিনের নেতৃত্বে একটি বাঁশখালীতে কামরুল ইসলাম হোছাইনীর পক্ষে প্রচার-প্রচারণায় অংশগ্রহণ করবে বলে বিএনপি’র প্রার্থী সূত্রে জানা যায়। মেয়র প্রার্থী ছাড়াও বাঁশখালীতে সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ১০ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৩৮ জন প্রার্থী প্রচার প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.