কক্সবাজার স্কুলগুলোতে অতিরিক্ত ফি ও বই বানিজ্যে চলছে

0

জামাল জাহেদ , কক্সবাজার  :  কক্সবাজারে গজিয়ে ওঠা অহরহ বেসরকারী স্কুলে অতিরিক্ত ফি আদায়,বই বানিজ্যে দিশেহারা নিম্নে আয়ের মানুষ। বেসরকারি এসব স্কুলগুলোতে চলছে সিন্ডিকেট করে ভর্তি বানিজ্য। প্রায় সব প্রতিষ্ঠানেই আদায় করা হচ্ছে শিক্ষাবোর্ড নির্ধারিত ফির তিনগুনের চেয়ে বেশি টাকা। বই ও পোশাক কেনায়ও সমান তালে চলছে কমিশন বাণিজ্য। তাতে জড়িত রয়েছে অসাধু চিহ্নিত কিছু শিক্ষক। যাদের কারণে বেসরকারি স্কুলে পড়ানো শিক্ষার্থীদের অভিভাবকেরা পড়েছেন বিড়ম্বনায়। এ থেকে উত্তোরণ চায় এ সকল অভিভাবক। এ বিষয়ে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন ভুক্তভোগীরা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কক্সবাজার শহরে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা এক ডজনের বেশি নয়। কিন্তু বেসরকারি স্কুলের সংখ্যা অর্ধ শতের বেশি। শহরের প্রায় প্রতিটি পাড়া-মহল্লায় ভাড়া ঘরের উপর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে গড়ে তোলা হয়েছে এসব বেসরকারি স্কুল। এসব স্কুলে একদিকে চলছে ভর্তি বাণিজ্য, অন্যদিকে বই নিয়ে বাণিজ্যও। ভর্তি বাণিজ্য আবার একেক স্কুলে একেক ধরনের।

শহরের বায়তুশ শরফ জব্বারিয়া একাডেমীতে ষষ্ট শ্রেণীতে ভর্তির জন্য ফি নেয়া হয় সাড়ে ৪ হাজার টাকা। পৌর প্রি-প্যারাটরি স্কুলে নেয়া হয় প্রায় ১ হাজার ৮শ টাকা। অথচ সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ভর্তি ফি মাত্র ১৩২০ টাকা। কিন্তু সরকারি নিয়ম নীতি উপেক্ষা করে কক্সবাজার কেজি এন্ড মডেল হাইস্কুলে ৬ষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তির ফি নেয়া হচ্ছে ৪২০০ টাকা। আবার এই স্কুলে প্রাথমিকে ভর্তির জন্য ফি নেয়া হচ্ছে অন্তত ১ হাজার ৭শ টাকা।

একই হারে ভর্তি ফি নেয়া হচ্ছে কলাতলীস্থ সৈকত কিন্ডার গার্টেন, কক্সবাজার ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। আবার সানি বীচ ও ল্যাবরেটরি স্কুলে ভর্তি ফি আরো বেশি। আর উচ্চহারের ফি এর চাপে বেকায়দায় রয়েছে শ্রমজীবী ও সীমিত আয়ের অভিভাবকেরা।

এই তো গেল ভর্তি বাণিজ্য নিয়ে কথা। তার উপর ‘মড়ার উপর খাড়ার ঘা’র মত শিশুদের চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে পাঠ্যসূচীর বাইরের ঐচ্ছিক বই। কিন্তু কোমলমতি শিশুদের এসব ঐচ্ছিক বই নিয়েও চলছে স্কুলগুলোর গলাকাটা বাণিজ্য। মাত্র একটি ২০ পৃষ্ঠার বইয়ের দাম ধরা হচ্ছে ১২০ টাকা। অথচ প্রকাশকদের কাছ থেকে বই দোকানিরা এসব বই কেনে মাত্র ৩০টাকায়। লাভের অংশগুলো ভাগ বাটোয়ারা করে স্কুল কর্তৃপক্ষ ও বই দোকানের মালিকেরা। আবার লাভের হার প্রতিবছরই বাড়ানো হচ্ছে। কলাতলীস্থ সৈকত কিন্ডার গার্টেন স্কুল গত বছর তাদের নির্ধারিত ঐচ্ছিক বই বিক্রির জন্য শহরের রক্ষিত মার্কেটস্থ বিদ্যাসাগর লাইব্রেরীর সাথে ১ লাখ ২০ হাজার টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছিল। এবছর তারা শহরের পান বাজার সড়কের আরেকটি লাইব্রেরীর সাথে দেড়লাখ টাকায় চুক্তিবদ্ধ হয়েছে বলে জানা গেছে। একই চিত্র শহরের অন্যান্য বেসরকারি স্কুলগুলোর ক্ষেত্রেও।

শুধু তাই নয়, স্কুলের নির্ধারিত পোষাক বা ইউনিফর্ম নিয়েও চলছে ভয়াবহ বাণিজ্য। টেইলার্স বা দর্জির দোকানের সাথে চুক্তি করে সেখান থেকেও হাতিয়ে নেয়া হচ্ছে মোটা অংকের অর্থ। এভাবে বেসরকারি স্কুলগুলোর চরম বাণিজ্যিক মনোবৃত্তির নীচে চাপা পড়ে যাচ্ছে শিক্ষাদানের এ মহান পেশাটি।
এ বিষয়ে শহরের কলাতলী এলাকার অভিভাবক মস্তুরা আকতার বলেন, ‘অপর্যাপ্ত সরকারি স্কুল ও বিভিন্ন স্কুলে আসন না থাকা এবং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সমূহে মান সম্পন্ন শিক্ষা না থাকায় অভিভাবকেরা বাধ্য হয়ে কেজি স্কুলসহ বেসরকারি স্কুলগুলোর দিকে ঝুঁকছে। আর এর সুযোগ নিচ্ছে স্কুল কর্তৃপক্ষ।

কক্সবাজার সিভিল সোসাইটির সভাপতি আবু মোরশেদ চৌধুরী খোকা বলেন, শিক্ষায় বাণিজ্যিকিকরণ উচিত নয়। বেসরকারি স্কুলগুলোর ফি আদায়ের বিষয়টি তদারকি করা দরকার। অন্যথায় অনেক অসচ্ছল পরিবারের সন্তান পড়া লেখা থেকে বঞ্চিত হয়ে পড়বে। কক্সবাজার সরকারি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ প্রফেসর এম এ বারী স্কুলগুলোর বাণিজ্যিক মনোবৃত্তি শোভন নয় মন্তব্য করে অবিলম্বে তা বন্ধ করার দাবি জানান।

এ বিষয়ে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) আনোয়ারুল নাসের বলেন- নীতিমালার বাইরে অতিরিক্ত ফি নেয়া অবৈধ। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ বিভাগের আরও খবর

আপনার মতামত লিখুন :

Your email address will not be published.