চট্রগ্রাম কর্ণফূলীর অভয়মিত্র ঘাট এখন বিনোদন কেন্দ্র

0

জামাল জাহেদ, চট্রগ্রাম  :  চট্রগ্রামের কর্নফুলীতে কয়েকশ বছরের পুরনো অভয়মিত্র সাম্পানঘাট দর্শনার্থী ও পর্যটকের জন্য দারুন এক বিনোদন পার্কে পরিণত হয়েছে।প্রতিদিন নিত্যনতুন আমেজে হাজার হাজার ছেলে বুড়ো তরুন মানুষের মিলনমেলা বসে ঘাটে।যেনো কপোত কপোতীর নান্দনিক ভাবে যুগল ফ্রেমে বন্দি।

চট্রগ্রাম জেলার কর্ণফূলী সেতু বাংলাদেশের অন্যতম সৌন্দর্যময় সেতু,যা মাথা উচু করে দাড়িয়ে আছে সাদা বকের মতো,যেনো সৌন্দর্যবর্ধন এক নগরীর দ্বারপ্রান্ত,সেতুটি নতুন যোগাযোগব্যবস্থার  দ্বার উন্মুক্ত করেছে দক্ষিণ জেলার কক্সবাজার,বান্দরবন টু ঢাকার সেতুবন্ধন।ঠিক কর্ণফূলী সেতুর দক্ষিণে ফিরিঙ্গিবাজারের ৩৩নং সিটি ওয়ার্ডের পাশ দিয়ে গড়ে ওঠছে অভয়মিত্র ঘাট।তৈরি হচ্ছে সাগরের নিচ দিয়ে কর্নফুলী টানেল,টানেলের পাশে নির্মিত হচ্ছে হাতিরঝিলের মতো সাদা কয়েকটি উড়াল সেতু।

কর্নফুলী হতে পতেঙ্গা বিচ আর বিমানবন্দর পর্যন্ত নির্মিত হচ্ছে সংযোগ সড়ক  অভয়মিত্র ঘাটের পাশ দিয়ে।এই অভয়মিত্র ঘাট নামকরণ হয় কয়েকশত বছরের পুর্বের বয়োবৃদ্ধ প্রয়াত হিন্দু ব্যবসায়ী জনৈক অভয়মিত্রের নাম অনুসারে।সৃষ্টিকালে এই হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকটি ছোট টং দোকান করে তাবু গড়েছিলেন খালের পাশে।যদিও সময়স্রোত আর কালের আর্বতে বেচে নেই আর তিনি।তবে লোকজন আসা যাওয়া করতে করতে আজ পরিচিত হলো তার নামে অভয়মিত্র ঘাট।

 ঘাট থেকে প্রতিদিন কয়েকশত যাত্রীবাহী সাম্পান নৌকা  ভেসে চলে লোকালয়ে খোয়াজনগর,কালুরঘাট,বোয়ালখালী, পটিয়া, আনোয়ারা ঘাটে।অভয়মিত্র ঘাটে চার লেনের সড়ক করার জন্য জমিয়ে রাখা পাথরের ব্লক, পাশে নির্মিত মাটির নিচের টানেল,কর্নফুলী নদীর বহমান জল ধারা,ভাসমান দেশি বিদেশী রং বেরংয়ের  জাহাজ,দারুন জমিয়ে তুলেছে অভয়মিত্র ঘাট।প্রতিদিন এখন অভয়মিত্র ঘাট দর্শনার্থীদের উপচেপড়া ভিড়ে কোলাহলময় নগরীতে পরিণত হয়েছে প্রাচ্যের চট্রলা রানী কর্নফুলী চত্বর। নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে সমুদ্র সৈকত, শিশুপার্ক, ইকোপার্ক, ওয়াটার পার্ক কিংবা চিড়িয়াখানা থাকলে ও ওখানে কোন দর্শনার্থী নেই।কোতোয়ালি ও নিউ মার্কেটের কাছাকাছি এলাকা হওয়াতে তিল ধারণের ঠাঁই নেই প্রতিদিন ঘাটের কুলে।

আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা সব মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয়েছে নগরীর এই অভয়মিত্র ঘাট যেনো নতুন এক বিনোদন স্পট। আর দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণে বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে হরেক রকমের দোকানের পশরা।তাবু স্টাইলে খোলে বসেছে চা কপি চটপটি, ফুসকা,ছুলা বাতাম,কাকড়া সহ বিভিন্ন ভাঁজা বুজার দোকান।আর এসব দোকানে বেশি পরিমাণে বিক্রি হচ্ছে দেশি বিদেশী নামে স্থানীয় সাগর কুলে ধরা পড়া চিংড়ী কাকড়া,প্রতি পিচ ৩৫/৪৫টাকা করে দেদারছে বিক্রি হচ্ছে।সরেজমিনে দেখা যায় খুব মজা করে খাচ্ছে অনেকে তৃপ্তিদায়ক ভাবে,বেশির ভাগ তরুনেরা  কাকড়ার প্রতি ঝুকে পড়েছে ভাজা  কাকড়ার স্বাদ পেতে।চট্রগ্রাম কর্ণফূলীর অভয়মিত্র ঘাট

চট্টগ্রামের বিনোদন কেন্দ্রের তালিকায় রয়েছে ফয়েজলেক সি-ওয়ার্ল্ড (ওয়াটার পার্ক), পতেঙ্গা সমুদ্র সৈকত, বাটারফ্লাই পার্ক, নেভাল অ্যাকাডেমি, চিড়িয়াখানা, আগ্রাবাদ শিশুপার্ক, কাজীর দেউড়ি শিশুপার্ক, সিআরবি মোড়, রেলওয়ে জাদুঘর ও জাতীয় জাদুঘর, বাটালি হিল, ডিসি হিল, ভাটিয়ারী পাহাড় পার্ক,২নং গেইটের বিপ্লব উদ্যান, , ওয়ার সিমেট্রি ও স্বাধীনতা পার্ক অন্যতম। শহরের বাইরের বিনোদন কেন্দ্রগুলোর মধ্যে রয়েছে আনোয়ারার পারকি সমুদ্র সৈকত, সীতাকুন্ড চন্দ্রনাথ পাহাড়, সীতাকুন্ড  ইকোপার্ক, মিরসরাইয়ের মহামায়া ও বাঁশখালী ইকোপার্ক।তবে সাম্প্রতিক সময়ে দারুন লোকের বিচরণ দেখা যাচ্ছে কর্নফুলী অভয়মিত্র ঘাটে।

সরেজমিন দেখা গেছে, সকাল থেকেই শিশু থেকে শুরু করে বৃদ্ধ পর্যন্ত সব বয়সী মানুষের মিলনমেলায় পরিণত হয় নগরীর নতুন এই বিনোদন কেন্দ্রটি।দুপুরে ও কিছু কলেজ ছাত্র ছাত্রীদের আড্ডা দিতে দেখা যায় যা অবশ্যই দুঃখজনক বলে মন্তব্য করেন স্থানীয় মুরুব্বি কাশেম।অন্যদিকে  ধনী-গরিব সবাই আত্মীয়স্বজন, বন্ধুবান্ধব একে-অন্যের সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে জড়ো হচ্ছে গজিয়ে ওঠা বিনোদন কেন্দ্রটিতে। ঈদের দিন ও বিভিন্ন সামাজিক অনুষ্ঠানে  দর্শনার্থীদের মধ্যে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী ও প্রেমিক যুগলের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। তবে কখনো কখনো  বিনোদন কেন্দ্রটিতে রাত পর্যন্ত  যুগল জুটি দেখা যাচ্ছে বলে অবিযোগ করেন  খোয়াজনগরের মোঃ আনোয়ার কবির।যদিও স্বল্প সময়ে ভ্রমণ পিপাসুদের কাছে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে নগরীর কাছে হওয়াতে।আমাদের প্রতিবেদক সরেজমিনে তথ্য সংগ্রহ কালে দেখেছেন,পাশের কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত ওসি জসিম উদ্দিন ও কিছু পুলিশ সদস্যও  বিকালে হেটে সময় কাটাতে।বিকালে ঘাটের  চারপাশে হাজার হাজার দর্শকের অলস সময় কাটানোর আড্ডার মজার দৃশ্য অনেকে ক্যামেরা বন্দি করতে  দেখা যায়।যাদের বেশির ভাগ স্কুল কলেজের সহপাঠি  সম বয়সী তরুন তরুনীরা।

অভয়মিত্র ঘাটে  আনন্দে মেতে থাকা মধ্যবয়সী ফাতেমা বেগম বলেন, প্রতিদিন সন্তানদের নিয়ে সবাই একসঙ্গে এখানে এসে সময় কাটাতে ভালো লাগে কারন এতো দুরে না ঘুরে, কর্নফুলী সেতুর পাশে ঘুরে কম সময়ে বাসায় ফিরে যেতে পারে।

সরকারি কোন উদ্যেগ বা ব্যক্তি উদ্যেগে না হলেও উন্মুক্ত এই অভয়মিত্র ঘাট সবার জন্য উন্মুক্ত তার কারন ও একটি বলে জানা যায়,টানেল ও বিমানবন্দর পর্যন্ত সড়ক নির্মানে কাজ হচ্ছে তাই ব্লক বসিয়ে সাজানো হয়েছে ঘাটপার,পরে  বন্দরের স্বার্থে কাজ হলে হয়তো বিনোদন পার্ক থাকবেনা আর কারন মহাসড়কে পরিনত হবে সংরক্ষিত এলাকাটা। কোতোয়ালি থানা থেকে কোন নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকলে ও বন্দর কতৃপক্ষে অভয়মিত্রঘাটে নিরাপত্তার দায়িত্ব থাকা আনসার সদস্য মোঃ জামাল উদ্দিন ও মেহেরাজ মাহমুদ বলেন,” আমরা এখানে রাত ১০টা পর্যন্ত ডিউটি করি প্রতিদিন,তবে এ পর্যন্ত এখানে কোন সমস্যা হয়নি জানামতে। যদিও রাত পর্যন্ত ছেলেমেয়েদের সময় কাটাতে দেখা যায়।তাদের তথ্যমতে জানা যায়, বিকালে প্রায় প্রতিদিন ২/৩হাজার বিনোদনউৎসুক ও ভ্রমন পিপাসু মানুষের উপস্থিতিতে উপচেপড়া ভিড় তৈরি হয়।ঘাট থাকা পাথরের ব্লকে বসে সরাসরি জাহাজ ও সমুদ্রের ঢেউ দেখা যায় বলে বিকেলে  মানুষের ঢল নামে অভয়মিত্রঘাটে। শিশু, কিশোর-কিশোরী থেকে বিভিন্ন বয়সের নারী, পুরুষ ঘাটে এসে আনন্দে মেতেছেন।বিকালে দেখা যায় কোন কোন প্রেমিক প্রেমিকা হারিয়ে যাচ্ছে তাদের স্বপ্নের রঙিন দুনিয়ায়।চট্রগ্রামের কর্নফুলী নদী তীরে অস্থায়ী সময়ের জন্য হলেও এসব ভ্রমন পিপাসু কিছু মানুষেরা আনন্দ পাচ্ছে বলে জানা যায়।

খোয়াজনগর এলাকা থেকে সপরিবারে বেড়াতে আসা কলেজ ছাত্রী রোকেয়া জান্নাত রুবি জানান,বাসা থেকে মাত্র তিন মিনিটে এখানে আসা যায়,তাই মাঝে মধ্যে ঘুরতে আসি সবাই মিলে,অনেকটা ভালো লাগে ঘাটে ঘুরতে বিকালে”।অভয়মিত্র ঘাটে  মানুষের এই  মিলনমেলায় বিভিন্ন এলাকা থেকে গাড়ি নিয়ে দূরদূরান্ত থেকে আসে নানান বয়সী নারী ও পুরুষ। কেউ গরম পিঁয়াজু আর কেউ খাচ্ছেন কাঁকড়া ভাজা, আবার কারো হাতে কোল্ড ড্রিংকস।কেউ বা চানামুড়ি চটপটি ফুচকাওয়ালা দোকানে ভিড় জমাচ্ছে।

অন্যদিকে অভয়মিত্রঘাটে অস্থায়ী চটপটি দোকান  মালিক খালেক জানান,দিনে প্রতিদিন ৩/৪হাজার টাকার বেচা বিক্রি করে খুব ভালো ব্যবসা হয় তার।কাউকে কোন টাকা পয়সা দিতে হয় কিনা জানতে চাইলে কিছুক্ষণ চুপ থেকে এড়িয়ে যান তিনি।

 ফিরিঙ্গিবাজার ৩৩নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর হাসান মুরাদ অভয়মিত্রঘাটের বর্তমান পরিস্থিতি সর্ম্পকে বলেন , অভয়মিত্রঘাট বর্তমানে বিনোদন পার্কে পরিনত হয়েছে।যদিও বেশিদিন থাকবেনা কারন বন্দরের প্রয়োজনে পাল্টে যাবে দৃশ্য তবে পরিবেশ যাতে ভালো থাকে তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবহিত করেছেন তিনি নজর রাখতে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.