২০১৫ সালের বিদায়, ২০১৬ সালের উদয়

0

জামাল জাহেদ, কক্সবাজার:: শুধু কি আমরা নাকি পৃথিবীময় বেদনা সিক্ত নয়নে পশ্চিম আকাশে চোখ রেখে অগনিত মানুষের ভেতর থেকে গর্জে ওঠা একটি গান”ওগো সুর্য তুমি ডুবে যেওনা,তুমি ডুবলে নামবে আধার!!শুরু হবে হারানো একটি বছর।

কবিরা বলেন-বিদায়! বিদায়! একি কলরব ধ্বনিছে বাতাসে, ক্রন্দন ভরা অক্ষিপট/ভাসাইছে সবাই ঝর্ণার ধারা, অধর পুষ্প নাহি ফুটে আজ/মুখে সবার বিষণ্নতা, আজি মোদের বিদায় লগ্ন কহিছে কৃষ্ণপাতা।’

ঘটনাবহুল বছর ২০১৫-এর বিদায়ের দিন অস্তনিমিত লাল কষ্টে সাগরে ডুবা সুর্যের এক লম্বা ডুব।যেনো হন্য হয়ে খুজে আরেকটি বছর।ঘড়ির কাঁটা একটা সেকেন্ড পার করে দিলো মধ্য রাতে একটি বছরের বিদায়,আরেকটি বছরের আগমন।পাল্টে দিয়েছে ক্যালেন্ডারের পাতা নতুন করে খুলে দিয়েছে হিসাবের খাতা। গোধূলি বেলায় রক্তিম সূর্যাস্তের মধ্য দিয়ে হারিয়ে গেলো ঘটনা বহুল ২০১৫সাল। আগামীকাল নতুন সূর্যের প্রতীক্ষায় মানুষ স্বাগত জানাবে ইংরেজি নতুন বছর ২০১৬-কে। সু-স্বাগত ২০১৬,অনাবিল শান্তিতে ভরে যাক পৃথিবীর পরিবেশ।স্মৃতি স্বপ্ন আশা, ব্যথা কষ্ট অভিমান,হাসি কান্না অনুরাগ,প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসাব মুছে শুরু হোক সবার জীবনে নতুন একটি বছর। অনেক ঘটন-অঘটন, প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তি, চড়াই-উৎরাই, উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ও আনন্দ-বেদনার সাক্ষী হল বিদায়ী বছর। রাজনৈতিক সহিংসতা,ইতিহাস,সংবাদ,আবিঃষ্কার,তথ্যুপ্রযুক্তি সহ নানা দুর্যোগ-দুর্ঘটনা আর ঘটনা প্রবাহের মধ্য দিয়ে শেষ হলো ইংরেজি ২০১৫ সাল স্মৃতির পাতায়।

জগতের নিয়মে পাওয়া না পাওয়া ভেতরে রেখে আবারো স্বপ্নের বীজ বুনে সামনে চলার প্রয়াসে এগিয়ে যাবে মানুষ,চাহিদা মরেনা চাহিদা শেষ হবার নয়।নিত্য নতুন কিছু পাওয়ার আশায় এগিয়ে যাবে বাংলাদেশ,সাথে বাঙ্গালী ও বাংলার মানুষ। বিদায়ী বছরটি প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তির দোলাচলে নিয়েছে অনেক কিছপেয়েছি কি বেশি নেওয়ার চেয়ে।নতুন বছর মানেই নতুন কিছু স্বপ তরে তরে সাজানো।নতুন বছরটি ভরে উঠুক আনন্দে, শান্তিতে। হ্যাপি নিউ ইয়ার।

সৃষ্টি সুচনা কিভাবে এলো বছরের উৎসবঃ প্রাগৈতিহাসিক কাল থেকেই বর্ষ বিদায় এবং নতুন বছরকে স্বাগত জানানো মানুষের নিয়ম নীতিতে পরিণত হয়েছে। ইতিহাস যদিও বলে প্রাচীন রোমের পৌরাণিক দেবতা জেনাসের নামানুসারে নতুন বছরের প্রথম মাস জানুয়ারির নামকরণ। দেবতা জেনাসের দুটি মুখ একটি সূর্য অপরটি চন্দ্র। সূর্য উত্তাপ বিকিরণ করে জীবন সঞ্চালন ঘটায়। চন্দ্র তার মধুর আলোয় জীবনের পরিপুষ্টি আনে। আবার জেনাসের একটি মুখ ভবিষ্যতের প্রতীক, অন্যটি অতীতের। তিনি পার্থিব মানুষের জীবনদ্বারের প্রহরী।

তাই দৃষ্টি প্রসারিত করে আছেন আমাদের অতীত থেকে অনাগত ভবিষ্যতের দিকে। অতীত থেকে অনাগতের যাত্রাপথে যে চলমান প্রবাহমানতা, জেনাস তার নিয়ামক এবং নিয়ন্ত্রক। তিনি স্বস্তি, শান্তি আর কল্যাণের দেবতা। প্রাচীন রোমানরা একে ভক্তিভরে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করতেন বিভিন্ন বিবাহ অনুষ্ঠানে। ব্যবসা–বাণিজ্য শুরুর আগে ও পরে। শিশু জন্মের মুহূর্তে। কৃষিকাজ শুরুর আরম্ভে কিংবা শস্য সংগ্রহ শেষে সামাজিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে। বহু প্রাচীনকালেই জীবন সম্বন্ধে মননশীল মানুষের মনে সুকুমার ভাবনার যে জাগরণ ভালোবাসা ও আবেগের সংমিশ্রণে ঘটেছিল, মানুষ তাকে বর্ষ বিদায়ের বেদনাময় অনুষ্ঠানে যেমন রূপায়িত করতে চেয়েছে, তেমনি জীবনের শুভ কামনায় জগতের অনিবার্য নিয়মে নতুনকেও অভিনন্দিত করতে সে ভোলেনি। ইতিহাসবিদেরা জানিয়েছেন, চার হাজার বছর আগে প্রাচীন মেসোপটেমিয়ার বেবিলিয়নরা ‘আকিতু’ নামে নববর্ষ অনুষ্ঠান পালন করে সুখী, শান্তিপূর্ণ, শুভময় ভবিষ্যতের জন্য প্রার্থনা জানাতেন দেবতার দুয়ারে।

বাংলাদেশে ২০১৫ সালে ঘটে যাওয়া কিছু চুম্বন কাহিনীঃ১) হরতাল ও অবরোধের তিক্ত বছর ২০১৫ সালটা শুরু হয়েছিল টানা হরতাল-অবরোধের সহিংসতার ভেতর।সব দলের মতো প্রতিহিংসার রাজনীতি।সেই হরতাল,জ্বালাও-পোড়াও কর্মসূচি, জনমনে আতঙ্ক,ভাঙ্গচুর পেট্রোল বোমা ছুড়া।অন্যদিকে ক্ষমতাধর সরকারের সতর্কবাণী,অপারেশন, মামলা হামলা গ্রেফতার, বিধিনিষেধের যাতাঁকলে অতিষ্ট জনগন।কেমন জানি ছিলো ২০১৫সাল রাজনীতির মাঠে এক অনিশ্চিত পরিবেশ।কখন জানি কি হয়।বিদায় বছরের ৪ঠা জানুয়ারি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া তার গুলশান কার্যালয়ে ‘অবরুদ্ধ’ থেকে ৯৩ দিনের আন্দোলন করেছেন। এসময় সারাদেশে পেট্রোলবোমা, আগুন, ককটেল, গুলি, হামলা-পাল্টা হামলার ঘটনায় ঝরেছে ১৩৭ প্রাণ। বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে জনজীবন।যদিও এক পশলা বৃষ্টি যেনো নৌকা এবং ধানের শীষ নিয়ে একটি উৎসব মুখর প্রচারণাময় ভোটযুদ্ধের মানা নামানা ফলাফলে নাটকের ভেতর দিয়ে শেষ হয়েছে ২০১৫।

ব্লগার বা মুক্তমনা লেখকের খুনঃজেএমবি মানে জামিয়াতুল মুজাহিদ বাংলাদেশ।সেই জঙ্গিদের হামলার শিকার২০১৫ সালে মুক্তমনা ব্লগার,লেখক-প্রকাশক ও ভিন্ন মতাবলম্বী ইসলামী চিন্তাবিদ।তারাই বার বার জঙ্গিদের হামলার শিকার হয়েছেন। এ কারণে অনেকেই দেশ ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। বছরের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি এলাকায় জেএমবির জঙ্গিরা মুক্তমনা বিজ্ঞানমনস্ক লেখক ও ব্লগার অভিজিৎ রায়কে প্রকাশ্যে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করে। গুরুতর আহত হয় অভিজিতের স্ত্রী বন্যা।অভিযোগ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উদাসীনতার কারণে এ ধরনের হত্যা থেমে থাকেনি। এরপর খিলগাঁওয়ের নিজবাসায় বস্নগার নিলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীলকেও একইভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আনসার আল-ইসলাম বাংলাদেশ এই হত্যার দায় স্বীকার করে। পরে ৩১ অক্টোবর সুপরিকল্পিতভাবে জঙ্গি হামলায় শাহবাগের আজিজ সুপার মার্কেটের জাগৃতি প্রকাশনীর নিজ অফিসে খুন হন ফয়সল আরেফিন দীপন।

একই দিন লালমাটিয়ায় টুটুলের শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর অফিসে হামলার শিকার হন আহমেদুর রশীদ টুটুল, রণদীপন বসু ও তারেক রহিম। বছরের শেষদিকে নভেম্বর মাসে আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন আইএস পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, ডাকও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী হারানা হালিম, কথাসাহিত্যিক হাসান আজিজুল হকসহ ৭ বিশিষ্ট ব্যক্তিকেও হত্যার হুমকি দিয়ে চিঠি দেয়। অপরদিকে তেজগাঁওয়ে ওয়াশিকুর রহমান বাবু এবং সিলেটে অনন্ত বিজয় দাসকেও একই পরিণতি বরণ করে নিতে হয়। আনসারুল্লাহ বাংলাটিম এদের হত্যার দায় স্বীকার করে।লেখক-প্রকাশক- ব্লগাররদের পাশাপাশি বাড্ডায় পিডিবির সাবেক চেয়ারম্যান ও কথিত পীর খিজির খানকেও তার দরবার শরিফের ভেতরে কুপিয়ে হত্যা করে।২৩ অক্টোবর পুরান ঢাকায় হোসেনি দালানে বোমা হামলার ঘটনাটিও এ বছরের অন্যতম ঘটনাগুলোর মধ্যে একটি। ওয়েবসাইটে এক বিবৃতিতে আইএস এই হামলার দায় স্বীকার করে। তবে আইএস নিয়ে সরকারের ভেতরেও তথ্যের বিভ্রান্তি ছিল।

সরকারের দায়িত্বশীল ব্যক্তিরা আইএস নিয়ে স্ববিরোধী কথা বলে আলোচনার ঝড় তোলেন। বছরের শেষভাগে ঢাকা ও রংপুরে দুই বিদেশি নাগরিককে গুলি করে হত্যার ঘটনায় জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বাংলাদেশ চরম সমালোচনার মুখে পড়ে। বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে সরকার। গুলশান ২ নাম্বার সেকশনের ৯০ নাম্বার সড়কে ইতালিয়ান নাগরিক তাবেলা সিজারকে অজ্ঞাত সন্ত্রাসীরা গুলি করে হত্যা করে। আইএস এ হত্যার দায় স্বীকার করে। ঘটনার পর হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িতদের কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর কয়েকদিন পর রংপুরে জাপানি নাগরিক হোসে কোমিও সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন। এ ঘটনার পর বাংলাদেশে অবস্থানরত বিদেশি নাগরিকদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্নের ঝড় ওঠে। এরপর দিনাজপুরে অপর এক ইতালীয় নাগরিকের ওপর ধারালো অস্ত্রসহ সন্ত্রাসীরা হামলা চালায়। ভাগ্যক্রমে তিনি বেঁচে যান। বিদেশিদের নিরাপত্তার বিষয়টি সব মহলে বেশ নাড়া দেয়।যদিও দেশে কোন অঘটন হলে দোষ চাপা হয় বিরোদী দল বা বিএনপিকে ফলে বেশি সুযোগ পাচ্ছে তাতে জেএমবি বা চরমপন্থি গোষ্টি।

বিশ্বকাপানো বর্নাট্য বাংলা ক্রিকেট ক্রীড়াঙ্গনঃ আফগানিস্তানকে হারানোর মধ্য দিয়ে বিশ্বমঞ্চ মাতানো শুরু করে বাংলাদেশ। এরপর বাঘের গর্জনে কেঁপে উঠে স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ড।ইংল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে। পাকিস্তান, ভারত ও দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ : বিশ্বকাপের পর পাকিস্তানকে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে হোয়াইটওয়াশ করে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের পর টাইগারদের শিকারের তালিকায় যোগ হয় দুইবারের বিশ্বচ্যাম্পিয়ন ভারত। ওয়ানডে সিরিজে ২-১ ব্যবধানে জয়ের আগে বাংলাদেশ একমাত্র টেস্টও ড্র করে। ভারতের পর প্রাপ্তির খাতায় যোগ হয় দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয়। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে অনভিজ্ঞ বাংলাদেশ টি-টোয়েন্টি সিরিজ হারলেও ওয়ানডে সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জিতে নেয়। এরপর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজও ড্র করে স্বাগতিক দল।বছরের শেষ প্রান্তে জিম্বাবুয়েকে ওয়ানডে সিরিজে হারায় টাইগাররা। ওয়ানডে সিরিজে সফরকারীদের হোয়াইটওয়াশের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজ ড্র করে বাংলাদেশ।

বিশ্বকাপে মাহমুদউল্লাহর জোড়া সেঞ্চুরি, প্রথম বাংলাদেশি ক্রিকেটার হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরির স্বাদ পান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। ৯ মার্চ অ্যাডিলেডে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ১০৩ রানের পর ১৩ মার্চ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ১২৮ রান করেন রিয়াদ। বর্ষসেরা ওয়ানডে দলে মুস্তাফিজ, ওয়ানডেতে মাত্র নয় ম্যাচে ২৬ উইকেট নিয়ে আইসিসির বর্ষসেরা তালিকায় জায়গা করে নিয়েছেন মুস্তাফিজুর রহমান।২০১৫সালে গুগলে বেশির ভাগ খোজা হয়েছে মোস্তাফিজুর রহমানকে।

ভারতের ছিটমহলে বাংলার স্বাধীনতার সূর্যোদয়ঃ ২০১৫ সালে ছিটমহলবাসী পেয়েছে নতুন পরিচয়। সেখানে উঠেছে স্বাধীনতার নতুন সূর্য। চলতি বছরের ২০ অক্টোবর বাংলাদেশের ইতিহাসে এক নতুন পালক যুক্ত হলো। রকারের বড় অর্জনের তালিকায় যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ-ভারত ল্যান্ড বাউন্ডারি চুক্তির বাস্তবায়নও ছিটমহল বিনিময়। দীর্ঘ ৬৮ বছর পর ছিটমহল বিনিময়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ ও ভারতের মূল ভূখণ্ডের অংশ হয়ে গেছে ছিটগুলো। এতে পূর্ণ নাগরিকের পর্যাদা পেল ৫০ হাজার মানুষ।সাফল্য পেলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকার।

আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে যুদ্ধপরাধীর বিচারঃ বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড সহ মানবতার বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপরাধের বিচার, বিডিআর বিদ্রোহের মামলার আপিল, চাঞ্চল্যকর রাজন-রাকিব হত্যা এবং ঐশীর মামলা ছিল এ বছর আলোচনার কেন্দ্রে। ৪জন যুদ্ধাপরাধী মুহাম্মদ কামারুজ্জামান,কাদের মোল্লা, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ এবং সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয়েছে।যুদ্ধাপরাধের ফাঁসির রায় কার্যকর নিয়ে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনা চরমে উঠেছে। মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটনের দায়ে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ৪জনের ফাঁসি কার্যকর হয়েছে।বাকিদের মামলা বিচারাধীন।
কূটনৈতিক ক্ষেত্রে অর্জনঃ২০১৫ সালে কূটনৈতিক ক্ষেত্রে এসেছে অর্জন ও চ্যালেঞ্জ। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তন রোধে বাংলাদেশের ভূমিকা ও নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের কার্যক্রম এ দেশকে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে নতুন মাত্রায় উন্নীত করেছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘের পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ সম্মান ‘চ্যাম্পিয়নস অব দ্য আর্থ’ পুরস্কার গ্রহণ করেছেন।বিদেশীদের সাহায্যে কয়লা বিদ্যুৎ প্রকল্প,গভীর সমুদ্র বন্দর,ভাসমান তেল কেন্দ্রসহ বড় বড় বাজেটের কাজ পেয়েছেন।

বিশ্বে মৎস্য উৎপাদনে বাংলাদেশ চতুর্থ স্থান করে নিয়েছে। সবজি উৎপাদনে সুনাম করেছে। অর্থনৈতিক মেরুদণ্ড আরও শক্ত হয়েছে দেশের। মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যুদ্ধাপরাধীদের মৃত্যুদণ্ড দেওয়ায় জাতির কলঙ্ক মোচন হয়েছে। যদিও সহিংসতায় অসংখ্য নিরীহ মানুষের মৃত্যু, আহতদের আর্তচিৎকার, ব্লগার হত্যা, জঙ্গিদের উত্থান, বিদেশি নাগরিক হত্যার মতো ঘটনায় বারবার হোঁচট খেতে হয়েছে সবাইকে। তবে বছর শেষে ২৩৪ পৌরসভায় সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে ভোট উৎসব হয়ে ওঠে ২০১৫ সালের আলোচিত ঘটনা।এ বছর ওয়াশিংটনভিত্তিক প্রভাবশালী ম্যাগাজিন ফরেন পলিসির একশ বিশিষ্ট দৃঢ়চিন্তার ব্যক্তিত্বের তালিকায় স্থান করে নেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জাতিসংঘ সম্মেলনে পরিবেশ বিষয়ক সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক পুরস্কার ‘চ্যাম্পিয়ন্স অব দি আর্থ’ ও বাংলাদেশে আইসিটির প্রসারে জাতিসংঘের ‘টেকসই উন্নয়ন পুরস্কার’ লাভ করেন প্রধানমন্ত্রী। মধ্যম আয়ের দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উত্থান আলোচিত হয়। বাংলাদেশ সফর করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।আইসিটি বিভাগে দেশ এগিয়েছে অনেকটা।

২০২৫সালের আগেই মধ্যম আয়ের স্বপ্নে দেশঃবিশ্বজুড়েই উন্নয়নের রোল মডেল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। আর্থসামাজিক উন্নয়নের বাংলাদেশের সাফল্য পেয়েছে বিশ্ব স্বীকৃতি। বাংলাদেশ হয়ে উঠেছে মধ্যম আয়ের দেশ।১ জুলাই ২০১৫ বাংলাদেশকে নিম্নআয়ের দেশ থেকে মধ্যম আয়ের দেশের তালিকায় উন্নীত করে আন্তর্জাতিক আর্থিক সংস্থা বিশ্বব্যাংক। বাংলাদেশ এখন পরিচিত হবে নিম্নমধ্যমআয়ের দেশ হিসেবে। স্বাধীনতার পর থেকে দীর্ঘ ৪৪ বছর ধরে বাংলাদেশ ছিল নিম্নআয়ের দেশের তালিকায়। প্রতিবছরের ১ জুলাই বিশ্বব্যাংক আনুষ্ঠানিকভাবে এ শ্রেণিকরণেরতালিকা প্রকাশ করে। বিশ্বব্যাংক ‘এটলাস মেথড’ নামের বিশেষ এক পদ্ধতিতে মাথাপিছু জাতীয় আয় পরিমাপ করে থাকে। এক্ষেত্রে একটি দেশের স্থানীয় মুদ্রার মোট জাতীয়আয়কে (GNI) মার্কিন ডলারে রূপান্তর করা হয় ক্ষেত্রে তিন বছরের গড় বিনিময় হারকে সমন্বয় করা হয়, যাতে করে আন্তর্জাতিক মূল্যস্ফীতি ও বিনিময় হারের ওঠানামা সমন্বিত হয়।

আলোচিত স্বপ্নের পদ্মা সেতুঃ নিজেদের অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ শুরু হয়েছে এ বছর। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬.১৫ কিমি। দ্বিতীয় তলায় (আপার ডেকে) ৭২ ফুটের চার লেনের সড়ক হবে দেখার মতো।
বিজ্ঞানে আবিষ্কার সোলার সাইকেল : বাংলাদেশে প্রথম তৈরি সোলার সাইকেল দিনাজপুর পলিটেকনিক্যাল ইনস্টিটিউটের তিন ছাত্র বিজয় মল্লিক, সাব্বির হোসেন ও শান্ত কুমার রায় তৈরি করেন পরিবেশবান্ধব এই সাইকেল। সূর্যের অলোতে চার্জ নেওয়া এ সাইকেল ১ ঘণ্টায় চলবে ২০/২৫ কিলোমিটার। পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) সহকারী অধ্যাপক মো. শামীম মিয়া উদ্ভাবন করেন বায়োচার চুল্লি। বায়োচার এক ধরনের চার বা কয়লা, যা মাটির উর্বরতা শক্তি বৃদ্ধি করে, রাসায়নিক সারের কার্যকারিতা বাড়ায়, মাটিতে এবং মাটির অম্লত্ব দূর করে।

ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনেঃ সরকারের সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে গত সাড়ে ছয় বছরে দেশে তথ্যপ্রযুক্তি উন্নয়নের ক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী বিপ্লব ঘটেছে। দেশে ইন্টারনেট ব্যবহার বেড়েছে গাণিতিক হারে। প্রযুক্তি বিজ্ঞানীদের মতে, ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়, বাস্তবতা। বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশন রেগুলেটরি কমিশন (বিটিআরসি) সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে দেশে ইন্টারনেট গ্রাহক সংখ্যা ৫ কোটি ৪৯ লাখ ৫৯ হাজার জন। দেশের ৯৯ ভাগ এলাকা মোবাইল নেটওয়ার্কের আওতায় এসেছে। দেশে থ্রি-জি প্রযুক্তির মোবাইল নেটওয়ার্ক চালু করা হয়েছে। আমাদের অর্থনীতির এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হয়ে গেছে ইন্টারনেট।

গুগল স্ট্রিটে বাংলাদেশঃ গুগল ম্যাপ ও গুগল আর্থের একটি বাড়তি সেবা হলো গুগল স্ট্রিট ভিউ, যা বিশ্বের বিভিন্ন স্থানের রাস্তাসহ নানা ঐতিহাসিক স্থাপনার ছবি প্রদর্শন করে। খানে যোগ হয়েছে বাংলাদেশ। গুগল স্ট্রিট ভিউয়ে বাংলাদেশের সংযুক্তি প্রশংসনীয়। এ স্ট্রিট ভিউ ব্যবহারকারীকে তার নিকটবর্তী এলাকার প্যানোরামিক একটি চিত্র তুলে ধরার মাধ্যমে সহজেই কোনো জায়গার দিকনির্দেশনা পেতে সাহায্য করে। যবহারকারীর কাঙ্ক্ষিত জায়গাটি নিজের চোখে দেখার সুযোগ মেলে। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ বাংলাদেশ সরকারের অনুমোদনে গুগল ঢাকা এবং চট্টগ্রামজুড়ে স্ট্রিট ভিউ গাড়িতে তাদের কার্যক্রম শুরু করে।

নারীর সাফল্যের বছরঃ সেনাবাহিনীতে নারী সৈনিক, বিমানবাহিনীতে নারী বৈমানিক, বর্ডারগার্ড বাংলাদেশের সীমান্ত প্রহরায় নারী, সাত চূড়ায় ওয়াসফিয়া প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সাত মহাদেশের সাতটি সর্বোচ্চ শৃঙ্গ জয় করেছেন ওয়াসফিয়া নাজরীন। চার বছর আগে ‘বাংলাদেশ অন সেভেন সামিট’ নামে অভিযান শুরু করেছিলেন তিনি।

অমোঘ নিষ্ঠুর নিয়মে যাদের হারালাম:: ২০১৫ সালে আমরা হারিয়েছি বেশ কয়েকজন প্রিয় ব্যক্তিত্বকে। তাদের মধ্যে রয়েছেন_ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অন্যতম রূপকার ভাস্কর নভেরা আহমেদ, কবি গোবিন্দ হালদার, সাবেক স্পিকার শেখ রাজ্জাক আলী, সাবেক প্রধানমন্ত্রী কাজী জাফর আহমদ, প্রবীণ সাংবাদিক হাসানউজ্জামান খান, প্রখ্যাত সাংবাদিক সিরাজুর রহমান,সঙ্গীতশিল্পী ফরিদা ইয়াসমিন, সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এএমএস কিবরিয়ার স্ত্রী চিত্রশিল্পী আসমা কিবরিয়া, সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী সৈয়দ মহসিন আলী, চলচ্চিত্র নির্মাতা চাষী নজরুল ইসলাম প্রমুখ।
২০১৬সালের নতুন সুর্যঃ ২০১৬ সালকে দেখতে চাই ভিন্ন আঙ্গিকে। হিংসা-প্রতিহিংসার ঊর্ধ্বে উঠে রাজনীতিকরা পরমতসহিষ্ণু হয়ে প্রতিপক্ষের সঙ্গে পারস্পরিক শ্রদ্ধার আবহ তৈরি করে জনকল্যাণে সবাই একসঙ্গে মনোযোগী হবেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে থাকবে। আইন হয়ে উঠবে সব কিছুর নিয়ামক। নিশ্চিত হবে শাসকদের জবাবদিহিতা।

নতুন বছরে বই উৎসব হবে, শিক্ষার্থীদের হাতে হাতে নতুন বই পৌঁছবে, নিঃসন্দেহে জাতির জন্য খুবই আনন্দের। প্রতিবারের মতো এবারো বছরের প্রথমদিনেই শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই তুলে দেয়ার সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। এরই মধ্যে দেশের প্রান্তিক পর্যায়ে বই পৌঁছে গেছে বলে জানিয়েছে এনসিটিবি। নতুন বই বিতরণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। বিনা মূল্যের বই বিতরণে বাংলাদেশ এখন রোল মডেল। সারা বিশ্ব যা কখনো ভাবতেও পারেনি, বাংলাদেশ তা করে দেখিয়েছে। সাত বছর ধরে একই দৃষ্টান্ত দেখিয়ে চলেছে বাংলাদেশ। এ বছর প্রাক প্রাথমিক থেকে নবম শ্রেণি পর্যন্ত সাড়ে চার কোটি শিক্ষার্থী বিনা মূল্যে পাবে প্রায় ৩৩ কোটি বই। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুরাও পাবে ব্রেইল পদ্ধতির বই। বছরের প্রথম কর্মদিবসেই প্রাথমিক ও মাধ্যমিকের সব শিশু হাতে পাবে এসব নতুন বই। ফলে নতুন উদ্যম আর আগ্রহে শিশুরা শুরু করবে নতুন বছরের পড়ালেখা।শিশুদের এই আনন্দের মধ্যদিয়ে নতুন বছর সকলের জন্য শুভ হয়ে উঠুক।
আমরা এমন একটা বাংলাদেশ চাই,যে বাংলার স্বপ্ন দেখেছিলো স্বাধীনতার মহানায়ক মুজিব,গনতন্ত্রের জনক হোসেন শহীদ সোরওয়ার্দী,আমরা চাই বাংলার মাঠে প্রতিহিংসা ছাড়া রাজনীতি,সততা পুর্ন রাজনীতিবিদ,শান্তি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ,যেখানে অভুক্ত অবস্থায় ফুটপাতে ঘুমাবেনা ৩০লাখ শিশু,বেকার মুক্ত তরুন্য ভরা নতুন এক পৃথিবী।যে পৃথিবীতে নির্মম নির্যাতনে মারা যাবেনা বিনা বিচারে কোন মানব।বাংলার পুলিশ হবে লন্ডন পুলিশের মতো,যে পুলিশ দুর্নীতি করেনা।হাসপাতাল হবে বিনা পয়সায় চিকিৎসা সেবাস্থল,যেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র দেখালে চিকিৎসা পাবে ফ্রি,সড়ক হবে যানজট মুক্ত,বিচারক ও আদালত হবে জনগনের আস্থা সমৃদ্ধ ভরসাস্থল।যেখানে ন্যায়,সত্য,প্রমান পাবে যোগ্য মর্যাদা।দেশের রাষ্টনায়ক হবে নবী সাঃ এর আদর্শে বিশ্বাসী।

জামাল জাহেদ লেখক ও সাংবাদিক কক্সবাজার।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.